গ্লুকোমা চোখের এমন এক অবস্থা, যেখানে চোখের প্রেসার বা চাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। ফলে চোখের স্নায়ু বা রেটিনাল নার্ভ ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্ধত্ব ডেকে আনে। রক্তচাপের মতো চোখেরও চাপ আছে। এর নাম ইন্ট্রা অকুলার প্রেসার বা আইওপি।
গ্লুকোমার কারণ : সাধারণত পারিবারিক প্রভাব ও অনেক ক্ষেত্রেই এক ধরনের জিনের ত্রুটি বা মিউটেশন গ্লুকোমার জন্য দায়ী।
গ্লুকোমার রিস্ক ফেক্টর : রিস্ক ফেক্টর মানে সরাসরি কারণ না হলেও কিছু কিছু বিদ্যমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। মনে করা হয়, বিদ্যমান অবস্থার সঙ্গে রোগের পরোক্ষ সম্পর্ক থাকতে পারে। ফলে এগুলো পরিহার করে চললে রোগটি কমে যাবে। বিদ্যমান অবস্থার নামই রিস্ক ফেক্টর। গ্লুকোমার ক্ষেত্রে কিছু রিস্ক ফেক্টর, যেমন- চল্লিশোর্ধ্ব বয়স; পারিবারিক প্রভাব, গোত্র, বর্ণ ইত্যাদি; কিছু মেডিক্যাল কন্ডিশন, যেমন- ডায়াবেটিস, মায়োপিয়া বা দূরদৃষ্টির সমস্যা; স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার, জন্মনিরোধক বড়ি সেবন ইত্যাদি দায়ী।
বয়স্কের গ্লুকোমা : সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে পরিলক্ষিত হয়। প্রাথমিকভাবে গ্লুকোমা দুভাগে বিভক্ত- প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি হলো, চোখের অন্য কোনো অসুস্থতা ছাড়াই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। আর সেকেন্ডারি হলো, প্রাথমিক কোনো অসুস্থতার জটিলতা হিসেবে চোখের প্রেসার বেড়ে গ্লুকোমা দেখা দেওয়া। এ ছাড়া চোখের নিজস্ব গড়নের ওপর ভিত্তি করে গ্লুকোমা দুভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো, ওপেন এঙ্গেল গ্লুকোমা ও দ্বিতীয়টি হলো, ন্যারো এঙ্গেল গ্লুকোমা।
উপসর্গ : ওপেন এঙ্গেল গ্লুকোমার ক্ষেত্রে তেমন উপসর্গ থাকে না। প্রাথমিক অবস্থায় বড়জোর চোখ জ্বালাপোড়া বা পানি পড়ার মতো সমস্যা থাকে। শেষ ধাপে এসে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়। আমরা গ্লুকোমা বলতে এ উপসর্গহীন গ্লুকোমাই বোঝার চেষ্টা করি। ন্যারো এঙ্গেল গ্লুকোমার ক্ষেত্রে তীব্র উপসর্গ থাকে। যেমন- হঠাৎ কুয়াশার মতো বা রংধনু দেখা; চোখে প্রচণ্ড ব্যথা; চোখ লাল; চোখে পানি ঝরা; দৃষ্টি কমে যায়; মাথাব্যথা, অনেক সময় পেটব্যথা ও বমিভাব বা বমিও হতে পারে। ন্যারো এঙ্গেল গ্লুকোমার উপসর্গ সবসময় থাকে না। স্বাভাবিক সময় চোখের প্রেসার স্বাভাবিক থাকে। বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো সময় হঠাৎ চোখের প্রেসার বেড়ে যায়। চোখের প্রেসার বেড়ে যাওয়ার এ সময়টি প্রথম দিকে স্বল্পস্থায়ী হয়। একে বলে একিউট অ্যাটাক। বারবার অ্যাটাক হলে চোখের প্রেসার বৃদ্ধির বিষয়টি স্থায়ীরূপ লাভ করতে পারে।
প্রিসিপিটেটিং ফেক্টর : প্রিসিপিটেটিং ফেক্টর হলো পারিপার্শ্বিক এমন কিছু অবস্থা, যা উসকানি হিসেবে কাজ করে এবং জটিলতার সৃষ্টি করে। ন্যারো এঙ্গেল গ্লুকোমার ক্ষেত্রে এমন কিছু অবস্থা, যেমন- অন্ধকার রুমে টিভি দেখা; উপুর হয়ে শুয়ে পড়াশোনা বা স্ক্রিনে কাজ করা; চোখে মাইড্রিয়েটিক জাতীয় ড্রপ প্রয়োগ; ইমোশনাল স্ট্র্রেস; টপিরামেট জাতীয় ওষুধ সেবন একিউট অ্যাটাক ত্বরান্বিত করে।
রেটিনাল নার্ভ ফাইবার : রেটিনার স্নায়ু বা নার্ভ ফাইবার পরিমাপের পদ্ধতিকে বলা হয় ভিজ্যুয়াল ফিল্ড। পরিমাপের প্রত্যক্ষ বা সরাসরি পরিমাপটি হলো ওসিটি এবং অপ্রত্যক্ষ বা ইনডাইরেক্ট পদ্ধতি হলো ভিজ্যুয়াল ফিল্ড অ্যানালাইসিস। এতে কি পরিমাণ নার্ভ ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার আভাস পাওয়া যায়। চোখের উচ্চচাপ ও ক্ষতিগ্রস্ত নার্ভ- এ দুইয়ে মিলে বলে দেয় কারো গ্লুকোমা আছে, কি নেই। ন্যারো এঙ্গেল যাদের, তাদের কেবল এঙ্গেল ন্যারো এ ধারণা থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। গ্লুকোমার উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, এটি অন্ধত্বের কারণ। তাই গ্লুকোমা অবহেলা করা উচিত নয়।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন