নায়করাজ, মিষ্টি মেয়ে, বিউটি কুইন, মিয়া ভাই, বাংলার নায়িকা বা কিং খান- এ সবই আমাদের চলচ্চিত্র তারকাদের খেতাব, যা ভালোবেসে দিয়েছেন দর্শকরা। নাম না বলে শুধু খেতাব বললেই সাধারণ মানুষ বুঝে যায় কার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের আজকের আয়োজন তারকাদের খেতাব নিয়ে। লিখেছেন- ফয়সাল আহমেদ
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার চরিত্রে অভিনয় করে বাংলা সিনেমার নবাব খ্যাতি পেয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। এখনও তার ভক্ত-অনুরাগীরা তাকে বাংলা সিনেমার মুকুটহীন নবাব বলে সম্মান করেন।
নায়করাজ উপাধি পেয়েছিলেন অভিনেতা রাজ্জাক। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চিত্রনাট্যকার আহমদ জামান চৌধুরী এই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন নায়ক রাজ্জাককে। তিনি বিভিন্ন লেখায় রাজ্জাককে নায়করাজ বলে লিখতেন। সেই থেকেই এই উপাধি তার নামের শেষে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অভিনয় আর ব্যক্তিত্বে রাজ্জাক সত্যিকারেরই নায়করাজ হয়ে উঠেছিলেন ঢাকাই সিনেমায়।
মহানায়ক খ্যাতি পেয়েছেন বুলবুল আহমেদ। চলচ্চিত্রাচার্য আলমগির কবির রচিত ও পরিচালিত ‘মহানায়ক’ ছবিটি ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায়। সেই ছবিতে নায়ক ছিলেন বুলবুল। তখন থেকেই তাকে মহানায়ক বলে সম্মানিত করা হয়।
আরেক নায়ক ছিলেন ফারুক। ক্যারিয়ারে অসংখ্য ছবিতে তিনি বাজিমাত করেছেন দুর্দান্ত অভিনয়ে। ‘সাহেব’সহ শহুরে ও নাগরিক জীবনের অনেক চলচ্চিত্রে তিনি দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুনশিয়ানা। তবে গ্রামীন ছবিগুলোতে নায়ক ফারুকের সাফল্য ছিল যে কোনো নায়কের জন্য ঈর্ষার। গ্রামের চরিত্রগুলোতে যেন ফারুক একটু বেশিই সাবলীল ছিলেন, যথেষ্ট ছিলেন। তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সবার প্রিয় ‘মিয়া ভাই’। সম্মানের বিশেষ একটি উপাধি ‘মিয়া’, গ্রামে-গঞ্জে বসবাস এই ‘মিয়া’দের। আলমগীর একমাত্র অভিনেতা যার নামের আগে খেতাব ছিল নায়ক। তাকে ডাকা হয় নায়ক আলমগীর। সোহেল রানাকে বলা হয় ড্যাশিং হিরো। তিনি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অ্যাকশন হিরো হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার ছোট ভাই রুবেলের বিশেষ গুণ ছিল মার্শাল আর্টে। প্রায় সব ছবিতেই দেখা যেত তার কুংফুর শৈল্পিক উপস্থাপনা। তাই রুবেল পেয়েছিলেন কুংফু স্টার উপাধি। জনপ্রিয়তার নিরিখে বাংলার নায়ক বলা হয় ইলিয়াস কাঞ্চনকে। মান্নার স্বীকৃতি ছিল ম্যানলি হিরো। চলচ্চিত্রের চিরসবুজ নায়ক বলা হয় প্রয়াত নায়ক জাফর ইকবালকে। সিনেমার মেগাস্টার প্রয়াত নায়ক জসীম। চলচ্চিত্রের অমর নায়ক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রোমান্সের রাজা সালমান শাহকে। বলিউডের মতো ঢাকাই ছবিতে খানদের এত ছড়াছড়ি না থাকলেও খানদের রাজা আছেন। তিনি শাকিব খান। ‘কিং খান’ নামের একটি ছবি করার পর থেকেই তাকে এই নামে ডাকা হয়ে থাকে।
বাংলা ছবিতে মুগ্ধ এক নাম কবরী সারোয়ার। রাজ্জাক-ফারুকদের সঙ্গে রোমান্টিক কবরী সব প্রজন্মের দর্শকের কাছেই স্বপ্নের নায়িকা। তার প্রেমময় সংলাপ প্রেমিকের বুকে মধুর বেদনা হয়ে বাজে বারবার। তার হাসি আজও নস্টালজিয়ায় নিয়ে যায় তার প্রজন্মকে। স্বভাবতই তাকে ‘মিষ্টি মেয়ে’ বলা হয়। ঢাকাই ছবিতে কবরীর উপাধি ‘মিষ্টি মেয়ে’। নায়িকা শাবানা শব্দের চেয়ে অভিনেত্রী শাবানাই যেন এই বাংলার দর্শককে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য দেয়, আনন্দ দেয়। বেশ কয়েকটি প্রজন্ম এ দেশে গড়ে ওঠে একজন রুচিশীল, মার্জিত অভিনেত্রী শাবানার অভিনয় দেখে দেখে। তাকে রোমান্টিক বা আবেদনময়ী নায়িকার চেয়ে একজন চমৎকার অভিনেত্রী হিসেবেই বেশি গ্রহণ করেছেন বাংলা ছবির দর্শক। অনেক বিশেষণেই শাবনা তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভূষিত হয়েছেন। তবে ‘বিউটি কুইন’ শাবানা উপমাটিই এই অভিনেত্রীর গুণ প্রচারের সেরা স্বীকৃতি হয়ে আছে। ববিতাকে বলা হয় চিরসবুজ নায়িকা। নায়িকা অঞ্জু ঘোষ বেদের মেয়ে জোছনা বলে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তবে তাকে ড্যান্স কুইনও বলা হয়। নতুন মুখের সন্ধান আয়োজন দিয়ে এসে চলচ্চিত্র মাতানো দিতিকে বলা হয় তিলোত্তমা নায়িকা। সর্বজননীন দর্শকের মন জয় করে নিতে পেরেছিলেন বলে শাবনূরকে বলা হয় বাংলার নায়িকা। মিষ্টি হাসির নায়িকা মৌসুমীর নামের আগে যোগ করা হয় প্রিয়দর্শিনী। নায়িকা অপু বিশ্বাসকে বলা হয় ঢালিউড কুইন।