চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সড়ক মাসুল আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভিমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ (এসিএমপি) চুক্তি এবং এর আওতায় স্বাক্ষরিত ‘স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউরের’ (এসওপি) অধীনে এসব পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করা হবে। আর এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে শিগগিরই।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক চিঠিতে বলা হয়, এসিএমপি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে (সড়কপথ ব্যবহারে টোল নীতিমালা-২০১৪ অনুযায়ী) ১৫ টন ওজনের পণ্যবাহী মাঝারি ট্রাকের জন্য আটটি রুটে মাসুল নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই মাসুলের হার প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১ টাকা ৮৫ পয়সা। এসিএমপি চুক্তির আওতায় ট্রায়াল রানের ক্ষেত্রে পণ্য চালানের শুল্ক, চার্জ ও ফি বাংলাদেশ কাস্টমস আদায় করবে। একই সঙ্গে সড়ক ব্যবহারের নির্ধারিত মাসুল আদায় যৌক্তিক বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, মোংলা-তামাবিল-ডাউকি, মোংলা-বিবিরবাজার-শ্রীমান্তপুর, চট্টগ্রাম-শ্যাওলা-সুতারকান্দি এবং ডাউকি-তামাবিল-চট্টগ্রাম রুটে ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। এখন এসিএমপি চুক্তির আওতায় নিয়মিত ট্রানশিপমেন্ট কার্যক্রমে যেতে চায় ভারত।
তার আগে প্রথমবারের মতো ট্রায়াল রান হয় ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী ছোট জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে স্থলপথে পণ্য আগরতলা নেওয়া হয়েছিল। জাহাজে পণ্য ছিল ডাল ও রড। এরপরও ট্রায়াল রান চলে। এখন পণ্য পরিবহন আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর পালা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চুক্তি হয়। বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ চুক্তিতে সই করে। দুই দেশই বিশ্বাস করে, এ চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য বাড়বে।
জানা গেছে, মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে দুই দেশের সম্ভাবনা ভালো। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতেই নদীকেন্দ্রিক বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। কারণ, ভারত যখন দুটি বন্দর ব্যবহার শুরু করবে, তখন চাপ বাড়বে। তাই আগেই সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য আরেকটি নতুন রুট চালু হতে যাচ্ছে। ভারতের আসামের শিলচরের সঙ্গে সিলেট থেকে বাস চলাচল শুরু হতে পারে। এ জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে ওবায়দুল কাদেরকে আধাসরকারি পত্র দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাস সার্ভিস চালুর প্রক্রিয়াটি খতিয়ে দেখছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে সিলেট থেকে শ্যাওলা স্থলবন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সিলেট-শিলচর সরাসরি বাস চালুর বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ভারতভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের’ আমন্ত্রণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছিলেন গত ডিসেম্বরে। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দুই দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা হয় ওই উৎসবে। এর অংশ হিসেবে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়বে। শিগগির ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি হবে। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে জকিগঞ্জ স্থল শুল্কস্টেশন এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, স্থলবন্দরসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, করিমগঞ্জ-জকিগঞ্জ এবং সিলেট-শ্যাওলা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সিলেট-শিলচর সরাসরি বাস চলাচলের জন্য চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিআরটিসির ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা, ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা, আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা-আগরতলা, ঢাকা-খুলনা-কলকাতা-ঢাকা এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটি রুটে বাস চলছে। তা ছাড়া ঢাকা-শিলিগুড়ি-গ্যাংটক-ঢাকা রুটে বাস পরিচালনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের সড়ক যোগাযোগ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বিবিআইএন এমভিএর আওতায় ঢাকা-শিলিগুড়ি-কাঠমান্ডু রুটে বাস চলাচল শুরু হতে পারে।