মঙ্গলবার, ০৮:০২ অপরাহ্ন, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

১৩ বছরেও খুনের জট খোলেনি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৬ বার পঠিত

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পূর্ণ হবে আজ মঙ্গলবার। দীর্ঘ এ সময়কালেও শেষ হয়নি দেশজুড়ে আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত। মামলায় এ পর্যন্ত ৬ বার বদল হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা; ১১৫ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়। গত বছর তদন্ত সংস্থাও বদল করা হয়। কিন্তু হত্যারহস্যের জট খোলেনি। এখনও গ্রিল কাটা চোরের বিষয়টি সামনে রেখেই এগোচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম। হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো মোটিভ কাজ করেছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখছে উচ্চ আদালত গঠিত টাস্কফোর্স এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্তৃপক্ষ।

সাগর-রুনি হত্যারহস্যের জট খুলতে গত বছর উচ্চ আদালত মামলার তদন্তভার র‌্যাব থেকে পিবিআইতে ন্যস্ত করে। এ ছাড়া একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্সও গঠন করে দেওয়া হয়।

টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও পিবিআইপ্রধান মোস্তফা কামাল আমাদের সময়কে বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করতে আমাদের নানামুখী তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেকের সঙ্গেই কথা বলছি। যখন যে তথ্য পাচ্ছি আমরা সাধ্যনুযায়ী তদন্ত করে দেখছি।

এদিকে গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের রোমান। তিনি রবিবার আমাদের সময়কে বলেন, দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন করে যে তদন্ত শুরু হয়েছে তাতে আমি আশাবাদী। তদন্তকারীরা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্তে তাদের আন্তরিকতা দেখতে পাচ্ছি।

সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করতে বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান (সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা), ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ; কথা বলেছেন অন্তত এক ডজন সাংবাদিকের সঙ্গে। কারাবন্দি র‌্যাবের সাবেক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমে আসা বেশির ভাগ প্রতিবেদন খতিয়ে দেখছে পিবিআই।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে উঠে আসে গ্রিল কাটা চোরই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা ৪ জন গ্রিল কাটা চোরকে গ্রেপ্তারও করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই ৪ চোরকে মামলার নথিতে যুক্ত করা হয়নি। পিবিআই তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর শুরুতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ছাড়া র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তের ধারাবাহিকতায় গ্রিল কাটা চোরই সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা তদন্তে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেসরকারি এনার্জি কোম্পানি সামিটের কোনো প্রতিবেদনের জেরে এ দম্পতি খুন হয়েছেন কিনা, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর বাইরে আর কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তে চুরি বা ডাকাতি, পারিবারিক-দাম্পত্য জীবনে কলহ, পেশাগত দ্বন্দ্ব, পূর্বশত্রুতা, দেনা-পাওনা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে রাখা, প্রেমঘটিত এবং সংবাদ প্রতিবেদন তৈরিতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিসহ সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখছে পিবিআই। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ যে ৪ জন গ্রিল কাটা চোরকে ২০১২ সালে গ্রেপ্তার করেছিল তাদেরও খুঁজছে। ওই ৪ জনের নাম পেলেও বিস্তারিত পরিচয় পায়নি। ফলে তাদের খুঁজতে নানামুখী চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছয় মাসের মধ্যে টাস্কফোর্সকে তদন্ত শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাব থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সকে তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঘটনার দুই মাস পরও মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাগর-রুনি। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন। ওই ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। থানা পুলিশের পর মামলার তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ডিবি ব্যর্থতা স্বীকার করলে উচ্চ আদালত র‌্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ গত বছরের ৪ নভেম্বর মামলা পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com