মানবিক করিডোর তৈরি করার নামে শরণার্থীদের বেলারুশ অথবা রাশিয়ায় নিয়ে যেতে ক্রেমলিনের দেয়া প্রস্তাবকে ‘পুরোপুরি অনৈতিক’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে ইউক্রেন।
সোমবার ইউক্রেনে হামলার ১২তম দিনে চারটি শহরে সাময়িক অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া। এসব শহরে মানবিক করিডোর চালু করারও কথা বলা হয়েছে। তবে, বেসামরিক বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে যে কয়েকটি মানবিক করিডোরের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া, সেগুলো বেলারুশ অথবা রাশিয়ার দিকে গেছে বলে জানা গেছে।
রুশ বলছে, কিয়েভের বাসিন্দাদের করিডোর হবে বেলারুশের দিকে। আর খারকিভের বাসিন্দারা এতে পারবেন শুধুমাত্র রাশিয়ার দিকে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেনের বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়েই যাতায়াত করার সুযোগ থাকা উচিত। মানবিক করিডোর নিয়ে এমন টানাহেঁচড়ার মধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় রুশ সেনারা আবারও ভারি গোলাবর্ষণ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম।
এদিকে, রাজধানী কিয়েভে রাশিয়া সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা। এছাড়া, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, রুশ সৈন্যদের হটিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় শহর চাউহিউভ পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তাদের বাহিনী।
রাজধানী কিয়েভ থেকে মাত্র ২১ কিলোমিটার দুরে আছে রুশ সেনারা। হামলার মাত্রা বেড়েছে রাজধানীর ঠিক পাশের শহর ইরপিনে। পূর্ব ও দক্ষিণ দিকের ইরপেন এবং বিলা সের্কভায় চলছে তীব্র লড়াই। ইরপেনে এক মা তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে শহর ছেড়ে পালানোর সময় মর্টারের গোলার আঘাতে মারা গেছেন।
উত্তর আর পশ্চিমের চেরনিহিভ, কনোটভ এবং সুমি থেকেও রাজধানীর দিকে এগোচ্ছে রুশ সেনারা। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কিয়েভকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরা। ইউক্রেন সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ জানিয়েছেন, কিয়েভে হামলার জন্য রুশ সেনাবাহিনী উপকরণ জড়ো করতে শুরু করেছে। পদাতিক ইউনিটগুলো ইরপেনের দিকে এগোচ্ছে।
কিয়েভের উত্তরপশ্চিম দিকের তিনটি শহর বুচা, হোস্টোমেল এবং ইরপিনে অব্যাহতভাবে রুশ বোমাবর্ষণ চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতাও বাড়ছে।
নতুন করে রুশ হামলার মাত্রা বেড়েছে বন্দর নগরী মাইকোলাইভেও। স্থানীয় একটি বিমানবন্দর দখলে নিয়েছে রুশ সেনারা।রাশিয়ার কমান্ডাররা বেলারুশ থেকে চেরনোবিলের এক্সক্লুজন জোনের ভেতর দিয়ে তাদের বাহিনীকে জ্বালানি সরবরাহ করছে বলেও জানা গেছে।
এখন আর শুধু সামরিক স্থাপনা নয়, ইউক্রেনের হাসপাতাল, নার্সারি এবং স্কুলসহ বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনারা।
এমন অভিযোগ তুলেছেন ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা। তিনি দাবি করেন ইউক্রেনের প্রবল প্রতিরোধের মুখে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। এদিকে রাজধানী কিয়েভ ও বন্দরনগরী মারিওপোলসহ খারকিভ ও সুমিতে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। বেসামরিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাবার সুযোগ দিতেই এই সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার সৈন্যদের হটিয়ে তাদের বাহিনী পুনরায় চাউহিউভের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যুদ্ধে রুশদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও তারা দাবি করেছে। সেই সময় লড়াইয়ে রাশিয়ার দুইজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। চাউহিউভ শহরে ৩১ হাজার মানুষ বসবাস করে।
আর যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের বিশ্বাস গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার সৈন্যরা খুবই কম এগোতে পেরেছে। প্রবল প্রতিরোধে পিছু হটেছে।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা