পদ্মা পাড়ে আজ নতুন সকাল। সর্বসাধারণের যান চলাচলের জন্য রোববার সকাল ৬টা থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। এদিন সেতুর মাওয়া প্রান্তে টিকিট কেটে প্রথম পার হয়েছেন আমিনুল ইসলাম (৩৫) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী। মাওয়া টোল প্লাজার ৩ নম্বর লেইনে প্রথম ১০০ টাকা টোল দিয়ে সেতু পার হন তিনি।
আমিনুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট আগেই ৫টা ৫০ মিনিটে কামরাঙ্গীর চর থেকে তারা বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে এসেছেন পদ্মা সেতু পার হওয়ার জন্যই। ভোর থেকেই টোল প্লাজা খোলার অপেক্ষায় ছিলেন। তার মোটরসাইকেল সামনে থাকায় প্রথম সুযোগটা তিনিই পেয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘টোলের ১০০ টাকা দিয়ে প্রথম যাত্রী হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আমার আশা ছিল, সর্বপ্রথম আমি পদ্মা সেতুতে ওঠব। আমার আশা আল্লাহ পূরণ করেছে। এখন আর মাওয়া ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, দুর্ভোগও পোহাতে হবে না কাউকে।’
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এই ২১টি জেলার মাওয়া রুট ব্যবহারকারী বাসসহ যানবাহনগুলো এতদিন ফেরিতে পারাপার হতো। এখন চলছে সেতুতে, যার অপেক্ষা বহুদিনের।
শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিতা সারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাওয়া প্রান্তে টোল দিয়ে তিনিই হন এ সেতুর প্রথম যাত্রী।
রোববার সকাল থেকে সবার জন্য সেতু খুলে দেওয়ার কথা থাকায় প্রথম যাত্রার অভিজ্ঞতা স্মরণীয় করে রাখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। সে কারণে অনেকেই মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন বাহন নিয়ে রাতে এসে অপেক্ষা করছিলেন সেতুর দুই প্রান্তে। যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেট চালু হয়ে যায়। সব কয়েকটি গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নির্ধারিত টোল দিয়ে থ্রি-হুইলার ছাড়া যেকোনো গাড়ি পার হতে পারছে পদ্মা সেতু দিয়ে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘যানবাহনের ব্যাপক চাপ। আমাদের টোলপ্লাজার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, তারা ভিড় সামলাতে পারবে। এ ছাড়া সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্যও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’
সকাল থেকেই দারুণ উৎসাহ নিয়ে হাতে হাতে টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন। তবে তিন চাকার বাহনের এ সেতুতে ওঠার অনুমতি নেই।
সরকারের নির্ধারণ করা টোল হার অনুযায়ী, ছোট বাসে এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে দুই হাজার টাকা এবং বড় বাসে দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ছোট ট্রাকের টোল এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা, বড় ট্রাকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। পিকআপের টোল এক হাজার ২০০ টাকা। কার ও জিপের টোল ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা এছাড়া মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা।