অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট সামাল দিতে ব্যর্থতার অভিযোগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। রাজধানী কুয়ালালামপুরে শনিবার এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এতে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন অংশ নিয়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকেই কুয়ালালামপুরের জাতীয় মসজিদ নেগারার সামনে কালো টি-শার্ট পরা হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হতে থাকেন। এ সময় ‘পদত্যাগ, পদত্যাগ, আনোয়ার পদত্যাগ’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা ‘জাগো, জাগো, জনগণ জাগো’ স্লোগান দিতে দিতে রাজধানীর ঐতিহাসিক স্বাধীনতা স্কয়ারের দিকে রওনা হন। সেখানে গিয়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, আনোয়ার ইব্রাহীম সরকারের সময় দেশে অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির দাম ও বিদ্যুৎ খরচ বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
আনোয়ার ইব্রাহীম ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার প্রায় তিন বছরের শাসনামলে দেশটিতে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত সপ্তাহে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেসঙ্গে জ্বালানির দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা জনরোষ কমাতে পারেনি।
শনিবারের এই বিক্ষোভের আয়োজন করে দেশটির প্রধান বিরোধীদলীয় জোট পেরিকাতান ন্যাশনাল (পিএন)। রাজধানী ছাড়াও ক্ল্যাং ভ্যালির বাইরের অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষকে বাসযোগে এনে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ছোট ছোট বিরোধী দল ও মালয়ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
বিক্ষোভের মূল বক্তাদের মধ্যে ছিলেন দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী- মাহাথির মোহাম্মদ ও মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। মুহিউদ্দিন পেরিকাতান ন্যাশনালের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী দল পার্টি ইসলাম মালয়েশিয়া (পিএএস)-এর প্রেসিডেন্ট আব্দুল হাদি আওয়াং।
সমাবেশে বক্তারা যেসব বিষয় তুলে ধরেন, তার মধ্যে রয়েছে- জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, চলতি বছরের জুলাই থেকে বিক্রয় ও সেবা করের (এসএসটি) পরিধি বাড়ানো, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানি ভর্তুকি হ্রাস।
সব মিলিয়ে আনোয়ার সরকারের নীতিনির্ধারণ ও ব্যর্থতা ঘিরে জনমনে অসন্তোষ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলনের ধরন আরও কঠোর হবে।