সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও বন্যায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিলেন টাইগাররা। রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজের ১-০ তে লিড নিয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংসে ৩০ রানের টার্গেট নাজমুল হোসেন শান্তর দল পাড়ি দিয়েছে ৬.৩ ওভারেই। তাতে বাংলাদেশ গড়ল ইতিহাস। প্রথমবারের মত পাকিস্তানকে টেস্ট ক্রিকেটে হারানোর স্বাদ পেল লাল-সবুজ শিবির।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে ১৩ টেস্টের মধ্যে ১২ বারই হেরেছিল বাংলাদেশ। সেরা সাফল্য ছিল ড্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে অধরা সেই জয় টেস্টে বাংলাদেশের এটিই প্রথম ১০ উইকেটে জয়। পাকিস্তান নবম প্রতিপক্ষ, যাদের টেস্টে হারাল বাংলাদেশ। বাকি থাকল শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। সব মিলিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের ২০তম জয়, যা এলো পাকিস্তানের বিপক্ষে।
বুধবার (২১ আগস্ট) শুরু হওয়া ম্যাচটির প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ৪৪৮ রান সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করে মোহাম্মদ রিজওয়ানের অপরাজিত ১৭১ আর সৌদ শাকিলের ১৪১ রানের ইনিংস ভিত গড়ে দেয় পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে। তখন ধারণা করা হচ্ছিল ম্যাচটিতে হারতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অবশ্য সব ধারণা ভুল প্রমাণিত করে মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানের ওপর ভর করে ৫৬৫ রানে থামে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। সেই ইনিংসে ৭৭ রান করে দলকে ১১৭ রানের লিড এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন মিরাজ। এর আগে লিটন দাস এবং মমিনুল হকও পেয়েছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দেখা।
এর আগে ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে আজ পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নেমেছিল পাকিস্তান। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে আজ শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের তোপের মুখে পড়েছে স্বাগতিকরা। দিনের শুরুতেই সাজঘরে ফিরেছেন শান মাসুদ। এরপর জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি বাবর আজম। দলের বাকি ব্যাটাররাও আর এরপর সুবিধা করে ওঠতে পারেননি। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা এই ব্যাটার আজও করেছেন ৫১ রান, তার দায়িত্বশীল এই ইনিংসের সুবাদেই ১৪৬ রানের দেখা পায় স্বাগতিকরা।
রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে আজ পঞ্চম দিনে ভালোই সুবিধা পেয়েছেন টাইগার স্পিনাররা। কাঁধে হত্যা মামলার চাপ নিয়েও আজ চেনা ছন্দে ফিরেছিলেন সাকিব আল হাসান। দিনের শুরুতেই পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটার সৌদ শাকিল এবং আব্দুল্লাহ শফিককে সাজঘরের পথ দেখান তিনি। পরে নাসিম শাহর উইকেটও নিজের ঝুলতে পুড়েছেন তিনি। একইসঙ্গে এদিন উইকেট শিকারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক বনে গেছেন সাকিব।
সাকিবের পর স্বাগতিকদের আরও বিপদে ফেলেন মিরাজ। লাঞ্চব্রেকের ঠিক আগে পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন তিনি। তার বলে আগা সালমানের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল দারুণ ভাবে লুফে নিয়েছেন প্রথম স্লিপে থাকা সাদমান ইসলাম।
বিরতি থেকে ফিরেও পাকিস্তান শিবিরে মিরাজের আঘাত। মিরাজের করা খানিকটা লো হওয়া বল ঠিকঠাক ব্যাটে লাগাতে পারেননি শাহিন আফ্রিদি। বল গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন আফ্রিদি। মিরাজের পর আবারও উইকেটের উৎসব সাকিবের। হাওয়ায় ভাসানো বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মুশফিকের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন নাসিম শাহ।
শেষের দুই উইকেট একাই শিকার করেছেন মিরাজ। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বোল্ড করার পর ও মোহাম্মদ আলিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই অফ স্পিনার। সাকিব ও মিরাজ দুই স্পিনার মিলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন শরিফুল, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।
রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় ইনিংসে শান মাসুদের দল ১৪৬ রানে অল আউট হলে নাজমুল শান্তদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০ রান। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই সাবলীল ক্রিকেট খেলেছেন দুই ওপেনার জাকির হাসান এবং সাদমান ইসলাম। শাহিন শাহর করা প্রথম ওভারেই একটি বাউন্ডারি হাঁকান জাকির।
এরপর নাসিম শাহর করা দ্বিতীয় ওভারে লেগ বাই থেকে আসে ২ রান। চতুর্থ এবং পঞ্চম ওভারে আরও দুইটি বাউন্ডারির দেখা পান দুই ওপেনার। ছয় ওভার শেষে জয়ের জন্য টাইগারদের প্রয়োজন ছিল ৫ রান। ৬.৩ ওভারেই দারুণ এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন জাকির। ঐতিহাসিক জয়ের এই ম্যাচে জাকির ১৫ রানে এবং সাদমান অপরাজিত ছিলেন ৯ রানে।