রবিবার, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ইন্টারপোলের রেড নোটিশ দিয়ে কি আরাভ খানকে দেশে ফেরত আনা যাবে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩
  • ৫৭ বার পঠিত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার এনায়েত বাজার পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। ইন্টারপোল সেই আবেদন গ্রহণ করেছে।

পুলিশ বলছে, এ আরাভ খানই ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। এজন্য তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে রবিউল ইসলামের একটি গয়নার শোরুম উদ্বোধনে গেলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

রবিউল ইসলাম কিভাবে দেশত্যাগ করলেন, এ ক্ষেত্রে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে আইজিপি জানিয়েছেন।

পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে রবিউল ইসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে, সেখানে তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে নয়টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। মামলার সংখ্যা আরো বেশি।

রেড নোটিশ জারি হলে দেশে ফেরানো যায়?
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান জানান, ইন্টারপোল যদি খবর পায় যে এই অভিযুক্ত ওই দেশের, ওই ঠিকানায় অবস্থান করছে, ইন্টারপোল সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

ইন্টারপোল সে দেশের পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে তাকে গ্রেফতার অনুরোধ জানায় এবং অভিযুক্তকে দেশের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেড নোটিশ জারি করা আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এক্ষেত্রে ইন্টারপোল যদি সহযোগিতা করে থাকে তাহলে রবিউল ইসলামকেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

কিন্তু সেক্ষেত্রে রবিউল ইসলাম কোথায় আছেন, পুলিশের সেটা বের করা জরুরি বলে তিনি জানান।

তিন বছর আগে লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশী হত্যাকাণ্ডের পর মানব-পাচারকারীদের ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছিল বাংলাদেশ।

তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল। এর মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আবার রেড নোটিশপ্রাপ্ত অনেকে আত্মগোপনে থাকায়, তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে দেশেও ফেরত আনা যায়নি।

অর্থ পাচার মামলার আসামি পি কে হালদারকে ধরতে পুলিশ রেড নোটিশ জারির আবেদন করলেও তার নাম এখনও ইন্টারপোলের বাংলাদেশী ‘ওয়ান্টেড পার্সন’ এর তালিকায় নেই।

ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে এই নোটিশ আদৌ জারি করবে কিনা সেটা অনিশ্চিত।

ইন্টারপোল কিভাবে কাজ করে
ইন্টারপোল বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন হলো এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যেটি সারা বিশ্বের পুলিশ এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞদের একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত ও সমন্বয় করে।

এর প্রধান কাজ অপরাধীদের ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশকে সহায়তা করা। যেন বিশ্বের সব পুলিশ অপরাধের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করতে পারে।

যদি একটি দেশের আসামি সেখানে অপরাধ করার পর অন্য দেশে চলে যায়, তখন সেই আসামিকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা লাগে।

সংস্থাটি অপরাধের তদন্ত, ফরেনসিক ডেটা বিশ্লেষণ সেইসাথে পলাতকদের খুঁজে করতে সহায়তা করে।

এক্ষেত্রে ওই দেশকে সন্দেহভাজন অপরাধীর যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করতে হয়।

তবে ইন্টারপোল কোনো আসামিকে ধরিয়ে দেয়ার আবেদন পেলেই তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে পারে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান।

তিনি জানান, যদি কোনো দেশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোল সদর দফতরে আবেদন জানায় তাকে ওই অভিযুক্তের অপরাধ বিষয়ক যাবতীয় কাগজপত্র, মামলা কপি ইত্যাদি সংগ্রহ করে ইন্টারপোলের কাছে দিতে হয়। সেই কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে তার বিরুদ্ধে কোনো নোটিশ জারি করা হবে কি হবে না। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া না হওয়া তাদের কাছে মুখ্য নয়।

ইন্টারপোল কারো বিরুদ্ধে একবার রেড নোটিশ জারি করলে সেটি সংস্থাটির সদস্যভুক্ত ১৯৪টি দেশের কাছে পাঠানো হয়।

মূলত ইন্টারপোলের এমন একটি ডাটাবেস রয়েছে যেখানে অপরাধীদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য যেমন- অপরাধীর ছবি বা স্কেচ, ক্রিমিনাল প্রোফাইল, ক্রিমিনাল রেকর্ড, চুরির রেকর্ড, চুরি যাওয়া পাসপোর্ট, যানবাহন এবং জালিয়াতির তথ্য ইত্যাদি পাওয়া যায়।

