অন্য ভাষায় :
সোমবার, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
১৪ বছর পর ‘ভুলভুলাইয়া’র ছবিতে অক্ষয় কুমার ‘কিশোর গ্যাং নির্মূলে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়েছে র‌্যাব’ উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হারানোর পর থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ বিরোধী দল নিধনে এখনো বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে : মির্জা ফখরুল রাজশাহীর দুই জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার বন্ধ কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ, ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিছিন্ন গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করবেন তাই মেয়র পদ ছাড়লেন হারিছুর রহমান তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী গ্রেফতারের আতঙ্কে নেতানিয়াহু, প্রতিরোধের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রও

ইভিএম ইস্যু : বিতর্কের চোরাবালি!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২
  • ৭১ বার পঠিত

গত ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণায় ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা জানিয়েছে। এতে রাজনৈতিক দল ও সচেতন মহলে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচন জাতির সামনে বাংলাদেশে নির্বাচনের বাস্তব অবস্থা উন্মোচন করে দিয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে যেকোনো পদ্ধতির নির্বাচনে দুর্মুখদের বিরোধিতার কারণ আরো শক্ত ভিত্তি পেল।

কঠোর সমালোচনার পরও নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করার বক্তব্য সামনে নিয়ে এসেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। প্রথমে সরকারি দলের নেতারা ঘোষণা দিতে থাকলেন যে, আগামী নির্বাচনে শতভাগ আসনে ইভিএমে ভোট হবে। সরকারি দলের এসব ঘোষণার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বললেন, শতভাগ আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই, তবে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সেই মতে নির্বাচন কমিশন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় ডাকল। ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল আলোচনায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১০টি দল ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দেয়। ১২টি দল বিভিন্ন শর্তপূরণ সাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহার করতে বলে। দু’টি দল তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি। আর আলোচনার বাইরের ৯টি দল ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

সরকারি দল আওয়ামী লীগসহ মোট চারটি দল সবগুলো আসনেই ইভিএম ব্যবহারের দাবি জানায়। অর্থাৎ ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ১৯টি দলই সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী যেন একটা আছে।’ (প্রথম আলো, ২৪ আগস্ট ২০২২) অথচ পরবর্তীতে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করার সময় ইসি দাবি করে যে, ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে মতামত দিয়েছে। পরে প্রমাণ মিলল তার কথাটি সত্য নয়। জানা যায়, এই ১৭টি দলের তিনটি দল বিপক্ষে, একটি কোনো মতামত দেয়নি ও ৯টি দল বিভিন্ন শর্তের কথা বলেছিল। (প্রথম আলো, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২)

সিইসি অবশ্য যুক্তি দিয়েই বলেছেন, ভোটারদের কথা চিন্তা করেই ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, অথচ ভোটাররা দলগুলোরই প্রতিনিধিত্ব করে। দল বা প্রার্থী দেখেই ভোটাররা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়, কোনো মেশিন বা ভোটদানের পদ্ধতি দেখে তারা ভোট দেয় না। ধরে নিলাম ‘ইসি’ ইভিএমের পক্ষে চারটি দলের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ভোটারের কথা চিন্তা করে ইভিএমের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই যদি হয় তবে বাকি দলগুলোর ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ ভোটারের কথা কি ইসির বিবেচনা করার দরকার নেই? এমনকি মহাজোটের সর্ববৃহৎ অংশীদার জাতীয় পার্টিও ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছিল ইসির সংলাপে। তাহলে জনমনে প্রশ্ন জাগে, কার স্বার্থে ইসি এ ধরনের ইভিএম ব্যবহারের একতরফা সিদ্ধান্ত নিলো?

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সবাইকেই ইভিএম বিতর্কে আটকে ফেলার একটি কৌশল পরিকল্পনামাফিকই এগোচ্ছে! ক্ষমতাসীনদের ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর সিইসি বললেন, সক্ষমতা নেই, তবে সবার সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে। এরপর একজন নির্বাচন কমিশনার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন ইভিএমে ত্রটি দেখাতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার দেয়া হবে। স্বয়ং সিইসি ওই ঘোষণাকে অবান্তর বললেন। তার কয়েকদিন পর আরেকজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বুথের ভেতর থাকা ডাকাতই হলো মূল সমস্যা- যে নাকি ইভিএমের বাটনে চাপ দিয়ে দেয়। এই মন্তব্যের আলোচনা-সমালোচনা শেষ না হতেই ইসি দু’জন বিজ্ঞানী ড. জাফর ইকবাল ও ড. কায়কোবাদকে আনলেন। যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঘোষণা দেন, ইভিএমে কোনো সমস্যা নেই। এই প্রক্রিয়ায় ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সিইসিসহ অন্যান্য ইসিকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিতে শোনা যাচ্ছে। সিইসি বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ফায়সালা হলে ব্যালটে ভোট হবে। প্রশ্ন হলো- ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে? একজন নির্বাচন কমিশনার পুনরায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, কারচুপির প্রমাণ দিলে ইভিএমে ভোট বাতিল করে দেবো। কিন্তু অডিট ট্রেইলার ছাড়া তো ইভিএমের সফটওয়্যারের কারচুপি প্রমাণ সম্ভব নয়। আর অডিট ট্রেইলার তো ইভিএমে নেই। অর্থাৎ নির্বাচনে কোনো দলকে ‘হারিয়া প্রমাণ করিতে হইবে যে, ইভিএমে কারচুপি হইয়াছে!’

