রংপুর মহানগরীর পার্কের মোড়কে শহীদ আবু সাঈদ চত্বর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটকে শহীদ আবু সাঈদ গেট নামকরণ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এখানেই মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) পুলিশের গুলিতে মারা যান কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের নেতা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।
বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা পৌনে ৩টায় গায়েবানা জানাজা শেষে এই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন তারা। বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা করার ঘোষণা থাকলেও দুপুর ২টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক মার্কের মোড়ে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন। জানাজায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
জানাজা শেষে মৃত আবু সাঈদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। জানাজার আগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আবু সাঈদ ছিলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম। শুরু থেকেই ছাত্রলীগ তাকে টার্গেট করেছিল। এর আগের দিন প্রথম যখন ছাত্রলীগ মিছিলে বাধা দিয়েছিল। সেদিনও সাঈদ ছিল রুখে দাঁড়ানোর মধ্য অন্যতম। সেদিনও তারা তাকে মারধোর করেছিল। সেকারণেই মঙ্গলবার পুলিশ তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারে। ওই সময় সেখানে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগের নেতারাও ছিলেন। সাঈদ শহীদ হয়েছে। কোটা সংস্কারের যে একদফা দাবি আমাদের তা চলবে। জানাজা ও দোয়া শেষে তারা পার্কের মোড়কে শহীদ আবু সাঈদ চত্বর এবং প্রধান ফটককে শহীদ আবু সাঈদ গেট নামকরণ করে কালোর মধ্যে সাদা লেখা দুটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তখন বেলা পৌনে ২টা। পুলিশ কোটা আন্দোলনকালীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছুড়ছে গুলি, টিয়ারশেল। আর ছাত্রলীগ হেলমেট পড়ে মুখে গামছা বেধে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের দিচ্ছে ধাওয়া। এমন মুহুর্তেই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদের নেতা আবু সাঈদ পুলিশ এবং ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্যে করে বলে আপনারা আমার ভাই-বোনের ওপর আর গুলি ছুড়বেন না। ওদের মারবেন না। এরপর দুই হাতে তুলে বলে আপনারা আমাকে গুলি করেন, তবুও ওদেরকে গুলি করবেন না। সাথে সাথে ১ নম্বর গেট থেকে পুলিশ তার বুক বরাবর ৩ রাউন্ড রাবারবুলেট ছোড়ে। তারপরও কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকে সাঈদ। পরে সামান্য দূরে গিয়ে একটু পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সাঈদ। শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আবু সাঈদ। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়ায়। বাবা মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের সক্রিয়কর্মী।