তিন সপ্তাহের মাথায় আবারো নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ের পাশাপাশি পাইকারিতেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। চলতি সপ্তাহেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ দিকে পাইকাররা কারখানায় তরল প্রাকৃতিক গ্যাস পাচ্ছে না। কারখানার সামনে ৮ দিন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ দিন অপেক্ষা করে এক ট্রাক এলপি গ্যাস সংগ্রহ করতে পারছে বিক্রেতারা। তাও প্রতি ১২ লিটারে ২০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। একদিকে ট্রাকের বাড়তি ভাড়া সেই সাথে বাড়তি দামে কেনায় গ্রাহক পর্যায়েও ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, তারা বাড়তি দামেও এলপি গ্যাস পাচ্ছেন না। এ কারণে গ্রাহকরাও প্রয়োজনীয় গ্যাস কিনতে পারছেন না।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে গ্যাসের দাম পৌনে দুইশত ভাগের ওপরে বাড়ানো হয়েছে। এতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে গেছে। এ কারণেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে প্রতি মাসেই দাম বাড়ানো বা কমানো হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়লে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে, আর গ্যাসের দাম কমে গেলে বিদ্যুতের দামও কমানো হবে।
বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেলে জিনিসপত্রের দাম আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। চলতি মাসে শিল্পকারখানা ও বিদ্যুতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রায় ২০০ শতাংশ বেড়ে যায়। এখন আবার নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় আরো বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে গ্রাহকের ওপর।
সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় সরকার। নতুন দর চলতি জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হয়। সে হিসাবে ৩ সপ্তাহের কম সময়ে আবারো দাম বাড়াতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ দিকে এলপি গ্যাসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে একজন খুচরা বিক্রেতা জানান, কোম্পানিগুলো ডলার সঙ্কটের কারণে এলপি গ্যাস আমদানি করতে পারছে না। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী তারা গ্যাস খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারছে না। তিনি জানান, গত ৮ দিন কারখানার সামনে অপেক্ষার পর এক ট্রাক এলপি গ্যাসের বোতল সংগ্রহ করতে পারছেন। ৮ দিনে ট্রাক বসিয়ে রাখা ও ট্রাকের ড্রাইভার, হেলপারের খাওয়া বেতন বাবদ প্রতি ট্রাকে ১২ হাজার টাকার ওপরে ডেমারেজ গুনতে হয়েছে। আবার যে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তা ১২ কেজি বোতলের দাম ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এক দিকে বেশি দামে এলপিজি কেনা ও অপর দিকে ট্রাকের ডেমারেজ দেয়ায় প্রকৃত ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু তারা পড়েছেন বিপাকে।
গ্রাহককে কিভাবে সামলাবেন। ১৩০০ টাকার গ্যাস ১৬০০ ও ১৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও আবার চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, গতকাল কোম্পানির কাছে গ্যাসের চাহিদা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কারখানা থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে এই মুহূর্তে গ্যাস পাওয়া যাবে না। এ কারণে গ্রাহককে কিভাবে সামলাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। সোমবার ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক খুচরা দোকানে এলপিজির মজুদ নেই। যাদের আছে তারাও ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের দাম চাচ্ছেন ১৬০০ টাকা। অথচ জানুয়ারির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী, ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১২৩২ টাকা।