বুধবার, ০৮:২০ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

হয়রানির অভিযোগে ভোক্তা অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট তনি’র

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪
  • ২৫ বার পঠিত

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ দায়ের করলেন নারী উদ্যোক্তা রুবাইয়াত ফাতিমা তনি। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ব্যবসা শেষ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল।

তনি দাবি করেন,  একটি অবৈধ অভিযোগে ও অপর একটি ভুয়া অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ প্লাজায় অবস্থিত তনির প্রধান শোরুম বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার অফিস ও অন্যান্য শোরুমে প্রতিদিন পুলিশ নিয়ে হানা দিচ্ছেন জব্বার মন্ডল। এজন্য নিজের ও ব্যবসার সুরক্ষায় ভোক্তা অধিদপ্তরের এমন তৎপরতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেছেন তিনি। এর আগে অধিদপ্তরকে আইনি নোটিশ দেন তনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কতৃক জরিমানা রশিদ

তনির পাঠানো উকিল নোটিশ ও রিট পিটিশন থেকে জানা গেছে, গত ১৪ মে সানবিসকে দুটি অপরাধের দায়ে ৫০ হাজার ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। লুবনা ইয়াসমিন নামের এক নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী রায়। লুবনা ইয়াসমিন নামের ওই ক্রেতা সানবিস থেকে একটি পোশাক কিনেছিলেন ৯ ফেব্রুয়ারি। এর ৫৩ দিন পর ৩ এপ্রিল ওই নারী ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। পরে ১২ মে সানবিসের প্রধান শোরুমে অভিযান চালিয়ে সেটি সিলগালা করে দেন সহকারী পরিচালক জব্বার মন্ডল।

নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার পর তার শোরুম খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তা করেনি ভোক্তা অধিদপ্তর। এসময় সানবিসের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংস্থাটি। তনির অভিযোগ, তাকে যে জরিমানা করা হয়েছে তা বেআইনি। কিন্তু অন্যান্য শোরুমগুলোতেও অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার থেকে জরিমানার টাকা আদায় করা হয়। জরিমানার টাকা দিলে বন্ধ শোরুম খুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন জব্বার মন্ডল। কিন্তু খুলে না দেওয়ায় জরিমানাসহ শোরুম বন্ধের প্রতিকার চেয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তনি।

সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডলজাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল

ভোক্তা অধিকার আইনের ৬০ ধারা অনুযায়ী ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ করতে হয়। কিন্তু লুবানা অভিযোগ করেছেন ৫৪ দিন পর। ফলে এই অভিযোগটি আমলযোগ্য নয় বলে মনে করেন তনির আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন।

অন্যদিকে, রাজু নামের যে অভিযোগকারীকে দেখিয়ে জরিমানা করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া বলে দাবি করেছেন তনি। লুবানার অভিযোগের শুনানি হয় ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক ইন্দ্রানী রায়ের অধীনে। অন্যদিকে জব্বার মন্ডল ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক। ইন্দ্রানীর কাছে শুনানি থাকলেও একই সময় জব্বার মন্ডল সেখানে গিয়ে ভুয়া অভিযোগে দুই লাখ জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা না দিলে অন্যান্য শোরুম বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। রাজু নামের কারো অভিযোগের জন্য তনিকে কোনো নোটিশ বা শুনানি করা হয়নি বলেও জানান তনি।

রুবাইয়াত ফাতিমা তনিরুবাইয়াত ফাতিমা তনি

এদিকে দুই দফা জরিমানার পরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে না দেয়ায় তনি বাধ্য হয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তনি বলেন, জব্বার মন্ডল আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে যে জরিমানা করা হচ্ছে এটা পরিশোধ করেন। তাহলে এটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আর শোরুম খুলে দেওয়া হবে। আমি ব্যবসা বাঁচাতে তার কথা মতো টাকা দেই। কয়েকটি কাগজেও আমার সাক্ষর নেওয়া হয়। কিন্তু পরে শোরুম খুলে না দিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে। এখন আমাকে বলছে তদন্ত শেষ না হলে খোলা যাবে না। তদন্ত যদি হবে তাহলে তার আগে আমাকে শাস্তি দেয়া হলো কেন? আর রাজু নামের কেউ অভিযোগ করেনি। এছাড়া লুবানার অভিযোগ ৫৪ দিন পর। কেউ কাপড় কিনে ৫৪ দিন পর কাপড় খারাপ বললে সেটা কী করে গ্রহণযোগ্য হয়?

তনি আরও বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, আমার এক ব্যবসায়ীক প্রতিদ্বন্দ্বী জব্বার মন্ডলের বন্ধু। তাকে সুবিধা করে দিতেই আমার প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছে। আমি এটা তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করছি। রেডি হলে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

রুবাইয়াত ফাতিমা তনি রুবাইয়াত ফাতিমা তনি

তবে দুই দফা জরিমানা করলেও জরিমানা কী অপরাধে করা হয়েছে সেই আদেশের কপি তনিকে দেয়া হয়নি। এছাড়া তার শোরুম সিলগালা করার বিষয়েও কোনো নোটিশ বা আদেশের কাগজ তাকে দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে তনির আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান অরুন বলেন, ‘তনির সঙ্গে যেটা হয়েছে সেটা আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। এজন্য আমরা আদালতে গিয়েছি। ভোক্তা অধিদপ্তর তদন্ত কমিটি করেছে। তাহলে তদন্তের আগে তাকে শাস্তি দেয়া হলো কীভাবে? এখন আমরা উচ্চ আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেছি। একজন নারী উদ্যোক্তাকে এমন হয়রানি করার প্রতিকার আমরা উচ্চ আদালতে পাবো বলে আশা করি।’

এসব বিষয় নিয়ে সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এখন কিছু বলা যাবে না। তদন্ত শেষ হলে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে মঙ্গলবার আইনি নোটিশ পেয়েই তনির বিভিন্ন শোরুমে অভিযানে নামের সহকারি পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল। প্রথম বনানিতে তনির অফিসে যান। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় অভিযান চালাতে পারেননি। পরে বিকালে ধানমন্ডির শোরুমে যান ভোক্তা অধিকারের টিম। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটির দিন মার্কেট বন্ধ ছিল।  সেইখানেও কোনো অভিযান চালাতে পারেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com