কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় তদারকির আওতায় আসছে দুর্বল ১০ ব্যাংক। পর্যাপ্ত জামানত না রাখা, দুর্বল জামানত, অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ, খেলাপি ঋণের আধিক্য, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি এমন ব্যাংকগুলোকে তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক এবং একটি বিদেশী ব্যাংকের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংককে নিয়ম মেনে ব্যাংকিং করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, অন্যথায় পর্ষদ ভেঙে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম গতকাল বুধবার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পরপরই সমস্যাকবলিত ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের নিবিড় তদারকির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ মোতাবেক অধিক সমস্যা কবলিত ১০টি ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি ব্যাংকের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। আরো ৮টি ব্যাংকের সাথে আলোচনা করা হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের কাছ থেকে কর্মসূচি নেয়া হবে। সে অনুযায়ী তাদের সাথে চুক্তি করা হবে। ওই চুক্তি মোতাবেক ব্যাংকিং পরিচালনা করা হচ্ছে কি না তা নিবিড় তদারকি করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ও তাদের দেয়া কর্মসূচি পরিপালনে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কিছু কিছু ব্যাংকে অনিয়মের পাহাড় জমে গেছে। নামে বেনামে নিজেদের মধ্যে ঋণ দেয়া হচ্ছে। আবার এসব ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ জামানত নেয়ার কথা তা নেয়া হয়নি। যে পরিমাণ জামানত নেয়া হয়েছে তার গুণগত মান খুবই দুর্বল। যেমন সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক ঘটনায় বন্ধকী সম্পদ হিসেবে যে পরিমাণ জমি দেখানো হয়েছিল তার বড় একটি অংশই ছিল সরকারি খাস জমি, ডোবা-নালা। অনেক ঋণই অনিয়মের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। আবার এসব ঋণ বছরের পর বছর পরিশোধ করা হচ্ছে না। ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে ঋণ পরিশোধ দেখানো হচ্ছে। এভাবে খেলাপি ঋণ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্প্রতি এক পরিদর্শনে এমন একটি নতুন প্রজন্মের ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির তথ্য উঠে এসেছে। নতুন প্রজন্মের অপর একটি ব্যাংক গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি নাম পরিবর্তন করে নতুন নামে কার্যক্রম চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দুইটি ব্যাংকের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। একটি বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল)। অপরটি বিদেশী ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। ব্যাংক দুইটির খেলাপি ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে বলে ওই সূত্র জানায়।
ন্যাশনাল ব্যাংকের সাথে পর্যালোচনার বিষয়ে সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান, চারজন পরিচালক ও এমডির সাথে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকটির ঋণ দেয়ার ক্ষমতা কমিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৮ জুলাই এনবিএলের এমডিকে চিঠি দেয়। চিঠিতে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা মূল্যায়নের জন্য ২৪ জুলাই এক পর্যালোচনা সভায় যোগ দিতে বলা হয়। ওই সভায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান, এমডি ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাকে (সিএফও) উপস্থিত থাকতে বলা হয়। ২৪ জুলাই ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পারভীন হক সিকদার, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক খলিলুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন এবং এমডি মেহমুদ হোসেন যোগ দেন। পরদিন ২৫ জুলাই বেলা ১১টায় ব্যাংকটির পরিচালক রন হক সিকদার ও এমডি মেহমুদ হোসেন গভর্নরের সাথে সভা করেন।
সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে নিয়মের মধ্য থেকে ব্যাংকিং করার নির্দেশ দেয়া হয়, অন্যথায় পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চিহ্নিত ব্যাংকগুলোর সাথে আলোচনা করে সমস্যা উত্তরণে তাদের কাছ থেকে রোডম্যাপ নেয়া হবে। রোডম্যাপ অনুযায়ী ব্যাংক পরিচালনার জন্য ব্যাংকগুলোর সাথে চুক্তি করা হবে। ওই চুক্তি পরিপালন ও অগ্রগতি নিয়ে তিন মাস পর পর ব্যাংকগুলোর সাথে বৈঠক করা হবে।