সোমবার, ০৩:৫১ অপরাহ্ন, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে দগ্ধ ২৬ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে মাইলস্টোন স্কুলের ভবনে বিধ্বস্ত বিমান গোপালগঞ্জে নিহত ৩ জনের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ জুলাই যোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে কোটা থাকছে না : মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা সব দেনা শোধ করেছে সরকার, সারের ঘাটতি হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জুলাই হত্যাকাণ্ডের গোপন কল রেকর্ড, ফরেনসিকে ৩ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোন সোহাগ হত্যা নিয়ে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য ডোপ টেস্টের কিট সংকট, ভোগান্তিতে সেবাপ্রার্থীরা নিবন্ধনের আবেদন করা রাজনৈতিক দল, গঠনতন্ত্র, কমিটি ও কার্যালয় কিছুই নেই তাদের নতুন মামলায় আনিসুল-সালমান-আতিকুলসহ গ্রেপ্তার ৮

দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের আভাস

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫
  • ১০ বার পঠিত

সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশ-কর্মসূচি এবং নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর নানা মত-পথ, আদর্শের দলগুলো এখন বিভক্ত দুই রাজনৈতিক বলয়ে আবর্তিত হচ্ছে। একদিকে বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক দল। অন্যদিকে ইসলামী দলগুলোর নেতৃত্বে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে আরেকটি বিকল্প বলয়। উভয় বলয়ের রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচন নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যও ভিন্নমুখী। এসব নিয়েই শুরু হয়েছে ‘নয়া মেরুকরণ’ প্রক্রিয়া।

সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পৃথক দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশও নতুন এই মেরুকরণের আভাস স্পষ্ট করে তুলেছে। ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে আমন্ত্রিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), বাংলাদেশ মুসলিম লীগসহ কয়েকটি দলের নেতৃবৃন্দ। একইভাবে জামায়াতের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল সমাবেশে অংশ নিয়েছিল এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামপন্থি এবং কিছু নতুন রাজনৈতিক দল। উভয় সমাবেশেই বিএনপি বা তার মিত্র দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে, যা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানামুখী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত জামায়াত ঢাকায় বড় সমাবেশ করতে পারেনি। এবার শুধু তারা সমাবেশই করেনি, বরং সেই সমাবেশকে ঘিরে বিপুল জনসমাগম, বিশাল প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। সমাবেশে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, এটি জামায়াতের তরফ থেকে একটি ‘স্বতন্ত্র রাজনৈতিক বলয়’ তৈরির পরোক্ষ চেষ্টা।

জামায়াতের মহাসমাবেশে সাত দফা দাবি নিয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যে ছিল মৌলিক সংস্কারের দাবি, সংবিধান পুনর্লিখনের প্রস্তাব, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান এবং ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন। এসব বক্তব্য ও দাবি অনেকটাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদের প্রতিনিধিদের বক্তব্যেও, যারা সমাবেশে আমন্ত্রিত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

এর আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশেও একই ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছিল। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়া এবং সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ- এসব দাবি সেখানে উঠে এসেছিল। সেখানে জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল উপস্থিত থাকলেও বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অর্থাৎ দুটি পৃথক সমাবেশেই একটি ‘বিএনপিবিহীন রাজনৈতিক বলয়’ হয়েছে। এ বলয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলনের পরিবর্তে ‘ব্যবস্থাগত সংস্কার’-এর ওপর গুরুত্বারোপ। জামায়াতসহ এ বলয়ের দলগুলো মনে করে- বর্তমান ব্যবস্থায় শুধু নির্বাচন নয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামোই ঢেলে সাজাতে হবে। এ ধারণা থেকে তারা চাইছে নতুন সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার, বিচার ব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং কেন্দ্রভিত্তিক রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পিআর পদ্ধতির প্রচলন।

