অন্য ভাষায় :
শুক্রবার, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বছরের পর বছর কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডের আসামিরা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২
  • ৭৫ বার পঠিত

নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের মামলার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বছরের পর বছর কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি বছরই বাড়ছে ডেথ রেফারেন্স মামলার সংখ্যা। দেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে দুই সহ¯্রাধিক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে। অন্য দিকে উচ্চ আদালতে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সম্প্রতি ১৫ বছর ধরে কনডেম সেলে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ইসমাঈল হোসেন বাবু ও সোনারুদ্দিকে খালাস দেন আপিল বিভাগ। এটিকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করেন আইনবিদরা।

তাদের মতে, বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন পর অনেকেই খালাস পান। অতঃপর তারা আর সমাজে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে না। ফলে মানবিক সঙ্কটের তৈরি হয়। আসামিরা যাতে দীর্ঘদিন কনডেম সেলে না থাকতে হয় সেজন্য এসব মামলার দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তি চান আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা। তবে উচ্চ আদালতের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও হাইকোর্টে এখন ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানির প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে ভ্যাকেশন চলছে। বন্ধের আগে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানির জন্য চারটি বেঞ্চ ছিল।

হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স সেকশনে খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে হাইকোর্টে ২০১৬ সালের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। আর ২০১৭ সালের পেপার বুক প্রস্তুত চলছে। আলোচিত মামলার মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, হোলে আর্টিজান মামলাসহ আলোচিত বেশ কিছু মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য পেপার বুক তৈরি হয়েছে।
আর বাংলাদেশ কারা অধিদফতরের গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর দেয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে এক হাজার ৯৮৭ জন। আর দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত কয়েদিদের জন্য ব্যবহার্য কনডেম সেল রয়েছে দুই হাজার ৫৯৯টি।

হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স সেকশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে নিম্ন আদালত থেকে ১১৪টি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। আগের বছরগুলোর অনিষ্পন্ন ডেথ রেফারেন্স ছিল ৩৬৩টি। সব মিলিয়ে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল ৪৭৭টি। ওই বছর নিষ্পত্তি হয় ৫৮টি। অনিষ্পন্ন ছিল ৪১৯টি। ২০১৬ সালে ১৬১টি, ২০১৭ সালে ১৭১টি, ২০১৮ সালে ১৫৪টি, ২০১৯ সালে ১৬৪টি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এই চার বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৯৪টি। ডেথ রেফারেন্স সেকশনের কর্মকর্তারা জানান বর্তমানে প্রায় ৮ শতাধিক ডেথ রেফারেন্স মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

আর বর্তমানে হাইকোর্টে ২০১৬ সালের ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হচ্ছে। এ হিসেবে চলতি বছর যেসব আসামি নি¤œ আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হচ্ছেন, তাদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি ২০২৬ সালের আগে হওয়ার সম্ভাবনা কম। এতে একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে হাইকোর্টে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বছরের পর বছর কনডেম সেলে থাকতে হচ্ছে। আর হাইকোর্ট যদি কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন, তাহলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ বছর কনডেম সেলে থাকতে হচ্ছে তাকে। অনেক আসামি খালাস পেয়ে থাকেন। ফলে এসব ক্ষেত্রে আসামিও ন্যায়বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক তৈরি হলে মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির জন্য ‘তৈরি’ মর্মে ধরে নেয়া হয়। পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পর ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিরা যদি আপিল করে থাকেন তা শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসাথে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকারবলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল দায়ের করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ওই ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দী রাখা হয়। দেশের কারাগারগুলোতে প্রায় দুই হাজার ফাঁসির আসামি কনডেম সেলে বন্দী আছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ১৫ বছর ধরে কনডেম সেলে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে সুপ্রিম কোর্ট খালাস দিয়েছেন। দীর্ঘদিন কনডেম সেলে থাকা, এটা তো অমানবিক। তিনি বলেন, ডেথ রেফারেন্স শুনানির দীর্ঘসূত্রতার এক নম্বর কারণ পেপারবুক তৈরি। নি¤œ আদালত কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে সেই রায় সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আসে।

এরপর পেপারবুক তৈরি হয়। হাইকোর্টের রুলসে বলা আছে পেপারবুক তৈরি করবে বিজি প্রেস। কিন্তু বিজি প্রেসে অন্যান্য কাজ করে এটা করে থাকে। সে জন্য দেরি হয়ে থাকে। পেপারবুক তৈরি করতে আলাদা প্রেসের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট করি। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুল এখন চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি বলেন, আদালত নির্দেশনা দিলে বিষয়টি সুরাহা হতে পারে। তরে আদালতের নির্দেশনার আগে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন পর অনেকেই খালাস পান। অতঃপর তারা আর সমাজে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারেন না। ফলে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com