দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বাড়াতে নতুন যে প্রকল্প নির্বাচন কমিশন (ইসি) সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল তা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মো: হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানিয়েছেন, ইভিএম প্রকল্প নিয়ে আগামী সোমবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ এ আলোচনায় কমিশনাররা যাচাই কমিটিকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তবে সভায় ইভিএমের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সপ্তম ‘কমিশন সভা’ শেষে তিনি এ কথা জানান।
এর আগে বেলা ১১টায় রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে সভা শুরু হয়। ইভিএম কেনার প্রকল্প নিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবের খসড়া তোলা হয় সভায়। বৈঠকে অন্যান্য কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইসি সচিব বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকের সভাটি স্থগিত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী সোমবার পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ইভিএমের বাজারদর যাচাই করার জন্য কয়েকদিন আগে কমিটি করে দেয়া হয়েছিল। তারা এখনো তাদের কাজ শেষ করতে পারেনি। যাচাই শেষ হলে তারা পরবর্তী কমিশন সভায় সেটি তুলে ধরবেন। এরপর কমিশন সেটি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
ইসির সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে রয়েছে ৫৪ হাজারেরও বেশি ইভিএম। আর ৯৩ হাজারেরও বেশি রয়েছে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের কাজে। কিছু ইভিএম নির্বাচন ভবনে সংরক্ষিত রয়েছে। সংরক্ষণের পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব, গত পাঁচ বছর ধরে ব্যবহারের ফলে ব্যাটারি, চার্জিং কেবলের মত যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ছে। এর হার প্রায় ৩০ শতাংশ। মাঠ পর্যায়ে থাকা ইভিএমের মধ্যে ৪৭ হাজার ইভিএম হার্ডবোর্ডের বাক্সে, ৪৫ হাজার ইভিএম কাগজের বাক্সে রয়েছে। হার্ড বাক্সগুলো সবগুলো পৌঁছায়নি। কাগজের বাক্সগুলো অত ভালো থাকে না। দেড় লাখ মেশিনই হার্ডবাক্সে থাকবে। কিন্তু হার্ডবাক্স পাঠানো হয়নি। একইসাথে সংরক্ষণে রাখলে যেখানে রাখুক কোনোভাবে আর কিছু হবে না। ২০১৮ সালে শুরু ৩ হাজার ৮২৫ কোটির এ প্রকল্পের আওতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট নেয়া হয়। আর দেশের প্রায় ৩০টি জেলায় বাসা-বাড়িতে স্টোরহাউজ হিসেবে ব্যবহার করে ইভিএমগুলো রাখা হচ্ছে। কারণ ওয়্যারহাউজ এখনো তৈরি করা হয়নি।
গত আগস্টে ইসির সংলাপে ২২টি রাজনৈতিক দল ইভিএম নিয়ে মতামত দিয়েছিল। এর মধ্যে ৯টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে। আরো পাঁচটি দল ইভিএম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহের কথা বলেছে। কেবল আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোট চেয়েছে।