শনিবার, ০৭:২৫ অপরাহ্ন, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন, এক বছর পর কী বদলেছে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে চলে যান। এই ঘটনা ছিল এক বিস্তৃত ছাত্র আন্দোলনের পরিণতি, যা দেশের ইতিহাসে নারীদের সর্বাধিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান গতকাল শুক্রবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই কথা তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়, লাঠি-পাথর হাতে নিয়ে নারীরা মিছিলে নেতৃত্ব দেন, দাঙ্গা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যান। তাদের উপস্থিতি হয়ে ওঠে এক বিপ্লবের প্রতীকÑ যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক গল্পকে নতুন করে লিখে দিয়েছে। নারীরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে শুধু অংশ নেয়নি, নেতৃত্বও দিয়েছে। কিন্তু সেই আন্দোলনের চেতনা ধরে রাখতে গেলে চাই বাস্তব কাঠামোগত পরিবর্তন। নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতিই পারে সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী করতে। তবে কতটা পরিবর্তন হয়েছে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের কথায় উঠে এসেছে তার চিত্র।

বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের পর নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তবে রাজনৈতিক এই রদবদলের পরও অনেক নারী মনে করেন, তাদের কথা এখনো যথাযথভাবে শোনা হচ্ছে না। ২০২৫ সালের মে মাসে হাজারো নারী ‘উইমেনস মার্চ ফর সলিডারিটি’তে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে সরকারের প্রতি নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

দ্য গার্ডিয়ানের কাছে বাংলাদেশের পাঁচজন নারী তাদের গত এক বছরের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন।

উমামা ফাতেমা, ছাত্র আন্দোলন কর্মী : উমামা ফাতেমা ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীকে হল থেকে বাইরে এনে বিক্ষোভে অংশ নিতে বলেন, তখন তিনি কল্পনাও করেননি কত বড় আকার ধারণ করবে আন্দোলনটি। তিনি বলেন, সবকিছু খুব দ্রুত ঘটেছিল, অল্প সময়ের মধ্যেই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফাতেমা জুলাইয়ের বিক্ষোভের একজন মুখ্য সংগঠক ছিলেন। তিনি মনে করেন নারীদের কারণেই একটি গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। নারীরা না থাকলে কিছুই সম্ভব হতো না। তবে এক বছর পর দেখা যাচ্ছে, ছাত্র আন্দোলন এখন বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা কমে গেছে। ফাতেমা বলেন, আমরা যে প্রশ্নগুলো তুলেছিলাম- শাসনব্যবস্থা, জবাবদিহিতা, নারীর অধিকার, তা এখনও সে রকমই রয়ে গেছে। মানুষ এগুলোর পরিবর্তে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ফাতেমা বলেন, পরিস্থিতি এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল যে, নারীদের অংশগ্রহণ কমতে শুরু করে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্র। নারীদের যদি কেবল প্রতীকীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে তারা প্রকৃত ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না। ফলে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির মতো বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্ব পায় না। বাংলাদেশের বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোয় এখনও নারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনমনে হতাশা তৈরি হয়েছে। মানুষ দ্রুত বিচার চেয়েছিল, কিন্তু প্রক্রিয়াটি খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। সংস্কার আর ন্যায়ের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এখন তা খালি বুলি মনে হয়।

মেহজাবীন রহমান, স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্প্রদায় সংগঠক : মেহজাবীন রহমান ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করছিলেন। যখন একদিন বাইরে গিয়ে দেখেন, তরুণী মেয়েরা রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করছে। তাদের দেখে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। এত দিন নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতাম, কিন্তু তখন বুঝলামÑ এ আন্দোলন আমাদের বাস্তবতার অংশ হয়ে গেছে। তিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা, নিরাপত্তা এবং অধিকার নিয়ে স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বিক্ষোভের সময় তিনি নিম্নবিত্ত নারীদের সংগঠিত করে নেতৃত্ব দেন। এ বিপ্লব কেবল রাজধানীর ছিল না, প্রান্তিক নারীরাও সাহস পেয়েছিল। যারা আগে কখনও কথা বলেনি, তারা এখন আওয়াজ তোলে। তবে তিনি সতর্ক করেন, এ পরিবর্তন যদি কেবল শহরে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা টিকবে না। সরকারকে গ্রামীণ নারীদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

শারমিন জাহান, সাংবাদিক : সাভারের এক তরুণী, যিনি নিজের হাতে পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তার গল্প আমার চোখে জল এনে দিয়েছিল। তখন বুঝি- এই বিপ্লব একেবারে নিচু স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে এখন আবার তিনি পুরনো রিপোর্টিংয়ে ফিরে গেছেন- ধর্ষণ, নির্যাতন, বিচারহীনতা আগের মতোই বিরাজ করছে। আমরা ভেবেছিলাম, সমাজ পাল্টাবে। কিন্তু এখনও খবর করতে হয় সেই একই ঘটনায়। তিনি বলেন, মিডিয়াকেও সাহসী হতে হবে। আমরা যদি ভয় পাই, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে এগোবে?

সাবিহা হক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী : সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও বিচারব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার হয়নি। শুধু নারী মন্ত্রণালয় দিয়ে হবে না। আদালত, পুলিশ, প্রশাসনÑ সব জায়গায় নারী সংবেদনশীলতা আনতে হবে।

নাসরিন আক্তার, পোশাকশ্রমিক : আমরা ভেবেছিলাম, এখন থেকে বেতন সময়মতো পাব, ছুটি হবে, যৌন হয়রানির বিচার হবে। কিন্তু এক বছর পরও কিছুই পাল্টায়নি। তবে একটা জিনিস পাল্টেছেÑ আমরা চুপ থাকি না। কেউ বাজে কথা বললে প্রতিবাদ করি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com