অন্য ভাষায় :
শনিবার, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

বিশৃঙ্খলা রোধে আসছে অভিন্ন নীতিমালা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২
  • ১১০ বার পঠিত

দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। পাশাপাশি তাদের বেতন-ভাতা প্রদানেও মানা হচ্ছে না সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি।

অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম-দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষকের চেয়েও কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্রেফ স্নাতক পাশ কর্মকর্তা বেশি বেতন পাচ্ছেন।

আবার কর্মচারী পদে নিয়োগের পর পদোন্নতি আর আপগ্রেডেশনের নামে অতিরিক্ত সচিব বা দ্বিতীয় গ্রেডের বেতনভোগী কর্মকর্তায় পরিণত হচ্ছেন কেউ। আবার ড্রাইভারকে পদোন্নতি দিয়েও বড় কর্মকর্তা বানানো হচ্ছে। এছাড়া নিয়োগে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মনীতি। বিজ্ঞাপন ছাড়াই কেবল ফাইল নোটে নিয়োগের ঘটনা অনেক।

এদিকে নিয়োগ-পদোন্নতি আর বেতন-ভাতা প্রদানে বিরাজমান এই বিশৃঙ্খলা বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-পদোন্নতি অভিন্ন নীতিমালা-২০২২।’ এটি প্রায় চূড়ান্তের পথে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্থাটির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ যুগান্তরকে বলেন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এই নিয়োগ নীতিমালাটি মূলত করবে সরকার। ইউজিসি এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া তৈরি করে দিচ্ছে। যেহেতু এতে আর্থিক সংশ্লেষ আছে, তাই যথাযথ মন্ত্রণালয়গুলোতে যাচাই-বাছাই শেষে তা জারি করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বশাসিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি এবং আর্থিক নীতিমালা নিজেরাই তৈরি করে থাকে। আর এই সুযোগটিই নিয়ে থাকেন দুর্নীতিবাজ উপাচার্যসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ইউজিসি যে তদন্ত করে থাকে, তার বড় অংশজুড়েই থাকে এই বিষয়টি।

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগও উঠছে। সর্বশেষ ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগসহ আরও কিছু বিষয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

ওই তদন্ত দলের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সব নিয়োগই ত্রুটিপূর্ণ। এতে ভয়াবহ অনিয়ম হয়েছে। এজন্য কমিটি প্রায় সব নিয়োগই বাতিলের সুপারিশ করেছে।

বর্তমানে বেশ কয়েকটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার এমন একটি প্রতিষ্ঠানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ওইসব দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্প অফিস আছে ঢাকার ধানমন্ডিতে। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোথাও বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে আবার কোথাও নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হলেও ফল পালটে দেওয়া কিংবা পরীক্ষার নামে প্রহসনের অভিযোগ আছে।

ঢাকার সোবহানবাগে অবস্থিত আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগেও এমন অভিযোগ পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।

ইউজিসির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে যুগান্তরকে বলেন, কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের নামে চরম স্বেচ্ছাচারী ঘটনার অভিযোগ এসেছে। যা তদন্তে আছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে-দুটিতে সন্তান নিয়োগে নীতিমালা শিথিল করা হয়। নিয়োগ শেষ হলে আবার আগের জায়গায় নীতিমালা নিয়ে যাওয়া হয়। আরেকটিতে তুঘলকি কায়দায় ছেলেকে নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। প্রশাসনের সব কর্তাব্যক্তিও তা জানতেন না। এরপর যখন বেতন দেওয়ার সময় হয়, তখন কেউ কেউ জানতে পারেন যে, কয়েকজন নিয়োগ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ইচ্ছেমতো তাদের সন্তান, আত্মীয়স্বজন বা অনিয়ম করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া কমে যাবে। যোগ্যতা না থাকলে নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ-সুবিধা অভিন্ন থাকবে। কোথাও ভিন্ন রাখা যাবে না।

ইউজিসি সূত্র জানায়, কেবল নতুন নয়, পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়োগে এমন নানান অভিযোগ আছে। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় গ্রেড পর্যন্ত দেওয়ার অভিযোগ আছে। নিয়োগে এমন সব অভিযোগের কারণেই নিয়ন্ত্রণ আনার লক্ষ্যে এই নীতিমালা করা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অর্গানোগ্রাম’ থাকতে হবে। এরপর সেটি অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢালাওভাবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। একটি বিভাগের জন্য একজন কর্মকর্তা, দুজন অফিস সহায়ক ও কম্পিউটার অপারেটর থাকবে। একইভাবে রেজিস্ট্রার বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কিংবা অন্য দপ্তরে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম চার বছরের স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রি। কেননা একজন শিক্ষক প্রভাষক পদে নিয়োগের পর নবম গ্রেডে বেতন পান। আর একজন কর্মকর্তা যদি কেবল স্নাতক পাশে নিয়োগ পেয়ে নবম গ্রেড পান তা হলে তা বৈষম্যের সৃষ্টি করে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সেকশন অফিসার পদটি রাখা হবে না। এর পরিবর্তে থাকবে সহকারী রেজিস্ট্রার পদ। বর্তমানে সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার পদ নেই। এটি সৃষ্টি করা হবে। কেউ এই পদে সরাসরি নিয়োগ পেলে তিনি ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন পাবেন। আর পদোন্নতি পেলে দেওয়া হবে সপ্তম গ্রেড। এভাবে উপরেজিস্ট্রার, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার এবং রেজিস্ট্রার পদ থাকবে। এর মধ্যে দ্বিতীয় পদটি নতুন সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর সহকারী পরিচালক থেকে পরিচালক পর্যন্ত পদবিন্যাসের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসৃত হবে। পাশাপাশি কোন পদের জন্য কী ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে, তাও নীতিমালায় উল্লেখ করা হচ্ছে। শিক্ষকদের মতোই কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা থাকবে নীতিমালায়।

পাশাপাশি নীতিমালায় বেতনের গ্রেড পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা গুরুত্ব পাবে। এ ক্ষেত্রে কোন গ্রেডে যেতে কত বছর অভিজ্ঞতা লাগবে সেটিও উল্লেখ থাকছে। তবে একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৩য় গ্রেড পর্যন্ত যেতে পারবেন। এর ওপরে আর আপগ্রেডেশন করা যাবে না। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে দ্বিতীয় গ্রেড পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে।

কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ যুগান্তরকে বলেন, নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের নীতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে শ্রেণির পরিবর্তে গ্রেড প্রবর্তন করা হয়েছে। অভিন্ন নীতিমালায়ও এটি গুরুত্ব পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ আন্দোলন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা আদায় করার ইস্যুতে হতে দেখেছি আমরা। মূলত এ বিষয়ে কোনো ধরনের গাইডলাইন না থাকার কারণেই এভাবে ভিন্ন ভিন্ন সুবিধ দেওয়া হয়ে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘এতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়, এই দৃষ্টান্ত হিসাবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়াচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শিক্ষক-কর্মকর্তার মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি। অনেক যোগ্যতা নিয়েও সমান সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষকরা। এছাড়া সরকারি অফিসেও এ নিয়ে আরেক ধরনের হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়। প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তবে ২০২০ সালের ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৭ কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com