দুই দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু। গতকাল রাতে দিল্লি হয়ে ঢাকা পৌঁছান তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের প্রভাবশালী এ নীতিনির্ধারক দক্ষিণ এশিয়ায় চার দিনের সফরে রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি ভারতের রাজধানীতে পৌঁছান। বাংলাদেশ সফরের সময় মার্কিন এ নীতিনির্ধারকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সচিব ছাড়াও সিভিল সোসাইটি এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সিরিজ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ঢাকা সফরের প্রথম দিনেই বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের ইস্কাটনস্থ সরকারি বাসভবনে (পররাষ্ট্র ভবন) যান। সেখানে তারা বৈঠক করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হওয়া বৈঠক নৈশভোজের মাধ্যমে শেষ হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায় মোমেন ও লু’র মধ্যকার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয়নি। কারণ বৈঠক শেষে মার্কিন প্রতিনিধিরা কোনো কথা বলেননি। তা ছাড়া রাত ১১টা অবধি গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা পররাষ্ট্র ভবন গেটে অপেক্ষায় থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, আগামী সংসদ নির্বাচন ইস্যুসহ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে যখন অস্বস্তি, টানাপড়েন ঠিক সে সময় মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র্যাবের ওপর নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা যেন আরোপ করা না হয় সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া জিএসপি পুনর্বহাল, শান্তি রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁঁকি মোকাবিলা, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে অগ্রাধিকার দেবে ঢাকা। অন্যদিকে ওয়াশিংটনের তরফে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ পদস্থ মার্কিন কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। এ সবের জবাবও তৈরি করেছে ঢাকা।
বেশকিছু দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পরই গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পরের বছরই ডিসেম্বরে র্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর নানারকম চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় বাংলাদেশে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন পিটার ডি হাস। তিনি আসার পরই বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে সরব হয়ে ওঠেন।
এমন প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুুল মোমেন। এ সফরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনা হবে কিনা এটা এখনই জানা যাবে না। তবে আমাদের একটা অনুরোধ থাকবে তাদের প্রতি যে, তাদের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে যেসব দূরত্ব ও উদ্বেগ রয়েছে, তা আমলে নিয়েছে ঢাকা। এসব কাটিয়ে উঠতে যোগাযোগের পরিধি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। মানবাধিকার, শ্রম অধিকারের বিষয়ে মার্কিনিদের সঙ্গে একটি বোঝাপড়া হচ্ছে।