দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বদলির সুযোগ পাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এ বিষয়ে নীতিমালা প্রস্তুততের জন্য আজ রোববার সভা আহ্বান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা বদলি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সম পদে বা সম স্কেলে পারস্পরিক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রস্তুত করা হবে। এ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে সভা ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজ রোববার সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে বিষয়টি জানিয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। যদিও এতদিন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা বদলির সুযোগ ছিল না। শিক্ষকরা দীর্ঘ দিন ধরে বদলিব্যবস্থা চালুর দাবি জানাচ্ছেন। ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালু করতে একটি নীতিমালার খসড়া করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি বা নীতিমালা আকারে জারি হয়নি। এবার এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের নীতিমালা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক অধি শাখার যুগ্ম সচিব জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএ’র সুপারিশকৃত এমপিও পদে কর্মরত শিক্ষক, প্রদর্শক ও প্রভাষকদের সম পদে ও সম স্কেলে পারস্পরিক পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রণীত খসড়া নীতিমালা চূড়ান্তকরণে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে আগামী ২২ অক্টোবর রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এ সভায় অংশ নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান, ঢাকার ডিসি-সহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে অংশ নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান এমপিও নীতিমালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির কোনো সুযোগ নেই। এর ফলে তারা দীর্ঘ দিন ধরে নিজ বাড়ি থেকে দূরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
অন্য দিকে এনটিআরসিএ’র একটি সূত্র নয়া দিগন্তকে জানায়, আগে কোনো শিক্ষক-কর্মচারীর নতুন এমপিও (বেতনভাতার সরকারি অংশ) পেতে গেলে অনলাইনে ফাইল প্রথমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ে যায়। নানা কারণে এসব ফাইল বিভিন্ন পর্যায়ে আটকে থাকে। এর ফলে সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন ছাড়াই চাকরি করেন। অথচ তারা এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে সুপারিশ পাওয়ার সময় একই ধরনের কাগজপত্র জমা দিয়ে থাকেন। এই শিক্ষকদের বর্তমানে পুলিশ ভেরিফিকেশনও করা হচ্ছে। ওই সূত্র আরো জানায়, এমপিওভুক্তির আবেদনে শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগও ওঠে। এতে শিক্ষকরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। শিক্ষকদের এসব ভোগান্তি কমাতে পৃথকভাবে এমপিওভুক্তির আবেদন বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ জন্য নতুন করে এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হবে। নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে এনটিআরসিএ’র সুপারিশের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সব ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এরপর তারা অটো এমপিওভুক্ত হবেন। পৃথকভাবে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে হবে না।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জানান, বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে আমরা অটোমেশন পদ্ধতি অবলম্বনের বিষয়ে একমত হয়েছি। এখন থেকে শিক্ষকদের পৃথকভাবে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে হবে না। এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে যারা সুপারিশ পাবেন তাদের অটো এমপিওভুক্ত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, যারা এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে সুপারিশ পান তারা সুপারিশ পাওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের কাগজপত্র জমা দেন। এই কাগজপত্র নতুন করে জমা দেয়ার কিছু নেই। শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধ করতে এখন থেকে এনটিআরসিএ’র সুপারিশের মাধ্যমেই শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন।