বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামানের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে এবার একই স্থানে পাল্টা মানববন্ধন ও বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আড়াই শতাধীক নারী-পুরুষ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নার্স ও ছাত্র-জনতা।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চলে। এ সময় মহাসড়কের উভয় দিকের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দীর্ঘ লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শতশত যান-বাহন সেখানে আটকা পড়ে।
ফলে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে হাজার হাজার বাসযাত্রীসহ পন্য পরিবহনকারী গন চরম ভোগান্তির শিকার হন। এক পর্যায়ে বেলা পৌনে ১২টার দিকে যুবদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী ও ডাঃ মনিরের প্রশাসনিক পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্থ কিছু লোকজন মিলে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে অবোরোধটি পন্ড করে দেয়।
জানাগেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে টেষ্ট বানিজ্য, দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী এবং কিছু স্থানীয় লোকসহ শতাধীক ছাত্র-জনতা মিলে গৌরনদী উপজেলার সর্বস্তরের জনগনের ব্যানারে সোমবার সকালে উপজেলার আশোকাঠীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশ মুখে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে দাড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন ও মহাসড়ক দখল করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে ডাঃ মনিরুজ্জামানকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে অন্যত্র বদলির আশ্বাসে বিক্ষোভকারীদের অবরোধ প্রত্যাহার করান। এ ঘটনার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ডাঃ মনিরুজ্জামানকে বরিশাল ইনষ্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি লেকচারার (ফিজিও থেরাপি) পদে বদলি করা হয়।
ওই বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মহাসড়কের একই স্থানে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আড়াই শতাধীক নারী-পুরুষ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নার্স ও ছাত্র-জনতা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোমড়ে হাতুড়ি নিয়ে একটি মোটরসাইকেল যোগে সেখানে হাজির হয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হন জাবেদ সেলিম নামের এক প্রাইভেট এম্বুলেন্স চালক ও সোহাগ কাজী নামের এক প্যাথলজি মালিক। তারা বিক্ষোভকারীদেরকে গালি-গালাজ শুরু করলে তাদেরকে প্রতিরোধ করে এ সময় বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গৌরনদী বিআরডিবির চেয়ারম্যান ও বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ সোহানুর রহমান সোহাগ তার ১০/১২জন সহযোগী নিয়ে সেখানে পৌছে লাঠিশোটা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ফলে মহাসড়ক অবরোধকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে হামলাকারী জাবেদ সেলিম (৪৫)সহ উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৫ জনকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী বিআরডিবির চেয়ারম্যান ও বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, ছাত্র-জনতা হামলা করেছে। আমি তাদেরকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু ঠেকাতে পারিনি। ওসি সাহেবের সামনে ঘটনা ঘটেছে। তিনি সব দেখেছেন। আমি কারো ওপর হামলা করিনি। গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, আমার টীমে মাত্র ৫জন পুলিশ ছিল। তা দিয়েই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে অবরোধকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ফলে মহাসড়কে যান-বাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।