আবারও দ্বিতীয় মেয়াদে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সেতু বিভাগ। প্রকল্পের কাজ চলতি বছর ডিসেম্বরে শেষ করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। নতুন প্রস্তাবনায় প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রকল্পটির বাড়তি ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপন করা হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, টানেল নির্মাণের মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা (এর মধ্যে সরকারি ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি এবং প্রকল্প ঋণ ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয় প্রকল্পটি। পরবর্তী সময় এটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ধরা হয়। তখন দেড় বছর সময় বাড়ানো হয়। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮ হাজার ২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রথম সংশোধিত ব্যয় অপেক্ষা ৩ হাজার ১৫ কোটি ২৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে ভেরিয়েশনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি, কিছু অঙ্গের কাজের পরিমাণ ও ব্যয় কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া এবং ঋণ প্রদানকারী সংস্থার (চীনা এক্সিম ব্যাংক) দেওয়া অর্থের ডলারের সঙ্গে মূল্য অবমূল্যায়ন চুক্তি নবায়ন ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়, চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদী দিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত। মূল শহর ও বন্দর এলাকা কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত। অন্যদিকে ভারী শিল্প এলাকার পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্তমানে সচল দুটি সেতুর মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান যান চলাচল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলায় পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পলি জমার সমস্যা সমাধানের জন্য কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণের পরিবর্তে নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণের প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। জিটুজি ভিত্তিতে এটি নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে ২০১৪ সালের জুনে চীন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
পরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার মধ্যে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৭০৫.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হবে। প্রস্তাবিত এ টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের মধ্যে অবস্থিত এবং এটি চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন হয়েছে। এ ছাড়া সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং গৃহসজ্জা সামগ্রী ক্রয়, নতুন অঙ্গ সংযোজন এবং বিনিময় হার কম বা বৃদ্ধি। এ ছাড়া ভ্যাট ও আইটি খাতে খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, টানেল অ্যাপ্রোচ অঙ্গে প্রায় ৭২ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবে দুটি পুলিশ স্টেশন (আনোয়ারা প্রান্তে ৪ তলা, পতেঙ্গা প্রান্তে ২ তলা ভবন) এবং দুটি ফায়ার স্টেশন (উভয় প্রান্তে ২ তলা ভবন) বাবদ ৩০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া টোল প্লাজায় ২৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিপিপিতে দেখা যায়, এই খাতে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি।