রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম বলছে, প্রধান পাইপলাইনে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ আবারো কমিয়ে দেয়া হবে।
গ্যাজপ্রম বলছে নর্ড স্ট্রিম ওয়ান নামে পরিচিত রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের প্রধান পাইপলাইনে এই রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে উৎপাদন ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে। যার ফলে বর্তমানের চেয়ে গ্যাস সরবরাহ অর্ধেক কমে যাবে।
জার্মানি বলছে প্রযুক্তিগত এরকম কিছুই আসলে নেই।
রাশিয়া সরবরাহ আরো কমিয়ে দিলে আসছে শীতের আগে ইউরোপের দেশগুলোর পর্যাপ্ত গ্যাস মজুদ করা কঠিন হয়ে পড়বে। গ্যাসের ব্যাবহার তখন অনেক বেশি থাকে।
নর্ড স্ট্রিম ওয়ান গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম গ্যাস উৎপাদন করছে। এ মাসেই রক্ষণাবেক্ষণ বিরতির কারণে দশ দিনের জন্য পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছিল উৎপাদন।
জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ
ইউরোপের দেশগুলোর ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ রাশিয়া থেকে হয়ে থাকে। জ্বালানিকে রাশিয়া অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে।
রাশিয়ার তরফ থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়া অথবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেবার হুমকি আসার পর ইউরোপিয়ান কমিশন তার সদস্য দেশগুলোকে গ্যাসের ব্যাবহার ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে জরুরি অবস্থা তৈরি হলে স্বেচ্ছায় ব্যাবহারের কৃচ্ছ্রতাসাধনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ একদম পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে তার ‘সমূহ সম্ভাবনা’ রয়েছে।
এই বিষয়ে একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জ্বালানি মন্ত্রীরা আজ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে মিলিত হবেন বলে কথা রয়েছে।
তবে বেশ কিছু সদস্য দেশ এই পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ নাও করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর গ্যাসের পাইকারি মূল্য মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। যার বড় ধরনের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
গ্যাজপ্রমের ঘোষণার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের বিরুদ্ধে গ্যাস নিয়ে রাশিয়া একটি প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে- বিষয়টি ঠিক এভাবেই আমাদের দেখা উচিৎ।
গ্যাজপ্রম বলছে সর্বশেষ যে দুটো টারবাইন কাজ করছে, বুধবার গ্রিনিচ সময় ৪টায় ‘প্রযুক্তিগত কারণে’ সেখান থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হবে।
জার্মান অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেনে, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে সরবরাহ কমিয়ে দেবার কোনো প্রযুক্তিগত কারণ নেই।
‘আমাদের পণ্য আমাদের নিয়ম’
ক্রেমলিন বলে আসছে যে রাশিয়া একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় রাশিয়ার উপরে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার সেটিই মূল কারণ।
গ্যাজপ্রম বলছে, কানাডাতে তাদের যেসব যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ চলছিল, নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো ফেরত আসতে দেরি হয়েছে।
যার কারণে তারা নর্ড স্ট্রিম ওয়ানের সরবরাহ ৪০ শতাংশে রাখতে বাধ্য হয়েছে।
কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী আলেক্সি মিলার বলেছেন, ‘আমাদের পণ্য, আমাদের নিয়ম। যেসব নিয়মকানুন আমরা তৈরি করিনি সেসব মেনে আমরা কাজ করি না।’
ইউরো অথবা ডলারের বদলে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানোর পর গ্যাজপ্রম বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।
সূত্র : বিবিসি