ছোটপর্দার জনপ্রিয় তারকা তাসনিয়া ফারিণ। গত শুক্রবার বড়পর্দায় অভিষেক হয়েছে তার। কলকাতার একাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে এই অভিনেত্রীর প্রথম সিনেমা ‘আরো এক পৃথিবী’। মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় ফারিণের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ ভূঁইয়া
বড়পর্দায় অভিষেক হলো। প্রথমবার রুপালি পর্দায় নিজেকে দেখে কেমন লেগেছে?
দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন পেলেন?
কলকাতায় ‘আরো এক পৃথিবী’র প্রচারণায় যেখানেই গিয়েছি, মনে হতো- সবাই যেন আমাকে আগে থেকেই চেনেন। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আমার কাজগুলো দেখার সুবাদে হয়তো এই বাড়তি সুবিধাটা পেয়েছি। সিনেমা মুক্তির আগেই নন্দন প্রেক্ষাগৃহে বিশেষ প্রদর্শনীতে ছিলাম। পাশাপাশি সাউথ সিটি মলের আইনক্সে গিয়েছি। ছবিটি নিয়ে অনেক দর্শকই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকেও অনেক সহকর্মী আর ভক্ত-দর্শক অভিনন্দন জানিয়েছেন। ব্যতিক্রম ছিলেন আমার মা। সিনেমা মুক্তির পর কলকাতায় তিনি খুঁজে খুঁজে দেখেছেন, কোথায় কোথায় আমার ছবিসংবলিত পোস্টার আছে। আমাকেও ডেকে ডেকে সেগুলো দেখাতেন।
বুম্বাদাও (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) তো আপনার প্রশংসা করেছেন…
সিনেমার প্রচারে গিয়েই ওনার সঙ্গে দেখা হয়। প্রথম দেখাতেই উনি আমাকে চিনে ফেলেন। ওটিটিতে আমার কাজ দেখেছেন জানিয়ে বুম্বাদা বলেছিলেন, ‘ফারিণ- তোমার অভিনয় ভালো, ধরে রেখো।’ স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারে ওনার মতো কিংবদন্তি অভিনেতার কাছ থেকে পাওয়া এই প্রশংসা আমার জন্য সৌভাগ্যের।
‘আরো এক পৃথিবী’র প্রচারণায় গিয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘সানন্দা’র মডেল হয়েছেন। অনুভূতি কেমন ছিল?
এই ম্যাগাজিনের সঙ্গে শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তখন আমার বয়স সাত কী আট বছর হবে। মা নিয়মিত ‘সানন্দা’ রাখতেন, পড়তেন। ‘সানন্দা’ কী, আমি তখনো বুঝতাম না। হাতে নিয়ে পড়তে চাইলে মা বকা দিত আর বলত ‘ওটা রেখে দাও। ওটা তোমার জন্য নয়।’ আমার জ্বালায় এক সময় মা ম্যাগাজিনটি লুকিয়ে রাখতেন। ‘সানন্দা’র ফটোশুট করার সময় সেই দিনগুলোর ছবি চোখের সামনে ভাসছিল। আমার কাছে এটা জীবনের একটি চক্র পূর্ণ করার মতো কাজ ছিল।
আপনার মা কী মন্তব্য করলেন?
ফটোশুট শেষ করার পর সেই ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে মায়ের উদ্দেশে লিখেছিলাম, ‘ছোটবেলায় চুরি করে যে ম্যাগাজিন পড়ার জন্য বকা দিতে, সেটার জন্য শুট করলাম দেখো।’ কথাটি শুনে মা হেসেছেন। আর বলেছেন, ‘তখন তুমি ছোট ছিলে। তোমার জন্য সেটা উপযুক্ত ছিল না। কারণ এটা তো একটা বয়সের ব্যাপার আছে।’
কলকাতার নতুন কোনো সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছেন?
প্রথম ছবির কাজ শেষ করার পরই বেশ কিছু সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছি। কয়েকটির গল্প ও চরিত্র ভালো লাগেনি। দু-একটি ছবির ব্যাপারে এখনো ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ কিছুই বলিনি। ভিন্নধারা বা মূলধারা কোনো সিনেমাতেই আমার সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই আমার চরিত্রের গভীরতা থাকতে হবে, সেই সঙ্গে থাকতে হবে কাজের সুযোগ।
প্রেক্ষাগৃহে বসে প্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খানের সিনেমা উপভোগ করেছেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
আগে বড়পর্দায় শাহরুখ খানের ছবি কোনোদিন দেখা হয়নি। তাই খুব ইচ্ছা ছিল। ২৫ জানুয়ারি টিকিট পাইনি। পরের দিন সাউথ সিটির আইনক্সে সকাল ৯টার শো দেখেছি। দেখতে বসে শুধুই বলিউড বাদশাহর দিকে নজর ছিল। আসলেই এই ছবি দিয়ে ‘কিং ইজ ব্যাক’। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম একজন মানুষের মধ্যে কী জাদু আছে, চার বছর পর ফিরে দর্শকদের মুগ্ধ করে চলেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটিতে ব্যস্ততা বাড়িয়েছেন। এই মাধ্যমে কাজের সুবিধা কেমন বলে মনে হয়?
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমার জন্য বেশ লাকি। এই মাধ্যমে প্রথম কাজ ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলমেন’। এর পর ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘নিশ্বাস’, ‘কারাগার’ করেছি। করপোরেট অফিস বলেন, শপিং মল বলেন কিংবা দেশের বাইরে ওটিটির কাজগুলোরই বেশি প্রতিক্রিয়া পাই। আগে আমি এই শ্রেণির দর্শকের প্রতিক্রিয়া পাইনি। আর ওটিটিতে গল্প বলার স্বাধীনতা আছে, সময় নিয়ে কাজ করা যায়, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাজেট বেশি ফলে কাজ করে আরাম পাওয়া যায়। ওটিটির কাজের জন্যই ‘আরো এক পৃথিবী’ সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছি। ওটিটিই এখন আমার প্রথম পছন্দ।
তাহলে কি নাটকে আর অভিনয় করবেন না?
করব না কেন? নাটক দিয়েই আমি পরিচিতি পেয়েছি। সুতরাং কাজ অবশ্যই করব। তবে বেছে বেছে গল্প, চরিত্র দেখে অভিনয়ের সম্মতি দেব। যে কাজগুলো দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারবে, নাটকে সে ধরনের কাজের চেষ্টা থাকবে। একটা সময় পরিচিতির জন্য টানা নাটকে কাজ করেছি। ভালো-মন্দ সব কাজই আছে ওখানে। তবে গঁৎবাধা নাটকে আর অভিনয় করব না।