বৃহস্পতিবার, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

‘বৃক্ষবন্ধু’ আজহারুল: বৃক্ষময় যার জীবন

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৮৪ বার পঠিত

বৃক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা জানা, অজানা, বৈজ্ঞানিক তথ্য দেওয়ার কাজ করেন বলে অনেকেই তাকে সম্বোধন করেন বৃক্ষবন্ধু, বৃক্ষপ্রেমী এবং বৃক্ষমানব বলে। বলছিলেন- ‘একজন মনোবিজ্ঞানী বলেছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন বেঁচে ছিলেন।’ বেঁচে থাকা আর জীবিত থাকা এক ব্যাপার নয়। যে বেঁচে থাকে সে কেবল সক্রিয় ও সৃষ্টিশীল হয়ে আজীবন মানুষের উপকার করে যায়। এই কথাটি গাছের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বলা যায় বলে আমি মনে করি। গাছ সারাজীবন বেঁচে থাকে এবং উপকার করে। এমনকি বেঁচে থাকার শেষদিন পর্যন্ত গাছ উপকারই করে যায়।’

মো. আজহারুল ইসলাম খান। বৃক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা জানা, অজানা, বৈজ্ঞানিক তথ্য দেওয়ার কাজ করেন বলে অনেকেই তাকে সম্বোধন করেন বৃক্ষবন্ধু, বৃক্ষপ্রেমী এবং বৃক্ষমানব বলে। ১৯৭০ সালের ময়মনসিংহের নান্দাইলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি তার তৈরি হয় অগাধ ভালোবাসা। সেই ছোটবেলা থেকে বাবার কাছ থেকে দেখে বৃক্ষকে ভালোবাসতে শেখেন তিনি। তার বাবা বাগান করতেন। গাছ লাগাতেন। সেসব গাছের যত্নের ভার কিছুটা নিয়ে নেন নিজ কাঁধে।

পড়াশোনার চেয়েও বেশি সময় ব্যয় করতেন গাছ দেখাশোনায়। গাছের প্রতি তার নেশা এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছিল যে এই কাজ করতে গিয়ে বাবার কাছে বকা শুনেই ঘর ছেড়েই চলে গিয়েছিলেন একদিন। তবুও গাছের প্রতি ভালোবাসা কমাতে পারেননি তিনি। সেই তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বৃক্ষকে আপন করে পার করেছেন জীবনের অনেকটা সময়। তার সমস্ত প্রশান্তি যেন বৃক্ষ জুড়েই। তাই পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও সে কাজ এখনো করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধানে ঘুরে বেড়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন, রাস্তাঘাট ও জঙ্গলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৮-৮৯ ব্যাচের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। একরকম ভাগ্যক্রমেই পেয়ে যান এই বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ। এতে করে উদ্ভিদের প্রতি তার জানাশোনা আরো বাড়ে।

গাছ নিয়ে মানুষ যেসব ভুল তথ্য পায়, সেসব শোধরানোর জন্য শখের কাজকে আরও গুরুত্ব নিয়ে করা শুরু করেন আজহারুল। এই ভাবনা থেকে ২০০৮ সালে শুরু করেন ফেসবুকে গাছ নিয়ে লেখালেখি, ভিডিও তৈরির যাত্রা।

চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা উপকারী উদ্ভিদ নিয়ে মানুষের কম জানাশোনার বিষয়টি বুঝতে পেরে সেসবও জানাতে শুরু করেন তিনি। যেমন বন পুদিনা বা মটমটিয়া নামের একটি উদ্ভিদ আছে যা গ্রামের রাস্তাঘাটে, শহরের নানা জায়গায় অনেক বেশি পরিমাণে দেখা যায়। এই গাছের পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে তা বেশ উপকার করে। কিন্তু অনেকেরই এই উদ্ভিদ নিয়ে কোনো জানাশোনা নেই। এই বিষয়গুলোই তাকে ভাবাতে থাকে। ভিডিও তৈরি করে মানুষকে জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি। যখন দেখলেন অনেকেই জানার আগ্রহ দেখাচ্ছে, তখন তিনি কাজটি বড় পরিসরে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ১৫ বছর ধরে তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে।

