করোনার প্রভাব কাটিয়ে চলতি বছর ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে বলিউডের চেয়ে এগিয়ে ছিল দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো।
বলা যায় চলতি বছর হলিউডের পর দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা ছিল ব্যবসা ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। চলতি বছর তেলেগু সিনেমা ‘আরআরআর’ জনপ্রিয়তা ও ব্যবসা সফলতার দিক দিয়ে ছিল দুর্দান্ত।
এস এস রাজামৌলি পরিচালিত এ সিনেমাটি ভারতের দুই স্বাধীনতা সংগ্রামী যোদ্ধা ‘আলুরি সীতারামা রাজু’ এবং ‘কমারাস ভীম’-এর জীবনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি কাল্পনিক গল্পে নির্মিত।
এতে দক্ষিণের সুপারস্টার রামচরণ ও জুনিয়র এনটিআর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও ছবিটিতে আরও দেখা গেছে অজয় দেবগণ, আলিয়া ভাটসহ আরও অনেক তারকাকে। বিশ্বব্যাপী ১২০০ কোটি রুপি আয় করেছে এ সিনেমাটি।
চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় কন্নড়ের সিনেমা ‘কেজিএফ : চ্যাপ্টার টু’। মুক্তির পর থেকেই আলোড়ন সৃষ্টি করে এ সিনেমা। বক্স অফিসে রীতিমতো ঝড় তুলেছিল। এতে দক্ষিণী সুপারস্টার যশের বিপরীতে দেখা যায় শ্রীনিধি শেঠিকে। সেই সঙ্গে সিনেমাতে আরও অভিনয় করেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত, রাবিনা ট্যান্ডনসহ আরও অনেকে।
ভারতের মেগাস্টার অভিনেতা কমল হাসানের নতুন সিনেমা কবে মুক্তি পাবে এমন প্রশ্ন গত কয়েক বছর ছিল সিনেমাপ্রেমীদের মুখে মুখে। দীর্ঘসূত্রিতার পর চলতি বছর দক্ষিণ ভারতীয় এ মেগাস্টার পর্দায় ফিরেই যেন তাক লাগিয়ে দিলেন! বক্স অফিসে ‘বিক্রম’ পিছনে ফেলেছে ‘বাহুবলী’কেও।
‘বিক্রম’ পরিচালনা করেছেন লোকেশ কানাগারাজ। এতে কমল হাসনকে একজন ‘র’ এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এছাড়া এতে অভিনয় করেছেন সুপারস্টার বিজয় সেতুপতি ও ফাহাদ ফাসিল। কন্নড়ের চলতি বছরের আরেক সুপারহিট সিনেমা ‘কানতারা’। মুক্তির পর ভারতবর্ষ জুড়ে ছিল এর জয়জয়কার।
যদিও মুক্তির সময় খুব বেশি প্রচার পায়নি সিনেমাটি। নিজগুণে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে দর্শকমনে। শুধু তাই নয় ‘পুষ্পা’, ‘কেজিএফ ২’ এর মতো বক্স অফিস কাঁপানো সিনেমার চেয়ে বড়সড় সাফল্যের মুখ দেখেছে রিষভ শেঠির ‘কানতারা’।
‘কানতারা’ শব্দের অর্থ গহিন জঙ্গল। ছবির গল্প স্থানীয় গ্রামবাসীর দেবতা ‘ভূতা’কে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে। সিনেমাতে অভিনয় করেছেন কিশোর, অচ্ছুত কুমার, সপ্তমী গৌড়া, প্রমোদ শেঠির মতো অভিনেতা অভিনেত্রীরা।
চলতি বছরের পহেলা জুলাই ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় আর মাধবন পরিচালিত ও অভিনীত সিনেমা ‘রকেট্রি : দ্য নাম্বি ইফেক্ট’। এ সিনেমা মুক্তির পরপরই ব্যাপক সমাদৃত হয় দর্শকমহলে। এটি ইসরো (ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন) বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণকে নিয়ে নির্মাণ হয়েছে। এটি ইংরেজি, হিন্দি, মালায়ালাম, কন্নড়, তামিল এবং তেলেগু ভাষাতেও মুক্তি পায়।
তেলুগু ভাষায় নির্মিত জীবনীভিত্তিক অ্যাকশন সিনেমা ‘মেজর’। এটি পরিচালনা করেছে শশী কিরণ টিক্কা। সিনেমাটি ২০০৮ সালের মুম্বাই জঙ্গি হামলায় শহিদ মেজর সন্দীপ উন্নীকৃষ্ণনের জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে আদিভি শেষ।
২০২২ সালের তেলুগু ভাষায় নির্মিত হয় ‘সীতা-রামাম’ নামের সিনেমা। হানু রাঘবপুদি পরিচালিত এ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন দুলকার সালমান, মৃণাল ঠাকুর, রেশমিকা মন্দানা, ভূমিকা চাওলা। মুক্তির পর এ সিনেমাটি দর্শকমহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন অভিনীত মনিরত্নমের পরিচালনায় তামিল মহাকাব্যিক সিনেমা ‘পন্নিইন সেলভান’। এটি একটি তামিল ঐতিহাসিক উপন্যাসের সিনেমার রূপ। কালকি কৃষ্ণমূর্তির ইতিহাস ভিত্তিক তামিল উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এ সিনেমা।
দক্ষিণ ভারতের চোল রাজাদের ইতিহাস উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু। তাই ছবিটি তৈরি হয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। সিনেমায় দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করছেন ঐশ্বরিয়া।
এতে তাকে নন্দিনী ও মন্দাকিনী দেবীর চরিত্রে পর্দায় দেখা গেছে। এছাড়া এতে অভিনয় করেছেন চিয়ান বিক্রম, জয়ম রবি, কার্তি, ত্রিশা, জয়রাম প্রমুখ।
এ সিনেমাটিও ভারতীয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়। ‘৭৭৭ চার্লি’ ভারতীয় কন্নড়ের অ্যাডভেঞ্চার কমেডি ড্রামা। কিরণরাজ কে পরিচালিত এ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রক্ষিত শেঠি।
মানুষ ও একটি কুকুরের মধ্যে মিষ্টি-মধুর সম্পর্কের কাহিনি উঠে এসেছে এ সিনেমায়। দর্শক প্রশংসার পাশাপাশি বক্স অফিসেও দারুণ সাড়া ফেলে সিনেমাটি।