আসনা তিন বছরের বিবাহিতা। গত কয়েকদিন ধরে আসনার সকালে ঘুম থেকে উঠেই বমি বমি লাগছে। প্রথম প্রথম অতটা পাত্তা দেয়নি সে। কিন্তু কিছুতেই এ সমস্যা ভালো হচ্ছে না। বরং বেড়েই চলছে। এদিকে এ মাসে মাসিকের সময় দুই-তিন দিন পার হলেও মাসিক হচ্ছে না। শাশুড়িকে এ সমস্যার কথা জানালে খুশিতে জড়িয়ে ধরে তাকে। পরিবারের প্রথম অনাগত সন্তানের আগমন উপলক্ষে উচ্ছ্বসিত তিনি। মাসিক বন্ধ হওয়া ও বমি বমি ভাবকে সবাই গর্ভধারণের লক্ষণ বলেই জানে। গর্ভধারণ করলে মেয়েদের দেহে হঠাৎ করে ইস্ট্রোজেন ও এআইচসিজি (গর্ভকালীন এটি বেড়ে যায়) হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। হরমোনের পরিবর্তনের ফলে দেহে পরিবর্তন দেখা যায়। মেয়েরা সকালে ঘুম থেকে উঠেই বমি বমি ভাব অনুভব করে। এ বমি বমি ভাব কারো জন্য অল্প পরিমাণে হলেও কারো ক্ষেত্রে অনেক বেশি হয়। মাঝে মাঝে বমিও হতে পারে।
অনেকসময় এটি অসহ্য হয়ে যায়। একেই বলে মর্নিং সিকনেস। এটি গর্ভধারণের শুরুতে দেখা দিলেও কতদিন স্থায়ী হবে তা বলা মুশকিল। তবে বমি বমি ভাব গর্ভধারণের ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে আপনাআপনি ভালো হয়ে গেলেও অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। বমি বমি ভাবের জন্য অনেকেই ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন না। গর্ভবতীরা পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ভোগেন। এর ফলে গর্ভস্থ শিশুর নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বমি বমি ভাবকে স্বাভাবিক মেনে নিতে হবে। সাধারণত ১২ সপ্তাহের পর এটি আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়। তাই এটাকে নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না। যদি খুব বেশি অসহ্য হয় তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ সেবন করতে হবে। মর্নিং সিকনেসে মেক্লোপ্রোমাজিন, ওডানসেট্রন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যায়।
যদি এ ওষুধের সাথে ভিটামিন বি-৬ সেবন করে ভালো ফল পাওয়া যায়। ভিটামিন বি-৬-এর সাথে ভিটামিন বি-১২ সেবন করা যেতে পারে। এতে করে বমি বমি ভাব কমবে ও বমি হবে না। খালি পেটে থাকবেন না। পেট খালি থাকলে বমি বমি ভাব বাড়িয়ে দেয়। আবার পেট ভরে খাবার খেলেও কিন্তু সমস্যা বাড়বে। তাই একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান। সকালে বিছানা থেকে ওঠার আগে বিছানায় হালকা খাবার যেমন- বিস্কুট, টোস্ট বিস্কুট, ক্র্যাকার্স, শরবত, মুড়ি-চিড়া খান। এ খাবার পরিপাক হওয়ার জন্য কিছু সময় দিন। এরপর বিছানা থেকে উঠে পড়–ন। প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানীয় যেমন- ফলের জুস, শরবত, স্যালাইন পান করুন। আমিষ জাতীয় খাবার বেশি করে খান। চর্বি জাতীয় খাবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিন। যেসব খাবার খেলে বমি বমি লাগে যেমন টক ফলের জুস, কফি ইত্যাদি সে খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। আয়রন ট্যাবলেট খেলে এমনিই বমি বমি লাগে। মর্নিং সিকনেসের সময় এটি আরো বাড়িয়ে দেয়। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে আয়রনের চাহিদা খুবই কম থাকে। তাই ১২ সপ্তাহের পর আয়রন ট্যাবলেট সেবন করুন। প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম করুন। বেশি রাত জাগবেন না। প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুমান। দুশ্চিন্তা করবেন না। দুশ্চিন্তা কিন্তু মর্নিং সিকনেসকে বাড়িয়ে দেয়।
হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করুন। অনাগত সন্তানকে নিয়ে সুখের ভাবনা ভাবতে পারেন। মজার কোনো বই পড়ে সময় কাটান। কম্পিউটারেও খেলতে পারেন। যদি দিনে তিন বারের বেশি বমি হয় বা কোনো কিছু খেতে না পারেন ও যদি জ্বর বা শরীর ব্যথা থাকে তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিভাগ, ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল