শুক্রবার, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

জাল-জালিয়াতির অভিযোগ : আদালতে খায়রুল হক বললেন ‘ইট’স নট ট্রু’

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫
  • ১২ বার পঠিত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিলের রায় প্রদানে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ আদালতে অস্বীকার করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেছেন ‘ইট’স নট ট্রু’।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে কারাগার থেকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ। এদিন আদালতে তাকে নিরাপদে ওঠানো নামানোর জন্য সেনাবাহনী উপস্থিত ছিল।

আদালতে ওঠানো ও নামানোর সময় তার মাথায় হেলমেট, দুই হাতে হাতকড়া ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরানো দেখা যায়। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে আদালতে এজলাসে তোলা হয়। শাহবাগ থানার এ মামলায় ১০ মিনিট পর আদালতে শুনানি শুরু হয়।

‎‎মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক খালেক মিয়া ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

‎রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হলেও পরবর্তী দুটি নির্বাচন অর্থাৎ দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারপতিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না মর্মে সংবিধান সংশোধনের জন্য মত প্রদান করেন। এই সংক্ষিপ্ত আদেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেওয়া করা হয়।

আসামি বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের পক্ষে বিচারপতি মোহা. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মত প্রদান করলেও বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি ইমান আলী আসামির রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন অর্থাৎ সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী অবৈধ মর্মে ঘোষণার বিরুদ্ধে মতামত পোষণ করেন।

‎‎২০১১ সালের ৫ মে এই সংক্ষিপ্ত আদেশের প্রায় ১৬ মাস পরে আসামি এ বি এম খাইরুল হক ইচ্ছাকৃতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতিমূলক ও বিদ্ধেষাত্মকভাবে এই সংক্ষিপ্ত আদেশ উপেক্ষা করে আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখেন এবং বিচারপতি মোহা. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এই দুর্নীতিমূলক ও বিদ্ধেষাত্মকভাবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের সঙ্গে সম্মত হয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করে রায় প্রকাশ করেন। বিচারক হিসেবে লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্নীতিমূলক ও বিদ্বেষাত্বক এবং বে-আইনিভাবে রায় প্রদান করাসহ অসত্য ও জাল জালিয়াতি সৃষ্টি করেছেন।

‎‎আরও বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনায় আসামি এবিএম খায়রুল হক সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে পুলিশ হেফাজতে আনিয়া ব্যাপক জিজ্ঞাবাসাবাদ করলে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিষয়ে এবং মামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য ব্যাক্তিদের বিষয়ে তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তাই আসামি ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা প্রয়োজন।

‎শুনানিতে ‎মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ওনার রায়ের কারণে তিনটি প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। এ রায় কেন দিয়েছেন? কার হুকুমে দিয়েছেন? কারা জড়িত এ সকল বিষয়ে জানার প্রয়োজনে রিমান্ড মঞ্জুর করা দরকার।

‎তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার শুনানিতে বলেন, রিটায়ার্ডে যাওয়ার ১৬ মাস পর উনি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। ক্ষমতাচ্যুত ‎শেখ হাসিনা সরকারকে স্বৈরাচার বানানোর জন্য উনিই জাল-জালিয়াতি করে এ রায় দিয়েছেন। এ বক্তব্যর পর কাঠগড়ায় থাকা খায়রুল হক বলেন, ইট’স নট ট্রু”।

‎‎এরপর রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, তের দশ সংশোধনীর বিষয়। সুপ্রিম কোর্টে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এ বিতর্কিত রায় দেন। এ ঘটনায় পেনাল কোডের ২১৯ ও ২৬৪ এ মামলায় হয়েছে। এ মামলায় তার ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ‎এ রায়ের পর বাংলাদেশে একটি ফ্যাসিস্টের পথ উম্মুক্ত হয়েছে। শেখ মুজিবুর যা করেছেন, তার চেয়েও তিনি আরও বেশি করেছে।

‎‎বাংলাদেশের একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দলকে উনি নিশ্চিহ্ন করেছেন। উনাকে রিমান্ডে নিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ হাসিনার দোসর কোন কোন প্রধান বিচারপতি। তারা কী কী নীল নকশা করেছে, বহিঃবিশ্বের কে কে এতে জড়িত ছিল সেটাও জানা যাবে। সেজন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

শুনানিকালে খায়রুল হকের পক্ষের কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

‎‎গত ২৪ জুলাই সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যাত্রাবাড়ী থানার কিশোর আব্দুল কাইয়ূম আহাদ হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন একই আদালত।

‎‎২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এবিএম খায়রুল হকসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com