সোমবার, ১২:৫০ অপরাহ্ন, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

তারেক রহমানের ফেরা প্রশ্নে রাজনীতিতে নানা আলোচনা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৪ বার পঠিত

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সর্বাধিক উচ্চারিত প্রশ্ন হচ্ছেÑ দেশে ফিরে আসতে তারেক রহমানের বাধা কোথায়? মায়ের শারীরিক এমন সংকটাপন্ন অবস্থাতেও কেন তিনি আসছেন না? হাসিনা সরকারের পতনের পর কেটে গেছে ১৫ মাস। এ সময়কালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর সবই আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হয়েছে। সরকারের তরফেও জানানো হয়েছে, দেশে ফিরতে রাষ্ট্রীয় কোনো বাধানিষেধ নেই তার; নিরাপত্তা কিংবা প্রশাসনিক কোনো প্রতিবন্ধকতাও নেই। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বুলেট প্রুফ গাড়ি পর্যন্ত কিনেছে বিএনপি। কিন্তু দলটির শীর্ষনেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থার মধ্যেও তার ছেলে তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না। বরং ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তার ‘একক ও অবারিত’ নয়। এ বক্তব্য দেশে-বিদেশে নতুন জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের স্ট্যাটাস থেকে স্পষ্ট, তার দেশে ফেরার বিষয়টি শুধুই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বা রাজনৈতিক সুবিধা-অসুবিধার নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে আরও অদৃশ্য ও জটিল শক্তি।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন- প্রয়োজন হলে একদিনেই ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, তারেক রহমান চাইলে যে কোনো সময় দেশে ফিরতে পারেন। এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরও প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে শুধু বলেছেনÑ সব ব্যাখ্যা তারেক রহমানের স্ট্যাটাসেই আছে। অর্থাৎ বিএনপিও এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইছে না।

এর মধ্যে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ তুলেছেন- দুই প্রধান দলের নেতৃত্ব পাল্টাতে ‘বিদেশ থেকে অগণতান্ত্রিক তৎপরতা’ চলছে। বিএনপি এ বিষয়ে নীরব। সূত্র বলছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে আপত্তি রয়েছে কিছু আন্তর্জাতিক শক্তির, যদিও কোন দেশের আপত্তি, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। ফলে রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, দেশের রাজনীতি কি সত্যিই স্বাধীন, নাকি পর্দার আড়ালে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির ছায়া আরও দীর্ঘ হয়েছে? গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিলÑ তারেক রহমানের দেশে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা? জবাবে তিনি অবশ্য বলেছেন, এ বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।

তারেক রহমানের দেশে না-ফেরা নিয়ে বহুদিন ধরেই বিস্তর আলোচনা চলছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে দেওয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি যখন লিখলেনÑ দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত ‘তার একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’ তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষত, খালেদা জিয়ার সংকটাপন্ন অবস্থার সময়েও তিনি দেশে না ফেরায় সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল আরও বেড়ে যায়।

বিএনপির পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে, আইনি ও নিরাপত্তাজনিত সব জটিলতা কেটে গেছে। আওয়ামী লীগ আমলের মামলা থেকে শুরু করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের সব মামলাই খারিজ হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য বুলেট প্রুফ গাড়ি কেনা ও অস্ত্রের লাইসেন্স আবেদনের খবর পর্যন্ত এসেছে সংবাদমাধ্যমে।

এখানেই শুরু রাজনৈতিক রহস্য। বিএনপির অনেক নেতা মুখ খুলতে রাজি নন। স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, দলের বিষয় আছে, আবার দলের বাইরেও বিষয় আছে। কারা সে বিষয়ে জড়িত, তারা সরাসরি বলেননি।

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ সরাসরি বলেছেন. দেশে ফিরতে তারেক রহমানের ‘অপ্রকাশ্য’ আন্তর্জাতিক জটিলতা রয়েছে। উইকিলিকস ফাঁস হওয়া নথির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তারেক রহমানকে নিয়ে আগে থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের

নীতির পরিবর্তন না হলে তিনি দেশে ফিরবেন কোন ভরসায়? এই বিশ্লেষকের মতে, ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত সরকারের সময় দেওয়া সম্ভাব্য ‘মুচলেকা’ এখনও তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির বড় অংশ নির্ভর করে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মনোভাবের ওপর।

সম্প্রতি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বৈঠক নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ ধরনের বৈঠক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক পক্ষের আগ্রহকে আরও স্পষ্ট করে। বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক। দলের ভেতরে অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনী মুহূর্তে তার উপস্থিতি ছাড়া বিএনপির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়া সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, একটা বড় ধরনের জটিলতা না থাকলে উনি দেশে আসতেন। তার মা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। সেই মাকে ছেড়ে এ সময় তিনি বিদেশে থাকতেন না। আমি মনে করি জটিলতা আছে, সেই জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন তিনি। আমার মনে হয়, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা যদি আরেকটু ভালো হয়, হয়তোবা লন্ডনে অথবা ইউরোপিয়ান কোনো দেশে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে উনি (তারেক) যোগাযোগ করতে পারবেন, সেবাটা করতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধকতাটা হচ্ছেÑ কোনো একটা শক্তি থাকতে পারে ভেতরের বা বাইরের। অথবা এমন একটা দেশের ভয়ও থাকতে পারে যে, কোনো সাবোটাজ করে ফেলে কিনা।

ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, যদি উনি (তারেক) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাহলে তফসিল ঘোষণার একদিন আগে উনাকে আসতে হবে। কি জন্য আসতে হবে? উনি ভোটার হননি। বাংলাদেশের যে ভোটার লিস্ট, তাতে তার নাম নেই।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলেন, উনাকে কে বা কারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এটা বাইরে থেকে আমাদের বলা মুশকিল। কারণ উনি নিজেও কিন্তু খোলসা করেননি। আমার ধারণা, বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়টাতে মনে করা হয় যে, তিনি একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন এবং তখন বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ ঘটেছে। সেগুলো কি কোনোভাবে কোনো ছায়া ফেলছে? এটা আমরা আন্দাজ করে বলতে পারি। এর বাইরে তো বলার কিছু দেখছি না। এটা বলা মুশকিল যে, এটা অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় না বাইরের কোনো বিষয়? কোনো ইঙ্গিতও তো তিনি দেননি। বাইরের দিক থেকে আন্দাজ করতে পারি যে, এটা এমন শক্তি, যা যথেষ্টই শক্তিশালী। মায়ের এমন অবস্থাতেও ওনার আসবার পথে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। নিশ্চয় বাধাটা খুব সহজ নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com