আজহারুল বলেন, “গাছের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করাই আমার অন্যতম উদ্দেশ্য। যদি আমার দেওয়া তথ্য দেখে কেউ গাছ লাগানো, গাছ সম্পর্কে জানা অজানা তথ্যের প্রতি আগ্রহ পায়, তবেই এই কাজের পূর্ণতা পাবে। কিছুদিন আগে ক্লাস এইট নাইনের কিছু শিক্ষার্থী বোটানিক্যাল গার্ডেনে আমাকে দেখে বিভিন্ন গাছ সম্পর্কে জানতে চায়। গাছ নিয়ে জানার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।”

শৈশব থেকেই ছিল গাছের প্রতি ঝোঁক

“১৯৮৩ সালের কথা। তখন মানুষ বাগান বিলাস সেভাবে চিনতেন না বলেই বলা চলে। বাবা শখ করে ৩টি বাগানবিলাসের গাছ লাগিয়েছিলেন। এই গাছে সাধারণত পানি দিতে হয় কম। কিন্তু ছোটবেলায় এইসব বুঝতাম না বলে বেশি পানি দেওয়ার কারণে ৩টি গাছের ২টিই মরে যায়, যা আমাকে পীড়া দিয়েছিলো প্রচণ্ডভাবে।”

আজহারুল যখন খুব ছোট ছিলেন তখন শিউলি ফুলের একটা গাছ লাগিয়েছিলেন তার বাবা। প্রতিদিন নিয়ম করে সেই গাছ একবার করে দেখে আসতেন ফুল ফুটেছে কিনা। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাতেন গাছ দেখাশোনা করা, বিভিন্ন গাছ ঘেঁটে দেখা, গাছের বেড়ে উঠা পর্যবেক্ষণ করা, যে গাছ নিয়ে জানতেন না সেটা নিয়ে জানা- এসবের মধ্যেই।

১৯৮৫ সালের ঘটনা। গাছ নিয়ে পড়ে থাকতেন বলে পড়াশোনায় মনোযোগ কমে গেল। সেসময় বাবা একদিন খুব করে বকে দেন তাকে। অভিমান করে সেদিন বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন আজহারুল। ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও মন খারাপ হয়েছিল। ঘর ছাড়ছেন সে কারণে নয়, বরং বাগানের গোলাপ গাছটিকে আর দেখবেন না তা ভেবে খারাপ লাগছিল তার। যাওয়ার পথে রাস্তায় দেখা পান নতুন এক উদ্ভিদের। কানাইডিঙ্গা নামেরওই উদ্ভিদ দেখে ভয় পেয়েছিলেন খুব। সেই কানাইডিঙ্গা নিয়েও তৈরি হয় আগ্রহ। পরে নিজেই দেখেন নানান ঔষধীগুণে ভরপুর এই উদ্ভিদ।

সনাক্ত করেন যেভাবে

উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়েই পড়াশোনা করা আজহারুল ইসলাম খান একজন বোটানিস্ট। গাছ নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই পড়ার পাশাপাশি যারা অনেক আপডেটেড তথ্য দিতে পারেন, তাদের কাছ থেকেও তিনি সংগ্রহ করেন তথ্য। যেসব উদ্ভিদ সনাক্ত করতে অসুবিধা হয় সেগুলোর জন্য বন্ধু-বান্ধব ও নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাহায্য নেন তিনি।

তিনি বলেন, “কিছু কিছু উদ্ভিদ আছে যাদের পাতা, বৈশিষ্ট্য সব একই। তখন আলাদা করে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে যারা আপডেটেড থাকে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিই।”

অন্যের সাহায্য নিতে কোনোরকম সংকোচ করেন না তিনি। তথ্য সংগ্রহে তিনি যাদের শরণাপন্ন হন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আব্দুর রহিম, তাপস বর্দ্ধন, মোস্তাক কাদরী, কানাডা প্রবাসী উদ্ভিদ বিজ্ঞানী তিমির মোস্তফা, কাওসার মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সোনমির প্রফেসর মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সহ আরও অনেকেই।

