সরকার পতনের পর সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছে দেশের বিরোধী মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপির এই প্রস্তাবকে সমর্থন করে প্রশংসা করেছে অনেক রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে গতকাল রোববার আলাপে তারা এই প্রস্তাবকে সমর্থন এবং প্রশংসা করেন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে দেয়া বক্তব্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে কি হবে তা নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন। আমাদের নেতা তারেক রহমান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন এই সরকারের পতন ঘটিয়ে রাজপথে আন্দোলন করা সব দলকে সাথে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তিনি বলেন, এই সরকারকে হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর আগামী নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে।
এ দিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বিএনপির এই আগাম প্রস্তাব দলটির প্রতি সহযোদ্ধা রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা বাড়বে। বিএনপি যে কার্যকর যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলে আসছে সেটা শক্তিশালী করার জন্যই বিএনপির এই প্রস্তাব। তারা বিএনপির এমন সিদ্ধান্তকে যুগোপযোগী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেও উল্লেখ করেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে কৌশল সফলতার দিকে এগোচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলডিপি সভাপতি কর্নেল ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের সাথে বিএনপির বৈঠকেই বলা হয়েছিল কোনো দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। এই সংসদ বাতিল ঘোষণা করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ আমরা যদি নির্বাচিত হই তবে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। বিএনপির এই সিদ্ধান্তের সাথে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের কোনো দ্বিমত নাই।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে দুটো ঘোষণা, একটি হলো তারা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, অপরটি হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তবে আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। বিএনপির এই দুটো ঘোষণার সাথে কল্যাণ পার্টি একমত। আমরা বিএনপির এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানাই।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এই সরকারকে কিভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা যায় আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ জোটগতভাবে অনেক দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করছি। আগামী ১৫ তারিখ বিএনপির সাথে আমাদের বৈঠক আছে। আমরা সেখানে সব বিষয়ে আলোচনা করব।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনের শক্তিশালী প্লাটফর্ম তৈরি করা। সেটা নিয়েই আমরা আগে ভাবছি। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হলে নির্বাচনের পরে আমরা সরকারের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করে নেবো।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকার গঠন করেছে এমন রেকর্ড এ দেশের ইতিহাসে নেই। এটা কেউ করবে বলে আমার মনে হয় না। তবে বিএনপি যদি সেটা করে তবে সেটা তাদের দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করবে। জনগণের প্রতি তাদের কমিটমেন্টের বহিঃপ্রকাশ হবে। সবাই সেটার প্রশংসা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ লেবারপার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, এটি বিএনপির একটি মহৎ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমি মনে করি এই সরকারের পতনে যুগপৎ আন্দোলন আরো বেশি শক্তিশালী হবে। আমি আরো মনে করি বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রমনা সব রাজনৈতিক দল সাধুবাদ জানাবে।
জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, বিএনপির এ সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। সবার অংশগ্রহণে একটি সরকার গঠন হলে সেটা জবাবদিহিতামূলক সরকার হয়।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, এটি একটি ভালো কাজ। বিএনপির শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। তবে আমি বলব, জাতীয় সরকারটি নির্বাচনের আগেও করা যেতে পারে। তাদের অধীনেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে।
বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের পতন আন্দোলন শক্তিশালী করতে নিঃসন্দেহে এটি বিএনপির ভালো সিদ্ধান্ত। যারা এই সরকারের পতনের জন্য মাঠে আছে তারা এতে আরো উৎসাহিত হবে। আমি মনে করি সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপির ভালো ডেভেলপমেন্ট হয়েছে।