অন্যদিকে বিএনপি ও তার মিত্রদের অবস্থান কিছুটা ভিন্ন। বিএনপি বর্তমানে গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিএমসহ বেশ কিছু বাম ও ইসলামি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক মঞ্চ ভাগ করে নিচ্ছে। বিএনপি এবং এর মিত্ররা প্রয়োজনীয় সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিলেও মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবিগুলোকেই সামনে রাখছে। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকের সমঝোতা অনুযায়ী দ্রুত জাতীয় নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ দুই বলয়ের মধ্যে বিভাজন এখন আর শুধু আদর্শিক নয়, কৌশলগতও। একদিকে রয়েছে নির্বাচনের আগে সংস্কারের দাবি তোলা জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন। অন্যদিকে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার বিএনপি।

এই বিভাজনের বিষয়টি গভীর নজরে রেখেছেন বিদেশি কূটনীতিকরাও। তারা এই মেরুকরণকে শুধু রাজনৈতিক ভারসাম্য নয় বরং নিরাপত্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার দৃষ্টিকোণ থেকেও পর্যবেক্ষণ করছেন। পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র বারবারই বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বললেও উগ্র ধর্মীয় শক্তির উত্থানকে তারা কোনোভাবেই সমর্থন করে না।

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে এনসিপি। তরুণ নেতৃত্ব, স্পষ্ট সংস্কারকেন্দ্রিক অবস্থান এবং সংঘবদ্ধ কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি দ্রুত পরিচিতি পেয়েছে। এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের মিলিত দাবিগুলো এখন বিএনপির কৌশলগত অবস্থানের বাইরে চলে গেছে। বিএনপি এবং এর মিত্র দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, পিআর পদ্ধতির দাবি প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তনের কৌশল। তারা বলছেন, এতে করে বড় দলগুলো তাদের অবস্থান হারাবে এবং দলগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে এনসিপি মনে করে- বিচার, মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন এই তিন বিষয়ের মধ্যে বিচার ও সংস্কার আগে না হলে নির্বাচন অর্থহীন হয়ে পড়বে। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, শুধু ক্ষমতার পালাবদলের জন্য ২৪ এর অভ্যুত্থান হয়নি। ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমরা অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম। এ দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে মৌলিক সংস্কার করতে হবে, পাশাপাশি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে।

এবি পার্টি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোকে জামায়াতের বলয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এক সময় জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, পিআর পদ্ধতির পক্ষে আমরা থাকলেও আমাদের হয়তো রাজনীতিতে ভিন্ন অবস্থানের কারণে ডাকা হয়নি।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জামায়াত এখন নির্বাচনী প্রস্তুতিতেই বেশি মনোযোগী। নতুন একটি বলয় তৈরির চেষ্টা চলছে। সেটি জোটে রূপান্তর হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ রাজনীতিতে সামনে এখনও অনেক উপাদান যুক্ত হবে।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতভিন্নতায় হতাশ নয় বিএনপি। বরং এটিকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সৌন্দর্য মনে করছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভিন্নমত থাকবে, বহুমাত্রিক পথ থাকবে। কেউ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করবে, কেউবা সমাজতন্ত্রে, আবার কেউ ওয়েলফেয়ার স্টেটে বিশ্বাস করবে। সবগুলোকে মিলিয়ে রেইনবো স্টেট নির্মাণে অনেক আগেই আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন। আজ সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, তার প্রত্যেকটি প্রস্তাব আমরা ২০২২ সালে দিয়েছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, জামায়াতের যেসব দাবি, সেগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতেই করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ না থাকলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, এটা জামায়াত সহ্য করতে পারছে না। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত, কেয়ামত পর্যন্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার কোনো সুযোগ নেই।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী আমাদের সময়কে বলেন, জামায়াত যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, সেই পরিকল্পনারই অংশ এই বড় সমাবেশ (১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে)। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। জামায়াত বৃহৎ বিরোধী দল হতে কাজ করছে। সুতরাং জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com