কখনো কোনো গাছ সনাক্ত করতে ভুল হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, “ভুল মানুষেরই হয়। আমিও ভুলের ঊর্ধ্বে নই। কিন্তু এটাকে কমানো যায় যদি সবসময় নিজেকে আপডেট রাখা যায়। এইজন্য দরকার নিয়মিত পড়াশোনা করা, যত নতুন নতুন গবেষণাপত্র বের হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। আমি সেটা করে যাই। গাছ নিয়ে এইসব পড়াশোনা, জ্ঞান খুঁজে বের করাই আমার নেশা হয়ে গেছে। বলতে পারেন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

একটা গাছ হঠাৎ পেয়ে গেলে সেটার বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করতে পারলেই গাছটি কোন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সেটারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কোন একটি গাছ কোন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সেটা সনাক্ত করতে পারলে বাকি তথ্যগুলো বের করে নিয়ে আসা যায় বলে জানান।

সংগ্রহে আছে দেশি-বিদেশি উদ্ভিদ সম্পর্কিত বই/ ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত
কোনো উদ্ভিদ নিয়ে ভিডিও আপলোড করার আগে অনেক তথ্য জেনে নেন তিনি। না জেনে কোনো তথ্য দেওয়া থেকে বিরত রাখেন নিজেকে। আপডেটেট তথ্য পেতে আমেরিকান বোটানিক্যাল সোসাইটির পেইজের সাথে সংযুক্ত রেখেছেন নিজেকে। তাছাড়া তার ফেসবুক পেইজে যারা সংযুক্ত আছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ। এই বিশেষজ্ঞরা যখন তার কাজের প্রশংসা করেন তখন সেটা তার মধ্যে তৈরি করে দ্বিগুণ আগ্রহ।

পেয়েছিলেন দ্বিজেন শর্মার সান্নিধ্য

বিভিন্ন প্রজাতির গাছ চেনা, অজানা উদ্ভিদ নিয়ে মানুষকে জানানো – বিষয়টিকে তিনি ধারণ করেছেন অন্যভাবে। অন্যান্য অনেক দায়িত্বের মতোই এটাকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ভেবেই কাজ করেন। শরীরে আগের মত শক্তির জোর না থাকলেও মনের জোরেই এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। উদ্ভিদ নিয়ে সবাইকে জানানোর পাশাপাশি নিজেও জানার জন্য সবার কাছেই ছাত্র হয়ে থাকতে সংকোচ করেননি কখনো। এই যাত্রায় তিনি সান্নিধ্যে আসেন দ্বিজেন শর্মারও।

আজহারুল ইসলাম খান বলেন, “দ্বিজেন শর্মা স্যারের বাসা আর আমার বাসা ছিল পাশাপাশি। প্রায়ই আমি স্যারের সাথে দেখা করতে যেতাম। উদ্ভিদ নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলতাম। কিছুতে দ্বিধা থাকলে বা কোনো তথ্য না জানলে আমি স্যারের কাছ থেকে জেনে নিতাম। এভাবে আমি স্যারের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। স্যারও আগ্রহের সাথে আমাকে যা যা জানতে চাইতাম তা জানাতেন।”

নিজ বাগানেই আছে ৬০ এর অধিক প্রজাতির গাছ

“গাছ এমন একটা জিনিস যেটা আমার-আপনার আঙ্গিনায় থাকলেও উপকার করবে সবার। মানুষের উপকারে গাছের কোনো ভেদ নেই। এমন একটি জিনিসের প্রতি মানুষের ভালোবাসা কেন আসে না, কেন গাছ নিয়ে নেই সচেতনতা এটা ভেবেই দুঃখ লাগে”- গাছের উপকারিতা এবং মানুষের গাছ লাগানোর প্রতি বিমুখিতা নিয়ে বলছিলেন তিনি।

আশির দশকেই নানা ধরনের গাছ ঢাকা থেকে কিনে নিজ হাতে বহন করে নিয়ে যেতেন ময়মনসিংহে। সবসময় চাইতেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ থাকুক তার বাগানে। সেই ইচ্ছা থেকেই নিজ গ্রামের বাড়িতে গাছের বাগান করেন। এই বাগানে ৬০ প্রজাতির বেশি গাছ আছে। আরও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ যেন তার বাগানে স্থান পায় সেটারও কাজ করছেন আজহারুল।

