বাবা শুধু একজন মানুষ নন, স্রেফ একটি সম্পর্কের নাম নয়। বাবার মধ্যে জড়িয়ে আছে বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবী প্রকাশ। বাবা নামটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেকোনো বয়সী সন্তানের হৃদয়ে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার এক অনুভব জাগে। বাবার ছায়া শেষ বিকেলের বটগাছের ছায়ার চেয়েও বড়। যিনি তাঁর সন্তানকে জীবনের সব উত্তাপ থেকে সামলে রাখেন।
পৃথিবীতে যাঁর বাবা নেই সে-ই বোঝে বাবার ভালোবাসা তার জন্য কতটা প্রয়োজন। মাঝিবিহীন নৌকা যেমন চালানো যায় না, তেমনি বাবা ছাড়া নিজের জীবনকে সামনে এগিয়ে নেওয়া অনেক কষ্টকর।
আজ আমার বাবা’র ১৩তম মৃত্যু বার্ষিকী ২৮ জুন,(২০১০-২০২২) । ২০১০ এমন একটি দিনে বাবা না–ফেরার দেশে চলে গেছেন।
আজ আমার বাবার মৃত্যু বার্ষিকীতে বাবাকে নিয়ে বাস্তবতা আবেগ ও মনের কিছু কিছু কথা…..
বিশ্বের সাধারণ সেরা ভালো মানুষদের মধ্যে একজন ছিলেন আমার বাবা। আমার বাবার নাম মোহাম্মাদ সেকান্দার আলী সরদার ,বৃদ্ধ বয়সে কিছুটা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় ! তবে খুব বেসি একটা খারাপ অবস্থায় ছিলেন না শারীরিক ভাবে । চলাফেরা সব কিছুই ঠিক ছিলো । ডাক্তারের পরামর্শ খাওয়া দাওয়া কন্ট্রোল করতে হবে । তিনি ছিলেন অত্যন্ত ঠাণ্ডা মেজাজের ভদ্র নরম প্রকৃতির মানুষ ছিলেন । স্বাধীনতার পরে এক যুগের বেশি সময় বিদেশে কর্মজীবী ছিলেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই নামাজ – রোজায় খুব ভক্ত ছিলেন । ২০১০ সালে তার ইচ্ছে জাগলো তিনি তাবলীগ জামায়েতে ৪০ চিল্লায় যাবেন , তার কিছু বন্ধুদের সাথে । বাড়িতে বড় চাচা সহ ভাই – বোনদের সাথে আলোচনা করলেন । তারা সকলেই দ্বিমত দিলেন বললেন আপনার হার্ডের সমস্যা আছে আপনার যাবার দরকার নেই এই ভাবে রিক্স নেয়াটা ঠিক হবে না ।
তিনি সবাইকে বললেন তিনি আমার সাথে কথা বলবেন আমি যা বলবো তাই হবে ( ”দিদার এর সাথে কথা বলে ও যা বলবে তাই সিদ্ধান্ত নিবো ”)
বাবার কথা ! সকলেই বললেন ঠিক আছে তাই হবে । আমি দিদার সরদার তার বড় সন্তান । বাবা কথা বলার আগেই বোনেরা ফোন দিয়ে বলে দিলেন তাকে জেনো চিল্লায় এতো দূরে যাবার জন্য অনুমতি না দেই । বাড়ির মসজিদ আর বাড়ির কাছাকাছি যে সকল মসজিদ আছে ঘুরে ঘুরে সে সবস্থানে গেলেই চলবে !
আমি বললাম ঠিক আছে তোমরা চিন্তা করো না আমি দেখতেছি কী করা যায় । দুই দিন পরে বাবা ফোন দিলেন । বিস্তারিত জানালেন – আর বললেন ” তুমি যা বলো তাই হবে ” আমি খুব একটু চিন্তিত এমন কথা বলার পড়ে । আমি এর আগে খুব গভীর ভাবে চিন্তা করলাম । বাবা আমার উপর নির্ভর করবেন তার যাওয়া না যাওয়া ! এবং তা আল্লাহ্র রাস্তায় সৃষ্টিকর্তার কাজে – একান্ত ধর্মীয় ! তাই তার কথা শুনে আমি বললাম আব্বা আপনি যদি মনে করেন আপনি সুস্থ শরির যদি ঠিক থাকে এই ৪০ দিন ভালো ভাবে কাটাতে পারবেন ? কোন প্রকার শারীরিক সমস্যা দেখা দেবার সম্ভবনা নাই ? আপনার মনোবল শক্ত ও ঠিক থাকলে আমি এই মুহূর্তে আপত্তি করবোনা , আমি বাড়ন করলাম না !
তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন । আর আপনি আরো একটু ভেবে দেখুন । এই কথা বলায় তার ভাষায় ফোনে উপলব্দি করলাম তিনি খুব আনন্দিত ও খুশি এবং স্বস্থি বোধ করছেন । আমার প্রতি আন্তরিকতা দেখালেন তার ভাষায় অনুধাবন করলাম । তিনি গৌরনদী – বরিশাল থেকে ঢাকা কাকরাইল মসজিদে যান সেখান থেকে তাদের সিলেট পাঠানো হয় একটি গ্রুপ করে । নিতি ৪০ চিল্লা’র ২১ চিল্লা করতে পেরেছিলেন । ২১ দিনে ভোর রাত্রে ফজরের নামাজ আদায়রত সময় সিলেট সদর মসজিদে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আমার জানা ও দেখা মতে তিনি তার জীবনের প্রথম দিকে নামাজ পড়ার বয়স হবার পর থেকে নামাজ আদায় এবং ধর্ম পালনে আবদ্ধ ছিলেন । ছিলেন মানবিক । শান্ত ভদ্র নম্র স্বভাবের ও সদা সামাজিক ছিলেন মৃত্যুকালীন সময় পর্যন্ত নিজ এলাকার ( বাড়ির সামনে ) সামাজিক মসজিদের প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মৃত্যুকালীন সময় পর্যন্ত।
মরহুম বাবার আত্মার শান্তি – মাগফিরাত কামনায় আমাদের নিজ বাড়ির সামাজিক মসজিদ দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সাথে সকল স্বজন প্রিয়জনের এবং মৃত্যু সকল বাবা-মায়ের দোয়ার আয়োজন মোনাজাত এবং সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি সকলে দোয়া করবেন – রাব্বুল আলামিনের দরবারে -আমীন! তিনি যেন ওপারে আমার বাবাকে ভালো রাখেন।