রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান এবং জামায়াত ইসলামীর নেতা মাহবুবুর রহমান মাহবুবকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে পায়রাবন্দ বাজারে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ একজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় সেখানে প্রবল উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
প্রাথমিক তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) তরিকুল ইসলাম জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পায়রাবন্দ বাজারে নিজের ওষুধের দোকান বন্ধ করে বের হন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মাহবুব। রাস্তায় উঠা মাত্রই রাস্তার পাশে থাকা মাছের দোকানের বটি নিয়ে পেছন দিক থেকে চেয়ারম্যানের ঘাড়ে পরপর তিনটি কোপ মারে এক ব্যক্তি। মুমুর্ষ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, আমরা প্রাথমিক যে সব তদন্ত পেয়েছি। সে অনুযায়ী একজনকে আটক করা হয়েছে। তার নাম হারুন অর রশিদ। তিনি ওই চেয়ারম্যানের দোকানের দক্ষিণে অবস্থিত মাছের দোকানদার কালামের ছোট ভাই। ওই দোকানে হারুণ মাছ কাটার কাজ করতেন। তাকে আমরা থানায় নিয়ে এসেছি। তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছি। উদ্ধার করা হয়েছে পুলিশ বটি ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পায়রাবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদের কাজ শেষে পায়রাবন্দ বাজারে ওষুধের ফার্মেসির ব্যবসা করতেন। তার দোকানের দক্ষিণ পাশেই হলো দমদমা-হুলাশু সড়ক। ওই সড়কের পাশেই মাছের ব্যবসা করতেন স্থানীয় আব্দুল হাকিম আলী নামের এক ব্যক্তি। চেয়ারম্যান রাস্তায় ওঠা মাত্রই ওই মাছের দোকানে থাকা কালামের ছোট ভাই হারুন বটি নিয়ে এসে পেছন দিক থেকে তিনটি কোপ মারেন। স্থানীয়রা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে নেয়া মাত্রই চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তাকে কোপানোর ঘটনায় শত শত মানুষ ছুটে আসেন পায়রাবন্দ বাজারে। স্থানীয়রা তাকে বাধা দিলে তাদেরকেও কোপ মারার হুমকি দেয় হারুন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাকে ধরে সামিয়া ট্রেডার্স এন্ড টেলিকম স্টোর নামের একটি দোকানে আটকে রাখে।
এদিকে চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তৈরি হয় উত্তেজনা। ঘটনার সাথে সাথেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে সেখানে বিপুল পরিমান অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত পায়রাবন্দ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা পুলিশকে বলেন, হারুন পাগল, তাকে ছেড়ে দেয়া হোক। আওয়ামী লীগ নেতার এই বক্তব্যে এলাকাবাসী আরো উত্তেজিত হয়ে পরে। তখন পুলিশ মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের শান্ত করেন। পুলিশ মাইকে বলেন, হত্যাকারীকে যথাযথ শাস্তি দেয়া হবে। আপনারা শান্ত থাকেন। পরে সেখানে উত্তেজনা কমে। রাত সোয়া ১১টায় পুলিশ ওই দোকান থেকে হারুনকে বের করে কড়া পুলিশি পাহারায় তাকে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে থানার উদ্দেশে রওনা দেন।
হারুন পাগল আওয়ামী লীগ নেতার এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অর্থ) তরিকুল ইসলাম জানান, ‘এ বিষয়ে এখনো আমরা কিছু বলতে পারছি না। কারণ তাকে আমরা নিয়ে গেছি। পরে কথাবার্তা বলে সে পাগল নাকি ভালো এ বিষয়ে এক্সপার্টের মতামত নিয়ে তখন বলতে পারবো। এই মুহূর্তে কোনো মতামত আমরা দিতে পারছি না।’
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, হারুন (৪০) পায়রাবন্দ ইউনিয়নের জোৎষষ্ঠি গ্রামের আজিম উদ্দিনের পুত্র। আগে সিলেটে রিকশা চালাতেন। তার একটি ৭/৮ বছর কন্যা কন্যা সন্তান আছে। বনিবনা না হওয়ায় বউ চলে যায়। বছর ছয়েক আগে হারুন সিলেট থেকে গ্রামে ফিরে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পাশাপাশি ভাই আব্দুল হাকিমের মাছের দোকানে মাছ কাটাকাটি করতেন। ঘটনায় সময় আব্দুল হাকিম আলী মাছ বিক্রির বাকি টাকা তোলার জন্য বাজারের বিভিন্নজনের কাছে গিয়েছিলেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর ফেসুবক পেজে পোস্ট দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এলোপাতারি কুপিয়ে হত্যা করেছে জামায়াত ইসলামী মনোনীত রংপুরের মিঠাপুকুর পায়রাবন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানকে।’
জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা তাদের ফেসবুক ওয়ালে পোস্টে জানিয়েছেন, মাহবুবুর রহমান রংপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলেন, বর্তমানে মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী। তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এ ঘটনায় পুরো উপজেলা জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুরো উপজেলা জুড়েই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করেছে পুলিশ।
চেয়ারম্যান মাহবুবের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাজারেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তার রাজনৈতিক সহকর্মী রফিকুল ইসলাম। তাকে বাড়িতে নেয়া হলে তিনিও রাত ১২টা ১০ মিনিটে মারা যান বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।