শনিবার, ০৪:১৭ অপরাহ্ন, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
রাষ্ট্র মেড়ামত করতে গেলে প্রথমেই শেখ হাসিনার মত আবর্জনাকে ফেলে দিতে হয়-এম. জহির উদ্দিন স্বপন ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ নিজ্জর খুনে ‘জড়িত’ ভারতীয় কর্মকর্তাদের জবাব দিতে হবে : কানাডা ইমিগ্রেশনে আটকে দেয়ার নিয়ে যা বললেন আজহারী রাজধানীতে সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি টার্গেট নতুন বিশ্বব্যবস্থা : পুতিন-পেজেশকিয়ান গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা নিকারাগুয়ার পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাথে ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনা কালেমাখচিত কালো পতাকা মিছিলের নেপথ্যে কারা ডিমের দাম বাড়ার জন্য গণমাধ্যম দায়ী: উপদেষ্টা

চিন্তাশীলতা উত্তম ইবাদত

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৯৮ বার পঠিত

মানুষ চিন্তা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলা মানুষকে সৃষ্টির মধ্যে বিবেচনা, চিন্তাশীলতা ও গবেষণার মতো শ্রেষ্ঠ গুণের সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীলতা, সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা মানবজাতিকে সব প্রাণীর ্েরচয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছে। মানুষের বাকশক্তির সঠিক প্রয়োগ, চিত্তাকর্ষক কল্যাণমুখী বক্তব্য, বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনা, কার্যকর গবেষণার পেছনেই চিন্তাশীলতাই মুখ্য। চিন্তাবিদদের চিন্তা অমূল্য সম্পদ। তারা তাদের চিন্তার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণাপূর্বক জনকল্যাণে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

চিন্তাশীলতা ও প্রাজ্ঞজন বাস্তবতার নিরিখে তাদের গবেষণালব্ধের মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রর প্রভূত কল্যাণ সাধন করেন। ইহলৌকিক জীবনে ব্যক্তির উন্নতি, সামাজিক কল্যাণ ও রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি, এ সব কিছুর পেছনে চিন্তাশীলতার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস হলো যেকোনো বিষয়ে ধারণা পোষণ করা। কেউ সুধারণা করে আবার কেউ কুধারণা করে। ধারণার ওপর ভিত্তি করে মানুষ চিন্তা করে। স্বাভাবিক চিন্তা দুই ধরনের, এক সুচিন্তা অপর হলো কুচিন্তা। সুচিন্তা কল্যাণকর আর কুচিন্তা ক্ষতিকর। সুচিন্তা ইবাদতও বটে। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘সুধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-৪৯৯৩)।

চিন্তা ও চিন্তাশীলতা বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ : চিন্তা ও চিন্তাশীলতা বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে, আর বলে, ‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন’ (সূরা আলে ইমরান-১৯১)। তিনি আরো বলেন, ‘আর আপনার প্রতি আমরা কুরআন নাজিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে যা তাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা করে’ (সূরা আন নাহল-৪৪)। তিনি আরো বলেন, ‘তারা কি নিজেদের অন্তরে চিন্তা করে (ভেবে) দেখে না? আল্লাহ আসমানসমূহ, জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কিন্তু মানুষের মধ্যে অনেকেই তো তাদের রবের সাক্ষাতের ব্যাপারে কাফির’ (সূরা আর রুম-০৮)।

চিন্তাশীলতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আয়েশা রা: বললেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে বললেন, ‘হে আয়েশা, আমাকে আমার রবের ইবাদত করতে দাও’। আমি বললাম, হে রাসূল, আমি আপনার পাশে থাকতে ভালোবাসি এবং যা আপনাকে খুশি করে তা করতে ভালোবাসি। তারপর আয়েশা রা: বললেন, রাসূলুল্লাহ সা: অজুু করলেন এবং সালাত আদায়ে নিবিষ্ট হলেন ও কাঁদতে থাকলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কাঁদছেন অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? এ রাতে আমার ওপর একটি আয়াত নাজিল হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তা তিলাওয়াত করল এবং চিন্তা-গবেষণা করল না, তার ধ্বংস অনিবার্য।’ তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন (সহিহ ইবনে হিব্বান-৬২০)। রাসূলুল্লাহ সা: আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে চিন্তা করো, আর আল্লাহর ব্যাপারে চিন্তা করো, অর্থাৎ আল্লাহর বিধান মানার বিষয়ে ভাবো (সুনানে বায়হা)।

মনীষীদের বক্তব্য : প্রখ্যাত সাহাআবু দারদা রা: বলেন, এক ঘণ্টার চিন্তা সাররাতের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। ফুজাইল রহ: বলেন, ফিকর তথা চিন্তাশীলতা অনেকটা আয়নার মতো, চিন্তা তোমাকে কোনটি ভালো কোনটি মন্দ তা দেখাবে। ইবরা আন নাখ বলেন, ‘আল ফিকর মুখখুল আকল’ তথা চিন্তাশীলতা আকল তথা বিবেক বিবেচনার মূল। আবু সুলাইমান বলেন, তোমরা কান্নার মাধ্যমে চোখের পরিচর্যা করো আর চিন্তার মাধ্যমে আত্মার পরিচর্যা করো। বিশর আল হারহ : বলেন, মানুষ যদি আল্লাহর আজমত তথা বড়ত্ব সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতো তাহলে সে কখনো অবাধ্য হতো না।

সুচিন্তার সুফল : সুচিন্তা মানবজীবনে প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে। চিন্তশীলতার সুফল অত্যধিক। গুরুত্বপূর্ণ কয়েক সুফল হলো- ১. এ এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর সওয়াবের পক্ষ অনেক বড়। ২. চিন্তাশীলতার মাধ্যমে মানুষ মহান প্রভু সম্পর্কে নির্ভেজাল ও বিশুদ্ধ ধারণা পায়। ৩. মানুষ নিজের প্রকৃত শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে নিজের করণীয় সম্পর্কে সচেতন হয়। ৪. চিন্তাশীলতার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করে। ৫. চিন্তাশীলতা মানুষকে ইহলৌকিক জীবনে সমৃদ্ধি ও কল্যাণের পথে চলতে সাহায্য করে। ৬. সামষ্টিক চিন্তাশীলতা জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য মাইলফলক। ৭. চিন্তাশীলতা ব্যক্তিকে গবেষণার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ৮. সুচিন্তা ব্যক্তিকে উদার ও পরোপকারী হতে সাহায্য করে। ৯. সুচিন্তা মানুষকে যাবতীয় অপরাধ ও পাপাচার থেকে সুরক্ষা দেয়। ১০. সুচিন্তা ব্যক্তিকে পরমপ্রিয় ও জনপ্রিয় করে তোলে।

লেখক : মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাকা মাদরাসা, সোনাপুর, নোয়াখালী

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com