বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন যে অন্তবর্তী সরকার আছে, তারাও বলেছে যে কিছু কিছু কাজ আওয়ামী লীগ খুব করাপ করে গেছে, যেমন মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না, কেউ ভোট দিতে পারেনি। সর্বত্র দুর্নীতি, দলীয়করণ, মামলা-হামলা, জেল-জুলুম, সেই জিনিসগুলি ঠিক করতে সময় দিতে হবে। রাতারাতি সব কিছু ঠিক করা সম্ভব না। তাই সরকারকে আমরা সেই সময় টুকু দিতে চাই। তারা নিরপেক্ষ, আমাদের উচিৎ তাদের সহযোগিতা করা।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর ঈদগাহ ময়দানে হরিপুর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
হরিপুরবাসীর সাথে সম্পর্ক দির্ঘদিনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, একসময় এ এলাকাগুলিতে বিএনপির মানুষজন কম ছিলেন। বেশ কয়েকজন আছেন, তাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিএনপি শক্তিশালী হয়। অনেক অত্যাচার অনাচার সত্ত্বেও যারা বর্তমানে কমিটিতে আছেন, যারা আগেও ছিলেন তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। জালিম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৬ বছর আমাদের ওপরে অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। এই এলাকার অসংখ্য মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল। সেই অবস্থার পরিসমাপ্তি হয়েছে।
ফখরুল বলেন, যেই হাসিনা একজন প্রতাপশালী নেতা হয়ে গেছিলেন। আজ পরাজিত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। যখন তিনি চলে যান তার আগে কিন্তু লাখ লাখ মানুষ আসছিলেন গণভবনে। ওই সময় তিনি তাড়াহুড়ো করে হেলিকাপ্টারে করে পাশের দেশ ভারতে পালিয়ে যান। এ বিষয়ে একটি কথা রয়েছে, সীমা লঙ্ঘন করিও না, সীমা লঙ্ঘন করলে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন না। আল্লাহ যাকে খুশি এমপি বানান, মন্ত্রী বানান, সম্রাট বানান, রাষ্ট্রপতি বানান, আবার যেকোনো সময় তাকে ফকির বানিয়ে দেন। আজকে দেখেন শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে খুব করুণ অবস্থার মধ্যে পরেছেন। যারা কিনা দাপটের সাথে আপনাদের শাষন করতো, জুলুম-নির্যাতন করতো, জমি নিয়ে নিত, ব্যবসা নিয়ে নিত, কাউকে কিছু করতে দিত না। আজকে তারা জেলের ভেতরে চলে গেছেন। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ের ছেলেদের নামেও অনেক মামলা দিয়ে তাদের কারাগারে রাখা হয়েছে, তার পরও কেউ সত্যের পথ ছেড়ে যায়নি। ৫ তারিখে তারা পালিয়ে গেলেন। এখান থেকে আমরা কি শিক্ষা নিলাম; যে আল্লাহর নির্দেশের বাইরে কিছু হয় না। এখন আয়নাঘর বের হয়েছে। আগে সেই আয়নাঘরে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদের নিয়ে আটকিয়ে নির্যাতন করেছে। আর এছাড়াও অনেকের এখন অবধি খবরও পাওয়া যাচ্ছে না। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট, খুনী সরকারের পতন হয়েছে। অসংখ্য ছাত্রদের পঙ্গু হতে হয়েছে, অনেককে হত্যা করেছে। যাক আজ আমরা স্বাধীন। তবে এই সাধীনতা রক্ষা করতে হলে আওয়ামী লীগের মতো হলে হবে না। সকলকে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে কোনো ধরনের অন্যায় কাজের সাথে জড়াবেন না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আসুন আমরা সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলি। দেশ নেত্রী বগম খালেদা জিয়া দেশের জন্য অনেক করেছেন, তিনি অসুস্থ। আমরা তার সুস্থতার জন্য আমরা দোয়া করি, আল্লাহ তাকে আবার সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
জনসভায় হরিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য জেড মর্তুজা তুলা, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।