শনিবার, ০১:৪০ অপরাহ্ন, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

শিল্পখাতে গ্যাসের দাম এত বাড়ল কেন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৭৭ বার পঠিত

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে পরিবহন খাতে এবং আবাসিক ভোক্তাদের গ্যাসের দাম এ যাত্রায় বাড়ানো হয়নি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিল্পখাতের গ্যাসের দাম অতিমাত্রায় বাড়ানো হয়েছে যার ফলে কারখানা সচল রাখাটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা আছে।

যদিও গবেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক সঙ্কট সামাল দিতে প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা পেতে সরকার আইএমএফের সাথে যে সমঝোতা করেছিল- তারই অংশ হিসেবে ভর্তুকি কমাতে শিল্পখাতের গ্যাসের দাম এভাবে বাড়ানো হয়েছে।

অবশ্য পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাসের দাম এত বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এ বিষয়ে পরে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবে মন্ত্রণালয়।

সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত কয়েক মাস ধরেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে আলোচনা চালিয়ে আসছিল।

এসব বৈঠকে ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ২২ টাকা পর্যন্ত প্রতি ঘনমিটারে দাম নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। যদিও বাড়ানো হয়েছে আরও অনেক বেশি।

দাম কতটা বাড়ল
জ্বালানি বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী বড় শিল্পখাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

অন্যদিকে শিল্পগুলোর নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ৩০টাকা করা হয়েছে যা আগে ছিলো ১৬ টাকা।

আবার মাঝারি শিল্পে গ্যাসের দাম ছিলো ১১ টাকা ৭৮ পয়সা আর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ছিলো ১০ টাকা ৭৮ পয়সা। এখন উভয় খাতকেই ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করে দিতে হবে।

এছাড়া হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে ২৬ টাকা ৬৪ পয়সার জায়গায় সামনের মাস থেকে দিতে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা।

অর্থাৎ হোটেল-রেস্তোরাঁ ছাড়া প্রতিটি খাতেই দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার।

এর আগে সরকারের সাথে বৈঠকের সময় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) শিল্প গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে ২২ টাকা ৮৩ পয়সা করার প্রস্তাব করেছিলেন।

মূলত বাংলাদেশে শিল্প খাতের গ্যাসের সবচেয়ে বড় ব্যবহার হয় বস্ত্র কারখানাগুলোতেই।

এই বস্ত্র কারখানা মালিকদের সংগঠনই হলো বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন বা বিটিএমএ। সংগঠনটির সহ-সভাপতি ফজলুল হক বলছেন, এত উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনে তাদের পক্ষে কারখানা চালু রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা মর্মাহত। বিব্রত। এটা অসহনীয়। এভাবে দাম বাড়ানোর কারণে কারখানা চালানো নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সব ধরনের শিল্পেরই ক্ষতি হবে।’

হক বলেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষে এফবিসিসিআই সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটিকে বিবেচনায় নেয়নি।

এফবিসিসিআই অবশ্য সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। সংস্থাটির পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন এর মহাসচিব মাহফুজুল হক।

কিন্তু কেন এত দাম বাড়লো ও প্রভাব কেমন পড়বে
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেউ গ্যাসের দাম এতটা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয় থেকে জারি হয়েছে বলে তারাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারে। আর মন্ত্রণালয় বলেছে তারা সবকিছু বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে তাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিবে।

তবে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যে ধারণা পাওয়া গেছে সেটি হলো – সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে এটি তারই অংশ।

সরকার সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণ পাবে এটি নিশ্চিত হয়েছে আগেই। তবে এ সংক্রান্ত বৈঠকগুলোতে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো সহ আর্থিক সংস্কারের বিষয়টিই বারবার আলোচনায় এসেছে।

চলতি মাসের শেষ দিকেই আইএমএফের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ঋণ প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিক উত্থাপন হবে বলে আশা করছে সরকার।

গবেষক ও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, সরকারের বিকল্প সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকার মূলত আইএমএফের সাথে যে সমঝোতা করেছে- তার অংশ হিসেবেই ভর্তুকি কমাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘দ্বিগুণের বেশি দাম বাড়িয়েছে। এতে সরকারের কিছুটা সাশ্রয় হবে হয়তো। কিন্তু এতে করে গ্যাস সরবরাহের উন্নতি হবে না । কারণ এলএনজি আমদানির মতো যথেষ্ট পরিমাণ ডলার সংগ্রহের সুযোগ এখন কম।’

তবে এভাবে দাম বাড়ানোর কারণে গ্যাস ভিত্তিক শিল্পখাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে যার মধ্যে রয়েছে ইস্পাত শিল্প, বস্ত্র ও চা, সিরামিক ও গ্লাস কারখানা।

এর আগে গত ১২ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম গড়ে পাঁচ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com