২০২৪ সালের ১৪ জুলাইয়ের স্মৃতি স্মরণে ফের প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজু ভাস্কর্য এলাকা।গতকাল সোমবার রাত ১২টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন।‘রাজাকার রাজাকার’স্লোগানে তারা প্রতিবাদ জানান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, সেদিন রাতে মেয়েদের হলগুলো খোলা রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্রীরা হলের গেট ভেঙে রাস্তায় নেমে আসেন। তারা থালা-বাসন বাজিয়ে প্রতিবাদের নতুন ধারা তৈরি করেন এবং সোচ্চার কণ্ঠে উচ্চারণ করেন- “তুমি কে, আমি কে-রাজাকার রাজাকার”, “কে বলেছে, কে বলেছে-স্বৈরাচার স্বৈরাচার।”
এ বছর সেই প্রতিবাদের বার্ষিকীতে মেয়েরা আবারও রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে ইতিহাসকে স্মরণ করলেন এবং নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করলেন। এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত হয় র্যাপারদের কনসার্ট।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার, কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপ দাদার, লাখো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারও বাপের না, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার, দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, স্লোগান দেন।
অনুভূতি জানিয়ে উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা আফরিন বলেন, ‘সেদিন ছাত্রলীগের ভয় ছিল। আজকে সেটা নাই। খুবই ভালো লাগছে। আমরা আজকে নিরাপদে একটা রাতে বের হতে পেরেছি।’
বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ছাত্রী নুরুন্নাহার বলেন, ‘তখন একটা ভয় ছিল। স্বৈরাচারী হাসিনার কখন কী করে। আন্দোলনে ভয় নিয়েই আমরা যুক্ত হয়েছিলাম। আসলে এত অন্যায় হচ্ছিল নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারিনি। আজকে সেই আবেগ থেকে মিছিলে নেমেছি। অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে।’
১৪ জুলাই ‘জুলাই উইমেন্স ডে’ উপলক্ষে নারীদের প্রতিবাদকে স্মরণ করে ছিল নানা ধরনের আয়োজন। এর আগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় জুলাইয়ের স্মরণে মনোমুগ্ধকর ড্রোন শো দেখানো হয়।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে দর্শনার্থী এবং গাড়ি প্রবেশ সীমিত রাখা হয়। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
এদিকে রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত র্যাপ কনসার্টে উপস্থিত হন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাকেও “তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার”, “কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার”, “এই কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কী বাপ দাদার”, “বাংলা কী বাপ দাদার, কথায় কথায় বাংলা ছাড়” ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
স্লোগানের প্রতিক্রিয়ায় তিনি সংক্ষেপে বলেন, “যারা তখন বাংলা ছাড়তে বলেছিল, তারা এখন কোথায়? তারা কী এখনো বাংলায় আছে?” এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।