এসব তথ্য পুলিশ বিশ্বব্যাপী অ্যাক্সেস করতে পারে। এতে পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা অপরাধীদের খুঁজে বের করা সেইসাথে অপরাধ প্রতিরোধ ও তদন্ত করা সহজ হয়।

দুর্নীতি, যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, মানব-পাচার, অস্ত্রপচার, মাদক পাচার, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, শিশু সহিংসতাসহ ১৭ ক্যাটাগরির অপরাধ তদন্তে ইন্টারপোল তার সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা দিয়ে থাকে।

রেড নোটিশ
ইন্টারপোলের নোটিশ কমলা, নীল, হলুদ, লাল, সবুজ, কালোসহ সাত ধরণের হয়ে থাকে। এর মধ্যে রেড নোটিশ জারি করা হয় মূলত গুরুতর ও বিপজ্জনক অপরাধীদের ক্ষেত্রে।

ইন্টারপোল এই নোটিশকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখে। কারণ ওই ব্যক্তিকে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচনা করা হয়।

মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘ওই অপরাধীর সম্পর্কে মোটামুটি যা তথ্য আছে আমাদের তা দেয়া লাগে। ইন্টারপোল যদি তথ্য প্রমাণ বিচার বিশ্লেষণ করে সন্তুষ্ট হয় তাহলে রেড নোটিশ জারি করে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।’

একবার কারো বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি হলে ইন্টারপোল তার সব সদস্য দেশকে ওই রেড নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তির দিকে নজর রাখতে বলে। এবং তার প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে বলে।

তবে রেড নোটিশ কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা নয় এবং ইন্টারপোল কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয় যারা গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারে।

এ কারণে ইন্টারপোল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে আরেক দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বাধ্য করতে পারবে না।

এখন কোনো দেশ যদি তাদের নিজস্ব বিবেচনায় বা মানবাধিকার প্রশ্নে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় সেক্ষেত্রে ইন্টারপোল বা তাদের জারিকৃত রেড নোটিশের মাধ্যমে কিছু করা সম্ভব না।

যদি গ্রেফতার করতেই হয়, তাহলে অভিযুক্ত যে দেশে আছেন সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। এক্ষেত্রে তারা নিজ দেশের বিচারিক আইন মেনে চলবে। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়া নির্ভর করছে তাদের ওপর।

তবে কারো বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থাকলে তাকে যে দেশে খুঁজে পাওয়া যায় সেই দেশ তার সম্পদ জব্দ, চাকরিচ্যুত এবং তার ভিসা প্রত্যাহার করে দিতে পারে।

রেড নোটিশ থাকলে একটি দেশ আরকটি দেশে থাকা তাদের অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে শুধুমাত্র সাহায্য চাইতে পারে।

এই নোটিশ ছাড়া এক দেশের অপরাধীকে অন্য দেশে খুঁজে বের করাও দুষ্কর।

সেক্ষেত্রে রেড নোটিশ হলো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা, নজরদারি করা ও গ্রেফতার করার অনুরোধ। ইন্টারপোল শুধুমাত্র অপরাধ দমনে এই তথ্য ভাগ করে থাকে।

রেড নোটিশভুক্ত বাংলাদেশী
যেখানে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সেই দেশকেই রেড নোটিশের আবেদন জানাতে হবে। অভিযুক্ত যে দেশের নাগরিকই হোক না কেন।

তবে একবার আবেদন পাওয়ার পর রেড নোটিশ প্রকাশ করতে ইন্টারপোল কিছুটা সময় নেয়।

বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত ৬২ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি আছে বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে।

তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের অপরাধের ধরণ, ঠিকানা, বয়স ও ছবি দেয়া আছে।

সেখানে রবিউল ইসলাম বা আরাভ খান নামে কাউকে এখনো তালিকাভুক্ত হতে দেখা যায়নি।

ইন্টারপোলে বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত ৬২ জনের মধ্যে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধ মামলা, এমনকি ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের নামও আছে।

এছাড়া মানব পাচারকারী, হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিসহ বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী যারা পলাতক তাদের নামেও রেড নোটিশ জারি হয়েছে।

তবে ইন্টারপোলের নিয়ম অনুযায়ী, কারো রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় বা বর্ণ পরিচয়ের ভিত্তিতে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করতে পারে না।

এজন্য বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে একবার রেড নোটিশ জারি করা হলেও পরে তুলে নেয়া হয়।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। সেখানে তার রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।

পরে তারেক রহমান রিভিউ আবেদন করেন এবং নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দেন। এরপর ইন্টারপোল তার নোটিশটি সরিয়ে নেয়।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com