তিনি বলেন, “এখন আমি বাড়িতে গেলে প্রথম কাজ হলো সকাল ৮টায় গাড়ি থেকে নেমেই বাগানে গিয়ে গাছ নিয়ে কাজ করা। এইসব কাজ করতে করতে অনেক সময় সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। এই কাজে ভালোলাগা-ভালোবাসা খুঁজে পাই।”

নিজের বাগানের পরিচর্যার পাশাপাশি মানুষের বাগানের গাছের যত্নও করেছেন বিভিন্ন সময়ে। অন্য মানুষের গাছের কেনই বা যত্ন করতে হবে- এইসব বিষয় কখনো কাজ করেনি তার মধ্যে। তিনি মনে করেন গাছ জিনিসটি কারো একার হতে পারে না। এটি সবার।

সংগ্রহে আছে উদ্ভিদ সম্পর্কিত দেশি-বিদেশি বই

গাছ নিয়ে যতরকম বই আছে সব নিজ সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করেন তিনি। বাংলাদেশের লেখকের পাশাপাশি বিদেশি লেখকের বইও রাখেন নিজ সংগ্রহে। গাছ নিয়ে এত পড়াশোনা করতে বিরক্তি কাজ করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটাই একমাত্র কাজ যা আমি পূর্ণ আগ্রহ নিয়ে করি। কোনো একটি নতুন বই আসলে আমি সেটা সাথে সাথে কেনার চেষ্টা করি। গাছ নিয়ে নিজে জানতে এবং অপরকে জানাতে দুটোই ভালবাসি।”

তার সংগ্রহে আছে দ্বিজেন শর্মা, তপন কুমার দে, চয়ন বিকাশ ভদ্র, ড. কামরুল হক, প্রফেসর ড. নিশিথ কুমার পাল, মতিন রায়হান, জালালউদ্দিন আহমদ, নওয়াজেশ আহমদ, মিজানুর রহমান, ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান, বিপ্রদাস বড়ুয়া, জায়েদ ফরিদসহ অনেকের বই। দেশি লেখকের পাশাপাশি বিদেশি অনেক লেখকের বইয়ের বড় সংগ্রহও রয়েছে তার।

গাছ জীবিত না হয়েও বেঁচে থাকে সারাজীবন

আজহারুল ইসলাম খান/ ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত
গাছের গুরুত্ব, উপকারিতা, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজহারুল ইসলাম খান বলেন, “একজন মনোবিজ্ঞানী বলেছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন বেঁচে ছিলেন।’ বেঁচে থাকা আর জীবিত থাকা এক ব্যাপার নয়। যে বেঁচে থাকে সে কেবল সক্রিয় ও সৃষ্টিশীল হয়ে আজীবন মানুষের উপকার করে যায়। এই কথাটি গাছের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বলা যায় বলে আমি মনে করি। গাছ সারাজীবন বেঁচে থাকে এবং উপকার করে। এমনকি বেঁচে থাকার শেষদিন পর্যন্ত গাছ উপকারই করে যায়।”

তাছাড়া তিনি আরও বলেন এমন কিছু উদ্ভিদ আছে যা অনেক ঔষধি। কিন্তু অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকে। এইসব উদ্ভিদ থেকে তৈরি ঔষধ খেয়েই মানুষ সুস্থ হয় অথচ এই উদ্ভিদগুলোকে খুব কম মানুষই সনাক্ত করতে পারে। সর্পগন্ধ্যা এমনই এক উদ্ভিদ যার অনেক উপকারিতা থাকলেও অনেকের কাছে বিষয়টি জ্ঞাত নয়। এই উদ্ভিদের প্রায় প্রতিটি অংশই কোনো না কোনো রোগপ্রতিরোধে কার্যকর।

শৈশব থেকেই সচেতনতা তৈরি করতে হবে

শৈশব থেকেই শিশুদের মধ্যে গাছ নিয়ে আগ্রহ তৈরির কথা উল্লেখ করেন আজহারুল।

তিনি বলেন, “ছোটবেলায় একটা কথা খুব শুনতাম। ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে পরে ঠাস ঠাস’। অর্থাৎ যদি খুব ছোট থেকেই শিশুদের মধ্যে গাছের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা যায়, গাছ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো যায়, অচেনা গাছ চেনার পথ তৈরি করা যায় তবে তারাই পরবর্তীতে সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।”

