শুক্রবার, ১০:২২ অপরাহ্ন, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

মৌসুমি বায়ুর সময়েও লা নিনার প্রভাবে খরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ৭৩ বার পঠিত

বাংলাদেশের ওপর থেকে মৌসুমি বায়ু চলে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার প্রায় বৃষ্টিশূন্য ছিল দেশ। আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেবল তেঁতুলিয়ায় দুই মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর কোথাও কোনো বৃষ্টি হয়নি। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের লা নিনার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। সে কারণে মৌসুমি বায়ুর সময়েও বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া দফতর বলছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু মোটামুটি সক্রিয়। ফলে আগামী দুই দিন দেশে বৃষ্টিপাত সামান্য বাড়বে। চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১০ অক্টোবরের পর যেকোনো দিন বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি চলে যেতে পারে। আগামী বছরের জুন মাসের আগে আর বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু আসবে না। কিন্তু মৌসুমি বায়ু চলে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের আকাশে কিছু মেঘ থাকতে পারে এবং তা থেকে কিছুটা বৃষ্টি হবে। যদিও আবহাওয়া অফিসের মাসব্যাপী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অক্টোবর মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশি বৃষ্টি হতে পারে।

গতকাল তেঁতুলিয়া ছাড়া দেশের কোনো অংশে বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী তেঁতুলিয়ায় মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বলা চলে গতকাল বৃষ্টিশূন্য ছিল দেশ। আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দেশে কিছুটা বৃষ্টি হয়েছিল। আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায়, আকাশ গাঢ় নীলে ছাওয়া। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ আকাশে ভাসছে। এই মেঘ থেকে কখনো বৃষ্টি হয় না। তবে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এর মধ্যেই বঙ্গোপসাগর থেকে বৃষ্টি হওয়ার মতো পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প আসতে পারে এবং বৃষ্টি হতে পারে।

ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে তবে এটা বাংলাদেশের আবহাওয়ার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। কারণ এটা ভারতের অন্ধ্র উপকূলের দিকে রয়েছে। এই লঘুচাপটি আর শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা নেই। ফলে হয়তো এমন হতে পারে যে অন্ধ্র উপকূল থেকেই এই লঘুচাপটি শক্তিহীন হয়ে যেতে পারে।

চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে দু’টি নিম্নচাপ হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের মাসব্যাপী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এর মধ্যে থেকে একটি নিম্নচাপ থেকে ঝড় হতে পারে। এটা হতে পারে বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমি বায়ু উঠে গেলে। মৌসুমি বায়ু থাকলে এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরেই বৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলে সাগরের পানি অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা থাকে। কিন্তু মৌসুমি বায়ু চলে গেলে বঙ্গোপসাগরের আকাশে মেঘ কমে যাবে এবং বৃষ্টি না হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাবে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের পানির উপরের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলেই সেখানে পানির আন্দোলন বেড়ে যায়। আন্দামান সাগরের দিকে অক্টোবরের মাঝামাঝির পর থেকে দেখা যায়, সেখানকার সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি উঠে গেছে। ফলে সে তাপমাত্রাতে সহজেই ঘূর্ণিঝড় হওয়ার মতো চাপ সৃষ্টি হয়ে যায় সহজে।

এ দিকে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের আবহাওয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের এল নিনু ও লা নিনার বেশ প্রভাব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের আশপাশের দেশগুলোতে বেশ ভালোভাবে প্রতিভাত হয়ে থাকে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনার প্রভাব থাকবে। গত তিন বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনার প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। এটাকে ‘মিস্টারিয়াস ট্রিপল ডিপ’ বলে অভিহিত করেছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। এর মানে এটাই ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা কমছে না।’ এই ‘মিস্টারিয়াস ট্রিপল ডিপ’ বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর সিস্টেমকে ধীর করে দিয়েছে। এ কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। লা নিনার প্রভাবে চলতি বছর ভারতীয় উপমহাদেশের আবহাওয়ায় বৃষ্টি কমেছে এবং খরার পরিস্থিতি বেশি ছিল। সে কারণেই বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে মৌসুমি বায়ুর মধ্যেই কমেছে বৃষ্টি।

স্বাভাবিকের চেয়ে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে জুলাই ও আগস্ট মাসে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com