বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বায়লাখালি গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক সুমন। গত চারমাসে তার পেঁপে বাগান থেকে আয় হয়েছে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। নিজের সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এলাকার বেকার যুবকদের পেঁপে চাষ করে আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আবু বকর সিদ্দিক অভাবের কারণে ১৯৭৭ সালে নবম শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে রেলওয়েতে চাকরি নেন। চার বছর প্রজেক্টে চাকরি শেষ হলে ১৯৮১ সালে লেবাননের বৌরুতে পাড়ি জমান। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। সিরিয়া, ফিলিস্তিনি ঘুরে ১৭ মাস পর দেশ ফিরে বেকার হয়ে ঠাঁই নেন ঢাকার ফকিরারপুল এলাকায়। কখনো রং মিস্ত্রি, কখনো দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮৬ সালের ঘটনা, পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখে ইন্টারভিউ দিলে কুয়েতে রং মিস্ত্রির কাজ পান এবং স্বচ্ছলতা ফেরে। সেখান থেকে এই পেশায় ২২টি দেশ ভ্রমণ করেন।
২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ব্যবসা করেন। ২০১৫ সালে দেশে ফিরে ঢাকায় ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু দোকানে ডাকাতি হওয়ায় সব হারাতে হয়। এদিকে স্ত্রী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে শেষ পর্যন্ত বাবুগঞ্জের বায়লাখালি গ্রামে ফিরতে হয়। ২০২১ সালে মারা যান তার স্ত্রী। এরপর পুরোপুরি একা ও অর্থনিতক সংকটে পড়েন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় পেঁপে চাষের ওপর যে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তা প্রয়োগ করেন নিজের বাড়ির পতিত জমিতে।
আবু বকর সিদ্দিক সমুন বলেন, ২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পেঁপে চারা বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা লাভ করেছি। আমার পেঁপে বাগান থেকে মৌসুমে কাঁচা ও পাকা পেঁপে বিক্রি করে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। এছাড়া দুটি মৎস্য খামারের ভেতরে লাগানো গাছ থেকে ১ হাজার মন পেঁপে উৎপাদিত হবে।
তিনি জানান, শাহী, কাশ্মিরি, টপ লেডি জাতের ১ হাজারেরও বেশি পূর্ণ বয়স্ক পেঁপে গাছ রয়েছে। চারাগুলো এপ্রিল মাসে রোপন করেছি। জুলাই মাসে ফল এসেছে। এখন বিক্রির মৌসুম। চারমাসের উৎপাদনে আমি সন্তুষ্ট। সেই সঙ্গে যারা বেকার আছেন তাদের প্রতি আহ্বান, অন্যের মুখাপেক্ষি না হয়ে বাড়ির পতিত জমিতে পেঁপে চারা রোপন করে নিজের ভাগ্য ফেরান।
সফল এই পেঁপে চাষি বলেন, আমি বেকার ও শিক্ষার্থীদের পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। একজন শিক্ষার্থী যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫টি পেঁপে গাছ লাগায় এবং যত্ন করে। ২৫টি পেঁপে গাছ থেকে ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
বাবুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, আমি তার কাছ থেকে উন্নত জাতের চারা নিয়ে চাষ করে সফল হয়েছি। আমার শিক্ষকতার পাশাপাশি নতুন আয়ের উৎস তৈরি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মামুনুর রহমান বলেন, আমরা তার বাগান পরিদর্শন করেছি। তিনি পেঁপে চাষে সফল উদ্যোক্তা। তাকে অনুকরণ করে অনেকেই পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
সুত্রঃ dhakapost