রবিবার, ১১:২৫ অপরাহ্ন, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

গণভবন থেকে ফিরেই মাঠ কাঁপাচ্ছেন আসাদ

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ৫৫ বার পঠিত

১৯৮১ সাল থেকে যতবারই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রাজশাহীতে এসেছেন, আসাদুজ্জামান আসাদই ছিলেন পাশে পাশে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়েও দলকে আগলে রেখেছিলেন তিনি। দলের নীতি আদর্শের প্রশ্নে আপস করেননি কখনো। অটল ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। রাজনীতিতে জেলা ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ হয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদেই ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আসাদই এখন পদহীন। নিজ দলের এমপিদের দাপটে কোণঠাসা।

তবে পদ হারিয়েও দূরে সরে যাননি। বরং ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। গণভবনে ডাক পেয়ে দেখাও করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এর পর গণভবন থেকে ফিরেই মাঠ কাঁপাচ্ছেন আসাদ। হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছেন তিনি। ফলে এখন রাজশাহী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুনমাত্রা যোগ করেছেন তাঁর সরব উপস্থিতি। তবে আসাদের ঘুরে দাঁড়ানোকে ভালো চোখে দেখছেন না দলীয় সংসদ সদস্যসহ শীর্ষ নেতারা।

জানা গেছে, রাজনীতির শুরুর দিকে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, পরে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি থেকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হন। তবে রাজনৈতিক নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে দলীয় পাঁচ এমপিকেই সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আসাদকে পাত্তা দেননি এমপিরা। ফলে নানা ইস্যুতে আসাদের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব বাড়তে থাকে।

একপর্যায়ে এমপিদের সঙ্গে দ্ব›দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। তবে ‘এমপি লীগ’-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারেননি তিনি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দলীয় পদ হারান আসাদ। এতে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন। কিন্তু সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারার নেতৃত্বাধীন নতুন কমিটির নেতাকর্মীদের মাঝে নানা বিতর্কের জন্ম দেন। ফলে ওঠে দাঁড়াতেই পারেনি জেলা আওয়ামী লীগ।

এদিকে দলের নেতৃত্বে না থেকেও জাতীয় ও দলীয় দিবস উদযাপনসহ নানা কর্মসূচিতে সরব ছিলেন আসাদ। জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় কপাল খুলে তার। বিভিন্ন সময়ে আসাদের ডাকে নানা কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হন। ফলে পদহীন আসাদ নেতাকর্মীদের কাছে অঘোষিত নেতা হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে গণভবন থেকে ডাক পেয়ে গত ১৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন আসাদ। গণভবন থেকে ফিরেই উজ্জীবিত হয়ে রাজনীতির মাঠে আরও সোচ্চা হয়ে ওঠেন। গত ১৩ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের মাস উপলক্ষে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে বিশাল শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেন তিনি। এর পর থেকে নানা ইস্যুতে বড় বড় জমায়েত করছেন। নতুন করে আসাদের উত্থানে সাড়া পড়ে তৃণমূলে। রাজশাহীর রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় তিনি।

আসাদের সমর্থকরা বলছেন, সবশেষ রাজশাহীতে গত রবিবারের প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় কপাল খুলেছে তারই। জনসভায় যোগদানের জন্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে আমন্ত্রণপত্র তো দূরের কথা, জনসভা মাঠে প্রবেশের পাশও দেননি। আমন্ত্রণ না পেয়ে তিনি জনসভাস্থলের অদূরে বসে বক্তব্য শুনছিলেন। তবে জনসভা মঞ্চে ওঠার পর পরই নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার কাছে জানতে চান আসাদ কোথায়? মঞ্চের আশপাশেও নেই। পরে তিনি আসাদকে মঞ্চে ডেকে পাঠান। বক্তব্য শেষে আসাদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আসাদকে জনসভায় আসার পাস না দেওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে দারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, আসাদ সবসময়ই নৌকার বিরোধিতা করেন। তাই তাকে জনসভার পাস দেওয়া হয়নি।

তবে জনসভা মঞ্চের এ ঘটনায় তুমুল আলোড়ন তৈরি করেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। তারা বলছেন, আসছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আসাদ মেয়রপ্রার্থী অথবা জাতীয় নির্বাচনে শহরের আশপাশের কোনো আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে রাজশাহীর যে কোনো একটি আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করানো হতে পারে। আর আবারও লিটন মেয়র নির্বাচন করলে আসাদ রাজশাহী-১ অথবা রাজশাহী-৩ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেতে পারেন। এতে কপাল পুড়তে পারে ওই দুই আসনের এমপিদের। যদিও কোনো সিদ্ধান্তই এখনো হয়নি। তবে আসাদের ‘রাজসিক’ প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিতকে ভালো চোখে দেখছেন না দলের শীর্ষ নেতারা।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘আসাদ যে সবসময় নৌকার বিরোধিতা করেন, এটি সবার জানা। প্রধানমন্ত্রী আমার নিকট জানতে চেয়েছিলেন, আসাদকে কেন মঞ্চের বিশেষ পাস দেওয়া হয়নি। আমি আপাকে বললাম ‘আপা সে তো পাস পাওয়ার কথা। সবসময় নৌকার বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোট করে সে জন্য সে পাস পায়নি’। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সামনে আসাদ আমাকে ধমক দিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেছে। পরে এসএসএফ সদস্যরা তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিয়েছে’।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘আসাদ আওয়ামী লীগ করেও সব নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হলেও কোনো মিটিংয়েই থাকেন না। আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করেন। তবে তিনি যদি কোনো নৌকার মনোনয়ন পেয়েই যান, তা হলে আমরাও তার পক্ষেই কাজ করব।

তবে আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমি কখনো নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিইনি। বরং যারা নৌকাকে ভাঙিয়ে বিক্রি করে লুটপাট করেছে, দুর্নীতি করে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছে, তাদের বিরোধিতা করি। এবার নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘সাংগঠনিক কোনো দ্বদ্ণে কথা আসাদ আমাকে কখনো জানাননি। দলে আসাদেরও অবদান আছে। এমপিরা তাকে যদি মাইনাস করার চেষ্টা করেন, তা হলে এটি হবে না। আবার আসাদ যদি মনে করেন, তাকে ছাড়া আওয়ামী লীগ চলবে না, সেটিও ঠিক নয়। কাজেই সবাই মিলেই দল করা উচিত। প্রয়োজনে এমপিদেও সঙ্গে তাকে নিয়ে বসতে পারি’।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com