এবারে ঈদের ছুটিতে প্রায় এক কোটি মানুষ রাজধানী ছাড়বেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির আশঙ্কা, চাপ থাকায় ২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন গভীর রাত পর্যন্ত ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হতে পারে।
পাশাপাশি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যেরও শঙ্কা জানিয়েছেন সমিতির নেতারা। তাই এখন থেকেই এ নিয়ে সতর্ক থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা। রমজানের শুরু থেকেই বেড়েছে যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় পার করছেন মানুষ। থেমে নেই মহাসড়কে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজও।
সেই সঙ্গে করোনার বিধিনিষেধের বাইরে দু’বছর পর বাধাহীনভাবে ঘরে ফিরতে পারবেন মানুষ। ফলে ঈদযাত্রায় এবার ভোগান্তি যে চরমে উঠবে তা সহজেই বলে দেয়া যায়।
রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঈদযাত্রার সম্ভাব্য সব ভোগান্তিকে সামনে নিয়ে আসতে সংবাদ সম্মেলনে করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এ সময় সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, করোনা কমে আসায় এবারের ঈদে গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে ধারণা করছেন তারা। তিনি বলেন, বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবেন।
এবার লম্বা ছুটি থাকায় গড়ে প্রতিদিন ১৫-১৬ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়বেন। এছাড়াও এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারেন। এতে ২০ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহনে বাড়তি প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।
যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা সতর্ক করছে, আসন্ন ঈদযাত্রায় আগামী ২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজধানী অচল হয়ে যেতে পারে। যাত্রী চাপ বেশি থাকায় এবার দুর্ঘটনার শঙ্কাও বেশি। সে সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এছাড়া ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসাথে রাজধানী না ছেড়ে ধাপে ধাপে ছাড়লে ভোগান্তি কমবে। দুর্ঘটনা এড়াতে যে কোন মূল্যে মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এবার চাহিদা বেশি হওয়ায় সড়কের ব্যবস্থাপনা কোমায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের ২০১৮ ও ২০১৯ সালের তথ্য বলছে, ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ ঈদের সময় বাড়িতে গেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত দুই বছরে চার ঈদে মানুষ গ্রামে কম গেছে। আমাদের তথ্য বলছে, প্রতি ঈদে কমপক্ষে ৬০ লাখ মানুষ গ্রামে গেছেন। আমাদের চলমান একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঈদের আগে চার দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন।
এ সময় প্রতিদিন বাসে আট লাখ, ট্রেনে এক লাখ, লঞ্চে দেড় লাখ, ব্যক্তিগত গাড়িতে প্রায় চার লাখ, মোটরসাইকেলে প্রায় চার লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারবেন। বাকি প্রায় ১২-১৩ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে ট্রাক, ট্রেনের ছাদে করে। তখন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাই এখন থেকেই সরকারকে এসব বিষয়কে মাথায় রাখতে হবে।
হাদিউজ্জামান আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০ রোজার পর বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের সদস্যরা, যাদের কাজ নেই, তাদেরকে ২০ রমজান থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। যারা কর্মজীবী, ছুটি পেলে তারা পরে যাবেন। তাহলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।