ইরানে ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে কমপক্ষে সাত শ’ জন ছাত্রীকে স্কুলের ভেতর বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছে। অনেকের ধারণা, মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ঠেকাতে স্কুলগুলো বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এমন কাজ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ছাত্রীদের শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হচ্ছে এবং অনেকে ক্লান্তিতে ভুগছে।
এ ব্যাপারে রোববার ইরানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে কিছু মানুষ চাচ্ছে মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দেয়া হোক।’ তার এ বক্তব্যে এক ধরনের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরে তিনি বলেন যে তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ইরানের প্রসিকিউটর জেনারেল জানান, তিনি এ বিষয়ে ফৌজদারি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে মনে হচ্ছে এটা পূর্বপরিকল্পিত ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।’
অন্যদিকে, এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রথম বিষ প্রয়োগের ঘটনাটি ঘটে। ওইদিন কোম নগরীর দ্য নূর টেকনিক্যাল স্কুলের ১৮ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
পরে আরো ১০টির বেশি গার্লস স্কুলে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
গত সপ্তাহে পশ্চিমাঞ্চলের লরেস্তান প্রদেশের বরুজার্ড শহরের চারটি স্কুলের কমপক্ষে ১৯৪ ছাত্রীকে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করা হয় এবং মঙ্গলবার রাজধানী তেহরানের কাছেই পার্দিসের খাইয়াম গার্লস স্কুলের ৩৭ জন ছাত্রী বিষ প্রয়োগের শিকার হয়।
অসুস্থ ছাত্রীরা জানায়, অসুস্থ হওয়ার আগে তারা ছোট কমলালেবু বা পচা মাছের মতো গন্ধ পাচ্ছিল।
কয়েকজন অভিভাবক বলেছেন, বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগের ফলে তাদের সন্তান কয়েক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্যাখ্যার দাবি জানায় অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েরা।
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে কোমের গভর্নর অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছে এক শ’রও বেশি মানুষ।
বিক্ষোভের পরদিন সরকারের মুখপাত্র জানান, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষ প্রয়োগের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউনেস পানাহি বলেন, যেসব কেমিক্যালের মাধ্যমে ছাত্রীদের বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো মিলিটারি গ্রেডের নয় এবং সেগুলো বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, বিষ প্রয়োগে ছাত্রীদের বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। বরং এমন পরিস্থিতিতে শান্ত থাকাটা খুবই জরুরি।
তবে এটা নিশ্চিত যে কিছু মানুষ চায় সব স্কুল বন্ধ হয়ে যাক। ড. পানাহির এমন মন্তব্যে বোঝা যায় যে সরকার মনে করছে পরিকল্পিতভাবে এ বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি