সোমবার, ১০:৫৫ অপরাহ্ন, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

পণ্যমূল্য আরও বাড়বে খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২
  • ৮৩ বার পঠিত

প্রকৃতির বিরূপ আচরণের কারণে এমনিতেই বিপাকে রয়েছেন কৃষক। চলতি বছর দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ আবাদ। নষ্ট হয়ে গেছে রোপা আমনের বীজতলাও। এদিকে ভরা বর্ষা মৌসুমেও নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি। অনাবৃষ্টিতে সৃষ্ট খরার কারণে পিছিয়ে গেছে রোপা আমনের চাষ। এমন অবস্থায় কৃষক সেচ দিয়ে আমন ক্ষেত প্রস্তুত করছেন। সেখানে আবার বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ডিজেল। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে কৃষি উপকরণ, বীজ ও বালাইনাশক। শ্রমিকের বাড়তি মজুরি তো রয়েছেই। এসব কারণে এমনিতেই

ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে বহুগুণ। এর ওপর নতুন যোগ হয়েছে ইউরিয়া সারের বাড়তি দামের বোঝা। এ অবস্থায় চালসহ কৃষিপণ্যের এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কৃষকরা বলছেন, ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা জমির আবাদ কমানোর কথা ভাবছেন। ফলে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন কমে যাবে।

advertisement

ইউরিয়া সারের কেজিতে ৬ টাকা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক। সারের সুষম ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। এটি কমাতে ডিএপি সারের কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে ডিএপির ব্যবহার বাড়লেও ইউরিয়ার ব্যবহার কমেনি। এখন দাম বৃদ্ধির ফলে ইউরিয়ার ব্যবহার কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নাটোরের সিংড়ার কৃষক নাজিম উদ্দিন বলেন, এমনিতেই আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাহিল। এর ওপর সব রকমের কৃষি উপকরণের বাড়তি দাম, শ্রমিকের বাড়তি মজুরি। এখন ইউরিয়ার দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা বেড়েছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আমরা আর কৃষিকাজে টিকে থাকতে পারব না। জামালপুরের ইসলামপুরের কৃষক সাদেক আলী বলেন, কৃষকের আর বাঁচন নাই। আমরা টিভিতে সব সময় দেখতাম কৃষিমন্ত্রী বলছে, সরকার সারের দাম বাড়াবে না। এখন তা হলে দাম বাড়ল কেন? আমরা কি করে জমিজমা চাষ করব? কোনো উপায় দেখছি না!

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে কৃষি সরঞ্জাম ও উপকরণে বরাবরই ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। এক যুগে সেই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েছে অনেক। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বারবার ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও সরকার তাতে সাড়া দেয় না। তারা আরও বলেন, এই সার দিয়েই শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু হয়েছিল। দাম বাড়ায় তারা রাসায়নিক সার থেকে সরে গিয়ে জৈবসারের ব্যবহার বাড়িয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ জৈবসারে ফিরে যাওয়ায় উৎপাদনে ধস নামে। এর সঙ্গে পর্যটন খাতের ধস যোগ হওয়ার পর দেশটিতে বিপর্যয় দেখা দেয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সারে ভর্তুকি ছিল ৪৮৮৫.৯৬ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৪৭২.৯৫ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৭১৬.২৮ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৪২০.৫৫ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৪৯৪১.৬০ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৭১ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে হয় ৮১ টাকা। ফলে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে প্রতি কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

এদিকে, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন খাতে ব্যয় সঙ্কোচন করে চলেছে সরকার। এর মধ্যেই ইউরিয়া সারের দামও বাড়ানো হলো। এই হারে দাম বৃদ্ধির ফলে বছরে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সারের ব্যবহার বিবেচনায় ভর্তুকি থেকে ১৫৬০ কোটি টাকা বাঁচাতে পারবে সরকার।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুলাই-সেপ্টেম্বর মৌসুমে ইউরিয়া প্রয়োজন হয় ৬ লাখ ৭ হাজার টন। বর্তমান মজুদ ৭ লাখ ২৭ হাজার টন। বছরে দেশে ইউরিয়া উৎপাদন হয় প্রায় ১০ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করা হয়। এদিকে, গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় দেশের কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা বন্ধ রয়েছে। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন কম হবে। এই ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে সার আমদানি করতে হবে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ইউরিয়ার যে মজুদ আছে এবং যা পাইপলাইনে রয়েছে, তা দিয়ে আগামী ইরি মৌসুম পর্যন্ত চলবে।

ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে খাদ্যনিরাপত্তা নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের (খানি) সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধিতে সরাসরি কৃষি ও কৃষকের ওপর প্রভাব পড়বে। এতে বাড়বে উৎপাদন খরচ। বেশির ভাগ কৃষকই দেখা যাবে বেশি দামে সার কিনতে পারছেন না। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে প্রান্তিক কৃষকের ওপর।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, সারের দাম বাড়ানোর ফলে উৎপাদন কমে যাবে। খাদ্যনিরাপত্তা বিঘিœত হবে। এ বছর ১০-১৫ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। আগামীতে আমদানি আরও বাড়বে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে খাদ্যশস্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে, সেখানে আমদানিও অনেকটা অনিশ্চিত। কাজেই চাল আমদানিতে নির্ভরশীল না হয়ে উপকরণের দাম কমিয়ে রেখে উৎপাদন বাড়ানোই হলো যুক্তিযুক্ত কাজ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com