বীমা খাতের উদ্যোক্তাদের নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে সরকার। ১০ বছরেরও বেশি সময় গ্রস প্রিমিয়ামে যে নিবন্ধন ফি হাজারে এক টাকা ছিল, এবার তা পাঁচ গুণ বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিন ধাপে এ হার কার্যকর করার প্রস্তুতি চলছে। এ জন্য ‘বীমা ব্যবসা নিবন্ধন ফি বিধিমালা, ২০১২’ সংশোধন করে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী- ২০২৬ ও ২০২৭ সালে বীমা কোম্পানিগুলোর গ্রস প্রিমিয়ামের বিপরীতে নিবন্ধন নবায়ন ফি হবে প্রতি হাজারে ২.৫ টাকা। আর ২০২৮ ও ২০২৯ সালে হবে ৪ টাকা এবং ২০৩০ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে নিবন্ধন নবায়ন ফি দাঁড়াবে ৫ টাকা।
বীমা ব্যবসা নিবন্ধন নবায়ন ফি বিধিমালা, ২০১২-এর সংশোধনী প্রস্তাব গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পরামর্শক (মিডিয়া এবং যোগাযোগ) ও মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি।
এদিকে বীমা কোম্পানির নিবন্ধন নবায়ন ফি বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বীমা শিল্পের অংশীজনরা। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই বীমা কোম্পানিগুলো ব্যবস্থাপনা সংকটে ভুগছে। পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ না থাকায় গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ ব্যাহত হচ্ছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে নিবন্ধন নবায়ন ফি পাঁচ গুণ বাড়ানো হলে কোম্পানিগুলোর আর্থিক চাপ আরও বাড়বে।
শীর্ষস্থানীয় একটি বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে নিবন্ধন নবায়ন ফি বাড়ানো যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফির অর্থ ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে আইডিআরএর ব্যয়সীমা কমনোর যে উদ্যোগ সেটিও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এ ছাড়াও কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হয়রানি আরও বাড়বে।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ‘বীমা ব্যবসা নিবন্ধন ফি বিধিমালা, ২০১২’-এ নিবন্ধন নবায়ন ফি প্রতি হাজারে গৃহীত গ্রস প্রিমিয়ামের বিপরীতে ৩.৫০ টাকা নির্ধারণ করা ছিল। পরে ২০১৮ সালে এই নিবন্ধন নবায়ন ফি ভারতীয় বাজারের সঙ্গে তুলনা করে ১.০ নির্ধারণ করা হয়।
গত ১ জুলাই সংশোধিত খসড়া প্রকাশ করে মতামত নেওয়ার সময় সংস্থাটি জানায়, ২০২৩ সালের হিসাবে ভারতের মোট গ্রস প্রিমিয়াম ছিল প্রায় ৬ লাখ কোটি রুপি, যেখানে নবায়ন ফি কম হলেও বিশাল প্রিমিয়াম আয়ের কারণে রেগুলেটর আইআরডিএআই বছরে প্রায় ৬০০ কোটি রুপি রাজস্ব পায়, যা তাদের পরিচালন ব্যয় নির্বিঘ্ন রাখে। সংস্থাটির মতে, ভারতীয় বাজারের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আইডিআরএর প্রস্তাবিত আয় ছিল ৩৭.৫৯ কোটি টাকা এবং ব্যয় ৩৭.৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্তমান ১ টাকার ফি দিয়ে ন্যূনতম ব্যয়ই কোনোমতে নির্বাহ করা যাচ্ছে, সঞ্চয় বা উন্নয়নমূলক ব্যয়ের সুযোগ নেই।
আইডিআরএ বলছে, ভবিষ্যতে তাদের ব্যয় অন্তত চার গুণ বাড়বে। বাড়তি ব্যয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- বীমাকারীদের জন্য আইআইএমএস সেবা বিনামূল্যে প্রদান; জনবল বৃদ্ধি এবং পেনশন-গ্র্যাচুইটি প্রদান; নিজস্ব ভবন নির্মাণ ও শাখা অফিস স্থাপন; বীমা খাতে পেশাদারত্ব উন্নয়নে বিসিআইআই, বিআইআইএম, ‘একচ্যুয়ারিয়াল সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা।
এসব কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি বলে মনে করছে আইডিআরএ। সেই লক্ষ্যেই নিবন্ধন নবায়ন ফি ১ টাকা থেকে ৫ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং সংশোধনী প্রজ্ঞাপনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানায় বীমা খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।