তবে ইভিএমের যারা বিরোধিতা করেন তারাও অন্তরে ইভিএম বিশ্বাস করেন বলে জানতে পেরেছেন একজন নির্বাচন কমিশনার! আরেকজন কমিশনার বললেন, ইভিএমে নির্বাচনী সহিংসতা হয় না। কথা সত্য, কিন্তু গাইবান্ধা-৫ আসনে সহিংসতা না হলেও ভোটের চিত্র আমরা কী দেখেছি! একজন কমিশনার বললেন, সাংবিধানিকভাবে ইসির কথা মানতে বাধ্য সরকার। গাইবান্ধায় এই বাধ্যবাধকতার ছিটেফোঁটাও কি দেখতে পেয়েছি আমরা? এদিকে সিইসি বলেছেন, ইভিএম বা ব্যালটের চেয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাই যদি হয় তাহলে ব্যালটেই তো নির্বাচন হতে পারে। কারণ, ইভিএমের নির্বাচনে তো বেশির ভাগ দলই অংশ না নেয়ার পক্ষে। আর আবহমানকাল থেকে ব্যালট পেপারে হতে থাকা নির্বাচনে ব্যালট পেপার ব্যবহারের বিষয়ে তো ভোটাররা কোনো প্রশ্ন তোলেনি।

এতসব বিতর্কের মধ্যে আরো একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। নতুন করে প্রায় দুই লাখ ইভিএম কিনতে হবে, যার জন্য খরচ হবে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। আর ইভিএমের প্রচারে ব্যয় হবে ২০৬ কোটি টাকা। যখন দেশে অর্থনৈতিক টানাপড়েন চলছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে সামনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন; সেখানে কেন এত অর্থ খরচ করে ইভিএমে নির্বাচন করা হবে। তা ছাড়া ২০১৮ সাল থেকে ক্রয় করা ইভিএমের ৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৮ হাজার মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা যায়। এর জন্য প্রকৃত দায়ীদের জবাবদিহি করা দরকার এবং কোন অবস্থায় তৎকালীন সময়ে ভারতের চেয়ে প্রায় ১১ গুণ বেশি দামে প্রতিটি ইভিএম ক্রয় করা হয়েছিল সেটিও জানা দরকার।

ঘোষণাকৃত ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের তাৎপর্য বেশ অর্থবহ। ২০১৪ সালে অন্য একটি দেশের একজন সরকারি কর্মকর্তার সহায়তায় জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে এনে দেড় শতাধিক আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে অভিযোগ মতে, আগের রাতে ব্যালটবাক্স পূর্ণ করে বিপুল বিজয় এসেছিল। এর সাক্ষী দিয়েছিলেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কাস পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও সম্প্রতি ইসির সংলাপে একই ধরনের রাতের ভোটের কথা বলে এসেছেন। কাজেই গত পরপর দু’টি নির্বাচনে জয়লাভের কৌশল সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে পড়েছে। তবে এবার কৌশল করার জন্য একমাত্র ইভিএমই ভরসা! অন্য দিকে সমালোচকরা মনে করে- ’১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের এরকম ৩০০টির মধ্যে ২৯৪টি আসনেই ভ‚মিধস জয়ের পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু তৃণমূলের অসহযোগিতার কারণে বা ছাড় না দেয়ার জেদের কারণে এমন অবিশ্বাস্য ধরনের বিজয় সংঘটিত হয়েছিল। তাই এবার বোধ হয় দলের হাইকমান্ড সেই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। ইভিএমে নির্বাচন করে ১৫০টির মধ্যে ১৪০ থেকে ১৪৫টি আসন নিতে পারলে বাকি হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়ে আরো ১৫-২০টি আসন ব্যালটের সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সহজেই পাওয়া সম্ভব হবে। ফলে একদিকে যেমন সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা হয়ে যাবে, অন্য দিকে ২০১৮ সালের মতো প্রায় সব আসনে জয়লাভের মতো অভিশ্বাস্য রকম সত্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

এই প্রক্রিয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ইচ্ছা করলেই দলীয় হাইকমান্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত জয় ছিনিয়ে নিতে না পারার মতো একটি নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এতে সব দল যোগদান করবে এবং মেনে নেয়ার মতো পরাজয় বরণ করবে। এখানে ইভিএমই হলো ট্রাম্পকার্ড। কারণ এটি তো মেশিন। মিশিন তো নিষ্কলুষ। আসল তো হলো মেশিনের পেছনের কর্তারা, যারা মেশিনটি চালাবেন। তথ্য মতে, পৃথিবীতে ১৭৮টি দেশের মধ্যে মাত্র ১৩টি দেশ ইভিএম পদ্ধতি গ্রহণ করেছে এবং এর সাথে ভিভিপিএটি বা ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল সংযুক্ত করেছে যেন ভোটদানের প্রকৃত অবস্থা যাচাই করা সম্ভবপর হয়।

