উপজেলা নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বান সর্বাত্মকভাবে সফল হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাকে দলটি অগ্রহণযোগ্য ও অসত্য বলে উল্লেখ করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জনের কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল হয়েছে। জনগণ ভোট বর্জন করেছে। দিনভর আমরা দেখেছি, কোথাও ভোটার নেই। কেন্দ্রগুলো খালি পড়ে আছে। সাজানো এই ভোটের প্রতি জনগণের যেকোনো আস্থা নেই উপজেলা নির্বাচনেও সেটির প্রতিফলন ঘটেছে।
৩০ থেকে ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে, সিইসির এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, সিইসির মাজায় কোনো জোর নেই। জনশূন্য, ভোটারশূন্য নির্বাচনে তিনি যে ভোটের হারের কথা উল্লেখ করেছেন সেটি তিনি মিথ্যার নির্ভর করে বলেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতো পদে থেকে এ ধরনের মন্তব্য নৈতিকতা বিরোধী।
জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর চলমান উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করছে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীসহ বিএনপি জোটের অন্য শরিকরাও এই নির্বাচনে নেই।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পাশাপাশি দলের কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ৭২ ও দ্বিতীয় ধাপে ৬১ জনকে বহিষ্কার করেছে দলটি। নির্বাচনের তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপেও যারা প্রার্থী হবেন, তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আদলে উপজেলা নির্বাচন করছে সরকার। এ জন্য দলীয় নেতাদের প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। উন্মুক্ত মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে। মূলত দেশ-বিদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে এই আয়োজন করা হলেও নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ আছে সরকারের হাতে। সরকার যাকে ইচ্ছে তাকে নির্বাচিত করবে। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তাতে ভোটের প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেয়া হবে।
নেতারা বলেছেন, মাত্র তিন মাস আগে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। সেই নির্বাচনে বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। সাধারণ মানুষের সেই সমর্থনে আঘাত দিতে চায় না বিএনপি। গতকাল প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি খুবই নগণ্য থাকায় বিএনপির আহ্বান এবারো সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন নেতারা।
বিএনপির নেতাদের মতে, তারা নির্বাচন বর্জন করার ফলে নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে না। এর ফলে উপজেলা নির্বাচনও নিষ্প্রভ হচ্ছে। দেশ-বিদেশেও আবার বার্তা যাবে বিএনপি ছাড়া নির্বাচন ও গণতন্ত্র অর্থহীন। বিএনপির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি হয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে মাঠপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। আওয়ামী লীগের সেই সংঘর্ষে বিএনপি কোনো প্রতিপক্ষ হয়নি। দলীয়ভাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পর জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে বিএনপি। ভোটারদের শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে তৃণমূলে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলছে। উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন ।
জানা গেছে, নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি ভোটারদের মাঝে ‘আওয়ামী সরকারের আসন্ন প্রতারণামূলক ডামি উপজেলা ও সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করুন’-শিরোনামে লিফলেট বিতরণ করছে। সেখানে বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জনের কারণগুলো তুলে ধরে জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং সাজা প্রদানের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সেইসাথে জানানো হয়েছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির একদফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথাও। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয় গতকাল। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন অফিসে গতকাল বেলা ১টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কোথাও কোথাও ভোটার উপস্থিতি কম।
ভোট শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ধান কাটার মৌসুমের কারণে ভোট কম পড়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে মোট এক হাজার ৬৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগেরই বলা চলে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।