প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিদ্যুৎ খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় তিনি এ দাবি জানান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের গল্প ছয় মাস আগেও শুনেছি। প্রয়োজন আমাদের ১১ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এখন ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতও নেই। এখন বিদ্যুৎ যায় না, বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে দেখা করতে আসে। বিদ্যুৎ বলে আমরা এখনও জীবিত আছি, মরিনি। এই হলো বিদ্যুতের অবস্থা। হারিকেন, তা-ও বুঝি খুঁজে পাওয়া যায় না। এই সরকারের উন্নতি, ঘরে ঘরে মোমবাতি।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কিছুদিন আগে বলেছিলাম, এই সরকার জনগণের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুৎ নাই, কিন্তু আমাদের টাকা গেল কই? বিদ্যুতের জন্য যত টাকা ঋণ করেছেন, সেই টাকা তো আমাকে অর্থাৎ জনগণকে পরিশোধ করতে হবে। কেন আমরা এই ঋণ পরিশোধ করব। দ্রুত চাহিদা মেটানোর জন্য কাকে কাকে কুইক রেন্টাল প্রজেক্ট দিয়েছেন তাদের নাম মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফাইলবন্দি আছে। এই কোম্পানিগুলো কী পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছে, কী পরিমান জ্বালানি ফুয়েল দেওয়া হয়েছে এবং কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে যে প্রতিবেদন সরকারকে দিয়েছে তার হিসাবটা দেন।’
তিনি বলেন, ‘যে বিদ্যুৎ তারা দিয়েছে, তার মূল্য কত, তাদের কাছে পাওনা কত? এই বিদ্যুতের নামে বিদ্রূপ করে জনগণের টাকা লুটপাট করেছেন, তার পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই টাকা তো নতুন করে ছাপিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়নি। কোনো না কোনো প্রজেক্ট থেকে হাতিয়ে নিয়ে এই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই টাকার হিসাব জনগণের নেওয়ার অধিকার রয়েছে।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘মিডনাইট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার বাড়ি ঘেরাও করতে গেলে চা দিয়ে আমন্ত্রণ করবেন। আপনার বাড়ি ঘেরাও করতে হলে যত লোক যাবে, সেই লোকের চা খাওয়ানোর মতো পানি মজুদ আছে? নাই। আপনার চায়ের দাওয়াতে হয়তো যাবে না, যদি দেশের জনগণ গণভবন ঘেরাও করতে যান, জিনিসপত্র গুছিয়ে গাড়িতে তুলে দিয়ে আপনাকে বিদায় জানাতে যেতে পারে। হয়তো আপনি মনের অজান্তে কথাটা চা খাওয়ার কথাটা বলছেন।’
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে টুস করে পানিতে ফেলে দেওয়া এটা একান্তই হিউমার। অর্থাৎ শেখ হাসিনা ঠাট্টাও জানে। ঠাট্টা খালেদা জিয়ার সাথে করেন কিন্তু জাতির সামনে যে ঠাট্টা ১৪ বছর যাবৎ করছেন, এটার হিসাব জনগণ একদিন নিতেই পারে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘শুনতে পাচ্ছি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য সপ্তাহে তিন দিন স্কুল কলেজ বন্ধ রাখবে, জেনারেটর চলতে পারবে না, ডিজেটেল খুচরা বাজারে দেবেন না, তাহলে মানুষ কী করে বাঁচবে? শিল্প কলকারখানা কীভাবে চলবে? কৃষি, পোশাকখাতসহ সামগ্রীক উৎপাদনে কী পরিমাণ ঘাটতি হবে? সেই ঘাটতি পূরণ করে বিদেশি বাজার ধরে রাখা কঠিন হবে। তাহলে দেশ কীভাবে চলবে?’
গয়েশ্বর বলেন, ‘মুদ্রা পাচারের মধ্য দিয়ে ব্যাংক শেষ। রিজার্ভের কথা শোনা যায়, অবস্থা এমন হয়তো দুই-তিন মাস পরে দেশের আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারবে না। ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি, খোলাবাজার থেকে যদি ডলার কিনে পণ্য আমদানি করতে হয় তাহলেও ২০ শতাংশ এ কারণেই বেড়ে যাবে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ইয়াছিন আলী প্রমুখ।