অন্য ভাষায় :
শনিবার, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

বোমা ফেলে থামানোর চেষ্টা বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোত!

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৭৬ বার পঠিত

৩৮ বছর পর আবার জেগে উঠেছে মাউনা লোয়া। এটিই বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। জেগে ওঠার পর থেকেই প্রতিনিয়ত লাভা উদ্গীরণ করে চলেছে মাউনা লোয়া। আর তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসন। প্রশাসনের আশঙ্কা ছিল, লাভাপ্রবাহ বন্ধ না হলে জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তবে ইতিহাসে এই জীবন্ত আগ্নেয়গিরির লাভাপ্রবাহ বন্ধ করতে বিভিন্ন অভিনব পন্থা প্রয়োগ করা হয়েছে।

প্রশাসনের তরফে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, টিএনটি (ট্রাই নাইট্রো টলুইন) বিস্ফোরক দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বন্ধ করা হবে গরম লাভার প্রবাহ। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, উপর থেকে আগ্নেয়গিরি গহ্বরে সরাসরি ওই বিস্ফোরকগুলো ফেলা হবে। বিস্ফোরণও হবে লাভা বেরোনো ওই গর্ততেই।

১৮৮১ সালে মাউনা লোয়ার লাভা উদ্গিরণে অতিষ্ঠ হয়ে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছিল, স্থানীয়রা যদি রোজ স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেন, তা হলে শান্ত হবে আগ্নেয়গিরি।

এর ৫০ বছর পরই একেবারে বদলে যায় পরিস্থিতি। আগ্নেয়গিরি শান্ত করতে প্রার্থনা থেকে সরাসরি বিস্ফোরক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

‘হাওয়াইয়ান ভলক্যানো অবজ়ারভেটরি’র প্রতিষ্ঠাতা টমাস এ. জ্যাগারের অনুরোধে আমেরিকার বায়ুসেনা আকাশ থেকে একের পর বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল জর্জ এস প্যাটন নির্দেশ দেন ২৭২ কেজির ২০টি বোমা ফেলার।

প্রতিটি বোমায় ভরা হয়েছিল ১৬১ কেজির টিএনটি। এ ছাড়াও প্রতিটি বোমায় আলাদা আলাদা করে ২০টি করে ছোট বোমা ভরা হয়েছিল। ছিল বারুদে ঠাসা কয়েকটি প্যাকেট।

প্যাটনের নির্দেশে ১৯৩৫-এর ২৭ ডিসেম্বর এই বোমাগুলো বিমান থেকে আগ্নেয়গিরির মুখে ফেলা হয়েছিল।

মনে করা হয়, এই প্রক্রিয়া কাজ করেছিল। কারণ ৫ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়েছিল লাভাপ্রবাহ। ১৯৩৬ সালের ২ জানুয়ারি মাউনা লোয়া থেকে লাভা বেরোনো বন্ধ হয়ে যায়।

যদিও এই বিস্ফোরণের কারণেই লাভাপ্রবাহ বন্ধ হয়েছিল কি না, তার কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি ছিল না।

ভূতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড স্টার্নস ১৯৮৩ সালে তার আত্মজীবনীতে দাবি করেছিলেন, বিস্ফোরক ফেলার পর পরই লাভাপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার ঘটনা নিছকই কাকতালীয় ছিল।

সম্প্রতি মাউনা লোয়া থেকে লাভা উদ্গিরণের পর প্রাচীর দিয়ে সেই লাভা রোখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। অনেকেই বলছেন, এই উপায়ের থেকে ঢের ভালো ছিল ১৯৩৫-এর ওই বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত।

মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরি হাওয়াই দ্বীপের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে। ১৮৪৩ সাল থেকে এই আগ্নেয়গিরি এখন পর্যন্ত মোট ৩৩ বার জেগে উঠেছে।

আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৪৩-এর আগে মাউনা লোয়ার অগ্ন্যুৎপাতের কোনো নথি সরকারের কাছে ছিল না।

১৯৮৪ সালে শেষ বার মাউনা লোয়ায় অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। এর পর দীর্ঘ ৩৮ বছর শান্তই থেকেছে মাউনা লোয়া। ১৮৪৩-এর পর থেকে এত দীর্ঘ ব্যবধানে কখনো শান্ত থাকতে দেখা যায়নি এই আগ্নেয়গিরিকে।

ভূতত্ত্ব বিভাগের দাবি, মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরি অস্থিরতার উচ্চ সীমায় রয়েছে। গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় ভূমিকম্পের হার বৃদ্ধিকেই এর কারণ হিসাবে দেখছেন ভূতত্ত্ববিদরা।

চলতি বছরের জুনে ৫ থেকে ১০ বার এই অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছিল। জুলাই এবং অগস্ট মাসে ভূমিকম্পের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০।

সম্প্রতি শুরু হওয়া অগ্ন্যুৎপাতের কারণে আগ্নেয়গিরির এক পাশ থেকে বইতে শুরু করেছে লাভাপ্রবাহ। তবে এই লাভার প্রভাবে হাওয়াই জাতীয় উদ্যানের বসতির উপর পড়বে না বলেও আমেরিকার ভূতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন। তবে আপাতত পর্যটকদের জন্য বন্ধই রাখা হচ্ছে জাতীয় উদ্যানের দরজা। পাহাড়ে ট্রেকিং করতে যাওয়ার ওপরেও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

আমেরিকার ভূতত্ত্ব বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বেরোনো লাভা প্রধানত উত্তর-পূর্বের এলাকাগুলিকে প্রভাবিত করবে। কিন্তু উত্তর-পূর্বে আগ্নেয়গিরির কাছে পিঠে বসতি না থাকায় সে রকম কোনো চিন্তার কারণ নেই। তবে, আগ্নেয়গিরির গ্যাস এবং সূক্ষ্ম ছাই হাওয়ার কারণে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।

লাভার ফলে সৃষ্ট ছাইয়ে চোখ এবং ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে বলেও স্থানীয় হাওয়া অফিস জানিয়েছে। শ্বাসকষ্ট রয়েছে এমন মানুষেরা যাতে বাড়ির বাইরে না বেরোন, সে বিষয়েও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাইরে বেরোলেও মাস্ক বা কাপড় দিয়ে মুখ এবং নাক ঢেকে বাইরে যাওয়া আবশ্যিক বলেও জানানো হয়েছে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com