এতসব ইভিএম বিতর্কের মধ্যেই গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচন আরো একটি নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। অনিয়মের কারণে নির্বাচন স্থগিত করে দিয়ে ইসি বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সাহসিকতম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এতদিন ইভিএম বিতর্ক নিয়ে আস্থাহীনতার খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া ইসির কি এই একটি মাত্র পদক্ষেপে শেষ রক্ষা হবে? কারণ, পদক্ষেপটি যতই ইতিবাচক হোক না কেন তা ছিল অপূর্ণাঙ্গ। সিসিক্যামেরায় ইসি স্পষ্ট সব অনিয়ম দেখতে পেয়েছে বলে দাবি করেছে। তাহলে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সমস্যা কোথায়? সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার পদক্ষেপ কি নেয়া সম্ভব হবে? আসলে সিইসি নির্বাচন বাতিলের যেসব কারণ বর্ণনা করেছেন এগুলো এতদিন ছিল পাবলিক পারসেপশন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের নির্বাচনেই এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এখন সেই অভিযোগগুলোর আয়না ইসি দেখল ও দেশবাসী শুনল। এটিই আসলে আমাদের বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থার স্বাভাবিক চিত্র বলে সমালোচকরা মনে করেন।

বিরোধীরা এই সময়ে সিসিটিভি ব্যবহার করে এই স্বাভাবিক চিত্রটি উন্মোচন করাকে সন্দেহের চোখে দেখতে চাচ্ছে। সিসিটিভির মাধ্যমে ইভিএমে নির্বাচন পুরো নিরাপদ প্রমাণ করার প্রয়াস নয় তো? আবার কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে এটিকে সাজানো নাটক বা পাতানো খেলা বলতে চান! নির্বাচন স্থগিতের পরপরই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরূপ মন্তব্য; গাইবান্ধার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সিইসিবিরোধী মিছিল ও সিইসির সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা ব্যাখ্যা ইত্যাদি জনমনে সন্দেহ বরং বাড়িয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

যে যাই বলুক, ইসির পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার। তবে প্রশ্ন হলো- একটি আসনে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ৩০০ আসনের বেলায় কি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে? রাষ্ট্রযন্ত্রের নীরবতা বা অপারগতা যে ডাকাতদের ভোটডাকাতির সুযোগ করে দিলো সেই ডাকাতরা কি ২০২৪ সালের নির্বাচনে থাকবে না? তাদেরকে প্রতিহত করতে হলে তো ডাকাত তাড়াতে ইচ্ছুক ও সক্রিয় রাষ্ট্রযন্ত্র লাগবে। কাজেই ইভিএম বিতর্কের চোরাবালিতে আটকে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন কি সম্ভব? ইভিএমের পেছনের কর্তারা কি সবার আস্থা অর্জন করতে পারবেন? অন্যদিকে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় তৃণমূল যেভাবে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে তাতে কোনো নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই ডাকাতবিহীন ভোট করা সম্ভব নাও হতে পারে। এই নিয়ন্ত্রণহীনতা শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয়; বরং রাষ্ট্রযন্ত্রেও তা দৃশ্যমান। গাইবান্ধা-৫ আসনে নির্বাচনে তাই ইসিকেই সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে, যদিও সেখানে তৃণমূলের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই দায়িত্ব পালন করছিল। এমনকি সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসাররা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলে সনদে স্বাক্ষরও করেছেন এবং এতে কোনো কোনো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতাও ছিল বলে জানা যায় (ডেইলি স্টার, ১৬ অক্টোবর ২০২২)

অবশ্য এই জবাবদিহিহীনতার ড্রেস রিহার্সাল ঘটে গেছে গত কয়েকদিন আগে ৬১ জেলার ডিসি-এসপিদের সাথে ইসির মতবিনিময় সভায়। উপস্থিত ডিসি-এসপিরা একজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে একমত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কমিশনারকে বক্তব্য থামিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করতে হয়েছিল। বাংলাদেশের ‘ইসি’-এর ইতিহাসে এত বড় বিব্রতকর অভিজ্ঞতার কথা আমাদের জানা নেই। যারা সরাসরিই একজন ইসির উপদেশ শুনতে রাজি নন তারা কিভাবে দূর থেকে ইসির আদেশ-নিষেধ পালন করবেন? এই তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ দিয়ে কি ভালো নির্বাচন করা সম্ভব? বাস্তবতা হলো- এই ডিসি-এসপিরাই ইসির অধীনে ২০২৪ সালের নির্বাচনের মূল কাজগুলো মাঠপর্যায়ে সম্পন্ন করবেন। কাজেই ইভিএম নিয়ে অযথা বিতর্ক না করে বরং কিভাবে একটি ভালো নির্বাচন করা সম্ভব তা নিয়েই বিতর্কটা হওয়া উচিত। তবে সিসিটিভি দিয়ে ইভিএম বিতর্কের অবসান ঘটানোর চেষ্টা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! ইতোমধ্যেই একজন নির্বাচন কমিশনার আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের চার লাখ বুথে সিসিক্যামেরা স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com