হজযাত্রী নিবন্ধনে গতি নেই। গত আট দিনে মাত্র সোয়া তিন হাজার জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। হজ প্যাকেজের মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় হজযাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য হজযাত্রীদের বিমানভাড়া কমানোসহ প্যাকেজমূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে ট্র্যাভেল এজেন্সিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব)। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছে তারা।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে পবিত্র হজ পালনে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। এ জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য সময় দিয়েছে। কিন্তু আট দিন পর গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন মোট তিন হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৪৪৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় করেছেন মাত্র ৯০৪ জন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কেন এত কম নিবন্ধন হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, প্যাকেজমূল্য বেশি হওয়া একটি কারণ। এ ছাড়া এজেন্সিগুলোর সব গুছিয়ে আনতে একটু সময় লাগে। শেষ দিকে নিবন্ধন বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
একজন বেসরকারি এজেন্সি মালিক বলেন, আমার এজেন্সির মাধ্যমে ২৫৫ জন প্রাক নিবন্ধিত রয়েছেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র একজন নিবন্ধনের জন্য দুই লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। হজযাত্রীরা টাকা বেশি হওয়ার কারণে যেতে চাচ্ছেন না। তারা এখন ওমরায় যেতে চাচ্ছেন। এবার ৫৫ জন হাজীও পাবো কিনা সন্দেহ।
বিমানভাড়া কমানোর দাবি আটাবের : হজযাত্রীদের বিমানভাড়া এবার অনেক বেশি ধরা হয়েছে বলে মনে করেন ট্র্যাভেল এজেন্সিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব)। এজন্য বিমানভাড়া কমানোসহ প্যাকেজমূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে আটাব। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছে তারা। চিঠিটি মঙ্গলবারই গ্রহণ করেছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ডাক গ্রহণ ও বিতরণ শাখা।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ব্যয় হবে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। পাশাপাশি পশু কোরবানির জন্য খরচ হবে ২৮ হাজার ৩৯০ টাকা। এর সাথে যুক্ত হবে পশু কোরবানির খরচ। গত বছর কোরবানির খরচ ছিল ১৯ হাজার ৬৮৩ টাকা। এ বছর বেড়েছে ৮ হাজার ৭০৭ টাকা। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৫৭২ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সর্বনি¤œ প্যাকেজমূল্য ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে হাব। এর সাথে কোরবানির খরচ যুক্ত হবে। এ বছর হজযাত্রী বিমানভাড়া ধরা হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। যা গত বছর থেকে ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা বেশি।
আটাব সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ স¦াক্ষরিত আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুসারে ২০১৫ সালে হজের সর্বনি¤œ খরচ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা। ২০১৬ সালে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা, ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। করোনা মারামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা এবং ২০২৩ সালে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসেবে বিবেচনায় নিলে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে হজের ব্যয় বেড়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৫ টাকা। এ বছর সৌদি সরকার হজের আনুষঙ্গিক ব্যয় কমিয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে হজযাত্রীদের নির্ধারিত বিমানভাড়া ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৩ সালে নির্ধারিত বিমানভাড়া আগের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বিমানভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে হজের প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সৌদি রিয়ালের মূল্য হিসাব করে সৌদি আরবের খরচ নির্ধারণ করা হলেও হজের সময় রিয়ালের মূল্য টাকার বিনিময় মূল্যের হার বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সারা বিশ্বে আর্থিক মন্দার কারণে যে ডলার সঙ্কট বিরাজ করছে, তার প্রভাবে হজযাত্রীদের আর্থিক চাপ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যতে এর ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকে হাজীরা হজ করতে যাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলবেন। বিমানভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারিত করা হলে হজযাত্রীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ অনেকটাই হ্রাস পাবে।
এ অবস্থায়, ২০২৩ সালে হজের প্যাকেজে উল্লিখিত বিমানভাড়া কমানোসহ প্যাকেজ মূল্য পুনর্বিবেচনা করে হাজীদের অর্থ-কষ্ট লাঘব করার জন্য বিশেষভাবে আবেদন জানিয়েছে আটাব।
এ বিষয়ে আটাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফ নয়া দিগন্তকে বলেন, এ বছর হজে খরচ অনেক বেশি ধরা হয়েছে। আগে যেখানে প্রিমিয়াম প্যাকেজের যাত্রীরা ৬-৭ লাখ টাকায় যেতেন, এবার সেখানে সাধারণ প্যাকেজেই খরচ পড়বে সাত লাখ টাকা। বিশেষ করে বিমানভাড়া অত্যধিক বেশি ধরা হয়েছে। এজন্য হজযাত্রীরা অনেকেই মত পরিবর্তন করেছেন। তারা হজে যেতে পারবেন না বুঝতে পেরে এখন ওমরায় যাচ্ছেন। এ জন্য ওমরাহ যাত্রী এখন অনেক বেড়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, হজে বিমানভাড়া সর্বোচ্চ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা হতে পারতো। কিন্তু প্রায় ৩৮ হাজার টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। হজে খরচ এত বেশি ধরায় এবার ৩০ হাজারের বেশি হজযাত্রী পাওয়া যাবে না বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে আটাব মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি হজের খরচ কিছুটা কমিয়ে দেন তাহলে হজযাত্রীরা অনেক উপকৃত হবেন এবং তার জন্য দোয়া করবেন।