হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত যানজটে আটকে থেকে ত্যক্তবিরক্ত। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আগে যাত্রাবাড়ী কাজলা পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান এবং চানখাঁরপুলগামী সড়কে টোল দিয়ে একটি গাড়ি পার হতে সর্বোচ্চ ১০-১৫ মিনিট সময় লাগত। এখন সেই পথ পাড়ি দিতেই লাগছে কমপক্ষে এক ঘণ্টা। কখনো সেটি দেড় ঘণ্টাও লেগে যাচ্ছে। এতে এক দিকে সময় যেমন বেশি লাগছে তেমনি অফিসগামী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এরমধ্যে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো যানজটে আটকে থাকায় অনেক স্বজন তাদের রোগী মুমূর্ষু রোগী নিয়ে মহাবিপদে পড়ছেন।
ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীরা বলছেন, যানজটের কারণে তারা নিচের পথ এড়িয়ে চলতেন। তা ছাড়া নিচের সড়কে রাস্তা ভাঙচোরা থাকে সবসময়। এক কথায় বেহাল। ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় মনে করেছিলেন তাদের যন্ত্রণার দিন শেষ হয়েছে; কিন্তু এখন ফ্লাইওভার ব্যবহার করেও সেই একই যন্ত্র না। ফ্লাইওভারের উপরেও যদি নিচের মতো পরিস্থিতি হয়, তাহলে কী কারণে তারা টোল (টাকা) দিয়ে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে যাবেন? এ ছাড়াও তাদের অভিযোগ, ফ্লাইওভারের ম্যানেজমেন্টের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের বেশির ভাগই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। এক প্রকার অনীহা কাজ করছে তাদের মধ্যে। যার কারণে প্রতিনিয়ত পুরো ফ্লাইওভারে উভয় প্রান্তে যানজট লেগেই থাকছে।
বেশ কয়েকদিন হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীদের সাথে আলাপ করে ও সরেজমিন খোজ খবর নিয়ে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। যদিও ফ্লাইওভার সংশ্লিষ্টরা নাম না প্রকাশ করে বলেছেন, তাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে, পাশাপাশি তাদের বেতন কম দেয়া হয়। তারপরও তারা চানখারপুল ও অমর একুশে হলের মোড়ের লাইন ক্লিয়ার রাখার জন্য সেখানে নির্দিষ্ট লোকের চেয়ে অতিরিক্ত জনবল দিয়ে রাস্তা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু কোনোভাবেই যানজট ক্লিয়ার রাখা যাচ্ছে না। কারণ গাড়ির চাপ বেশি।
তবে ভুক্তভোগী যাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলছেন, চানখাঁরপুল মোড়, অমর একুশে হল মোড় ব্যবহারকারী গাড়িগুলো এবং গুলিস্তান ফ্লাইওভার থেকে নামা মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন পুলিশ কর্তৃক যখন তখন আটকে রাখায় স্বাভাবিকভাবে গাড়িগুলো চলাচল করতে পারছে না। এর কারণেই যানজটের মাত্রা প্রতিনিয়ত তীব্র আকার ধারণ করছে। এমনিতেই এই রাস্তাগুলো সরু এবং স্পেস অনেক কম বলে তারা বলছেন। তার ওপর পুলিশের চেকপোস্টে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কাগজ তল্লাশি করার ফলে এই সড়কগুলোতে বেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে পরিবহন চালক ও যাত্রীরা মনে করছেন। তারা বলছেন, পুলিশ যদি এসব মোড়ে গাড়ি তল্লাশি না করে কিছুটা দূরের কোনো স্পেসে গিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন তাহলে যানজটের পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে।
মাতুয়াইলের বাসিন্দা ও উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ইমন আব্দুল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে ফ্লাইওভারে উঠলে সাথে সাথে চলে যেতাম চানখাঁরপুল হয়ে পলাশী মোড়ে। সেখান থেকে কলেজে। এখন হানিফ ফাইওভারে ওঠার পর র্যাব-৩-এর কার্যালয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেখছি যানজটে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি আটকে থাকছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এখন সেই যানজট যাত্রাবাড়ী টোল পার হওয়ার পরই দেখা যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে গাড়ির চাপ বাড়বে সে কথা জানাই ছিল। সেভাবেই হানিফ ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়ার কথা। যানজট এড়ানোর জন্যই তো বেশির ভাগ লোক টোল দিয়ে ফ্লাইওভার ব্যবহার করছে। যদি উপরেও একই অবস্থা হয় তাহলে নিচ দিয়েই চলাচল করব। গুলিস্তান এলাকার বাসিন্দা হৃদয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার কাছে সারাক্ষণ যানজট লাগার অন্যতম কারণ মনে হচ্ছে দুটো। এক ফ্লাইওভারে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা মোড়ে মোড়ে ঠিকভাবে ডিউটি করছেন না। অপর কারণটি হচ্ছে গুলিস্তান, চানখাঁরপুল মোড় ও অমর একুশে হলের সামনে সারাক্ষণ ট্রাফিক ও ট্রাফিক সার্জেন্টরা যখন তখন গাড়ি আটকাচ্ছেন। তাদের একের পর এক গাড়ি আটকানোর কারণে এই এলাকার গাড়ি চলাচলে অনেক সমস্যা হচ্ছে।
ঠিকানা পরিবহনের একজন চালক আক্ষেপ করে বলেন, পুলিশ যদি এই মোড়গুলোতে যানজট তল্লাশি কমিয়ে দেয় তাহলে আমরা অনেকটা স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালাতে পারি; কিন্তু কে শোনে কার কথা। তার পরামর্শ হচ্ছে অবৈধ যানবাহনে তল্লাশি হোক। তবে এই তল্লাশিটা অন্য কোনো স্থানে বর্তমানে করা গেলে অহেতুক ভোগান্তি থেকে হাজার হাজার মানুষ রক্ষা পাবেন। আমাদেরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে তেল পোড়ানোর দরকার পড়বে না।
চানখাঁরপুল মোড়ে দেখা যায় বেশির ভাগ সময় হানিফ ফ্লাইওভারের কর্মচারীরাই গাড়ির লাইন ক্লিয়ার করছেন। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টদের অধিকাংশ সময় তৎপর দেখা যায় গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশির কাজে ব্যস্ত থাকতে। যানজট যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন ট্রাফিক পুলিশদের সিগন্যালে তৎপর হতে দেখা যায়।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা নয়া দিগন্তকে বলেন, পুলিশ এই মোড়ে গাড়ি আটকানো বন্ধ করুক। কাল থেকে দেখবেন কোনো যানজট নেই। এই বিষয়টি অবশ্যই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। নতুবা এই রাস্তায় সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো খারাপই হবে। কারণ পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহারকারীদের চাপ বাড়ছে।