মঙ্গলবার, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ঘরে-বাইরে সংকটে জাপা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) এখন ঘরে-বাইরে সংকট। গত চার মেয়াদের শাসনামলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানাভাবে সমীকরণে ভোট করায় সে দলটির মতো জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জোরদার হচ্ছে। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা।

পাশাপাশি জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতাও এখন চরমে। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে ইতোমধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করে নতুন নেতৃত্বের সৃষ্টি করে নির্বাচন কমিশনে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার অপেক্ষায় তারা। এ ছাড়া এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার জন্য লড়াই করছেন।

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বাড়ছে চাপ : গত ২৯ আগস্ট রাজধানী ঢাকায় গণঅধিকার পরিষদ এবং জাতীয় পার্টির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হামলায় দলটির সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। সেদিন রাতেই ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর এমনকি আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। শনিবার এক প্রতিবাদ সমাবেশে জাতীয় পার্টিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ করা, নুরের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা এবং হামলার ঘটনার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের দাবি তুলে গণঅধিকার পরিষদ। জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেন, যেহেতু ‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, তাই জাতীয় পার্টির ভিতর দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। জাতীয় পার্টি হচ্ছে চিহ্নিত ফ্যাসিবাদী দল। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জাতীয় পার্টি ‘নিষিদ্ধের আইনগত দিক খতিয়ে দেখার’ কথা বলেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নিয়ে সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যিনি শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচনের আগে ভারত থেকে ফিরে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা যাবে না’। সেই ব্যক্তি বাংলাদেশে রাজনীতি কীভাবে করেন। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে এনসিপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়ে সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিকে অযৌক্তিক। তিনি বলেন, আরপিও অনুযায়ী যেসব কাজ করলে একটি দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে, এমন কোনো কাজ জাতীয় পার্টি কখনোই করেনি। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগও নেই। তাই নিষিদ্ধের দাবিতে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত নন। তিনি আশা করেন, সরকার ভ্রান্ত দাবিতে ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে না।

লাঙ্গল প্রতীক পেতে লড়াইয়ে চার গ্রুপ : নির্বাচন কমিশনে ওয়েবসাইটে গতকাল পর্যন্ত দেখা গেছে পার্টির চেয়ারম্যান হিসাবে জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নাম। বর্তমানে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। আর মুজিবুল হক চুন্নু আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ নিবন্ধন ধরে রাখা আর আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন অংশ নিবন্ধন লাভের চেষ্টায় লড়াই করে চলেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় পার্টি নিজের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণেও বড় ধরনের চাপে রয়েছে। দলটি থেকে বহিষ্কৃত নেতারা নতুন আরেকটি জাতীয় পার্টি করায় এই চাপ আরও বেড়েছে।

জুলাই মাসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবং দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলারকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। মহাসচিব করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। আগস্টে বহিষ্কৃতরা কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন কমিটি করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। তারা মূল জাতীয় পার্টি হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। সেজন্য তারা নির্বাচন কমিশনে আবেদনও করেছে।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জ্বালাও-পোড়াও সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। এটি কাম্য নয়। নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, আশা করছি, নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুতই আমাদের নামে দলের নিবন্ধন দেবে। তিনি বলেন, আমরা ছাড়া আর কোনো জাতীয় পার্টি নেই। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, সরকারকেও বলেছি। আমরা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে দ্রুতই কাকরাইল অফিসে যাব।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com