ছোটবেলায় যা শেখে সেটাই মাথায় থেকে যায়। এজন্য স্কুলে স্কুলে বাচ্চাদের গাছ নিয়ে জানানো উচিত। গাছ নিয়ে ক্যাম্পেইন করা উচিত। তাদের দরকার যথাযথ একটা গাইডলাইন। তাদের মাথায় যদি একবার গাছের উপকারিতা বা প্রয়োজনীয়তা মাথায় ঢোকানো যায় তবে সেটা আমাদের ভবিষ্যৎ দিনের জন্যই কল্যাণকর হবে বলেও মনে করেন তিনি।

“আমার একটা স্বপ্ন হলো, আমি যদি স্কুল লেভেল থেকে মানুষকে জানাতে পারতাম গাছ নিয়ে তবে আমার অনেক ভালো লাগতো। আমার ইচ্ছে হয় ছোট ছেলে-মেয়েদের বলি গাছের উপকারীতার কথা, গাছের পরিচর্যার কথা। একদম মূল জায়গা থেকে এই কাজ করতে চাই যেখান পর্যন্ত পৌঁছালে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমরা পাব।”

মুখোমুখি হতে হয় বিভিন্ন ‘চ্যালেঞ্জের’

বিভিন্ন উদ্ভিদ সন্ধানের পাশাপাশি ছবিও তোলেন নিজেই/ ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত
বিজ্ঞান অনেক গতিশীল। এই গতিশীলতার সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য দেওয়াটাও অন্যতম কষ্টসাধ্য একটি কাজ। মো. আজহারুল ইসলাম কীভাবেই বা এত চাপ সামলে উঠেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ত পরিবর্তনশীল। আজকে যা প্রমাণিত হলো কিছুদিন পর সেটা ভুল বলেও প্রমাণিত হতে পারে। আজকে যেটা মানুষের কল্যাণে লাগবে সেটা কিছুদিন পর হয়তো চেঞ্জ হয়ে যাবে। সেজন্য নিজেকেই আপডেট রাখতে হয় প্রতিদিন। এমন অনেক সময় হয়েছে যে আগে একটা তথ্যে ভিডিও আপলোড করেছি কোনো উদ্ভিদ নিয়ে, কিছুদিন পর দেখা গেলো সেটা ভুল ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত করা হলো। তখন আগের ভিডিওটি আবার আপলোড করে বলে দিই যে আগের তথ্যে ভুল ছিলো। এই যে প্রতিদিনের ঘটনা বা আপডেটেট তথ্যের দিকে খেয়াল রাখাটাও অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।”

তবে এসব ছাড়াও সম্মুখীন হতে হয় নানা ধরনের বাজে মন্তব্যের। অনেকেই না বুঝে না জেনে আজবাজে কমেন্ট করে বসেন। একটা পুরনো তথ্যকে নিয়ে অনেকেই এসে কমেন্ট বক্সে তর্কে লিপ্ত হন। এই যে মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সেটাও তার ভিডিও প্রকাশের জন্য একটা বাধার মত কাজ করে বলে জানান তিনি।

‘আমৃত্যু গাছ নিয়েই থাকতে চাই’

গাছের যেমন উপকারী দিক আছে, তেমনি আছে ক্ষতিকর দিকও। যদি কেউ গাছ নিয়ে জানে, গাছ চেনে, সনাক্তকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে যায় তবে গাছের কোনো ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতন থাকা যাবে সহজেই।

আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমি মানুষকে জানানোর চেষ্টা করে যাই। গাছের ভালো দিক যেমন তুলে ধরি, তেমনি গাছের ক্ষতিকর দিক নিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি। আমৃত্যু এইটা নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। এই কাজে আমার কোনো ক্লান্তি আসে না। একজন ব্যক্তিও যদি আমার দেওয়া তথ্য থেকে উপকৃত হন, তবে নিজেকে সফল বলে মনে করি। আমি আমার পুরো জীবন গাছ নিয়ে ছিলাম। এমনকি আমার অবসর সময়টাও গাছ নিয়ে কাটিয়েছি। অনেক দেশে বেড়াতে গেলে সেখানেও আমাকে সবচেয়ে কাছে টেনেছে সে দেশের গাছপালা।”

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com